ছবি: সংগৃহীত।
মৃত্যুর পর চেতনা কি বিলীন হয়ে যায়, নাকি অন্য এক জগতে প্রবেশ করে মানুষ? যুগ যুগ ধরে এই প্রশ্ন ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের নানা ব্যাখ্যা। সম্প্রতি মার্কিন এক নারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।
দ্য মিরর পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী ব্রিয়ানা লাফারটি নামের ওই নারী আট মিনিট ধরে মৃত অবস্থায় ছিলেন। বিরল এবং প্রাণঘাতী মায়ালোনাস ডিস্টোনিয়া রোগে আক্রান্ত এই নারীর শরীর একসময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই অচেতন অবস্থাতেই তিনি অনুভব করেন জীবনের এক অন্য রূপ।
ব্রিয়ানা জানান, “আমি হঠাৎ বুঝতে পারি আমার দেহ মাটিতে পড়ে আছে। কিন্তু আমি যেন উপরে ভেসে আছি। তখন আর আমি মানুষ ছিলাম না, ছিলাম কেবল এক চেতনা।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যথা ছিল না। বরং এক গভীর শান্তি, স্বচ্ছতা আর ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীর ঊর্ধ্বে কোনো সত্তা আছেন যিনি নিঃশর্তভাবে আমাদের ভালোবাসেন ও রক্ষা করেন।”
ব্রিয়ানা অনুভব করেন, সেখানে সময় যেন একসাথে সবকিছু ঘটাচ্ছিল—কিন্তু তাও ছিল এক নিখুঁত ছন্দে বাঁধা। সেই অভিজ্ঞতায় তিনি দেখতে পান মহাবিশ্ব আসলে সংখ্যা ও শৃঙ্খলার এক মহাজগৎ, যেখানে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর।
তিনি বলেন, “আমি কিছু প্রাণীর সঙ্গে দেখা পাই, যারা মানব নয়, কিন্তু তাদের চেনা চেনা মনে হচ্ছিল।”
এই অভিজ্ঞতা ব্রিয়ানার জীবনদর্শনই বদলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “মৃত্যু মানে শেষ নয়। বরং এক রূপান্তর। চেতনা হারায় না, বরং অন্য এক রূপে প্রবেশ করে।”
বর্তমানে তাকে আবার হাঁটা ও কথা বলা নতুন করে শিখতে হচ্ছে। পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষতির কারণে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে আরও কঠিন চিকিৎসাজগতের পথ।
ব্রিয়ানার গল্প কোনো ধর্মীয় উপদেশ নয়, বরং এক ব্যক্তিগত ও গভীর মানবিক উপলব্ধি। তবে এটিই প্রথম নয়—বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে, মৃত্যুর ঠিক আগে ও পরে মানুষের মস্তিষ্কে নানা ধরনের জৈব-রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়, যার ফলে অনেকেই এই ধরনের 'আউট অব বডি এক্সপেরিয়েন্স' অনুভব করেন। তবে এসব অভিজ্ঞতা কতটা বাস্তব, তা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান।
নুসরাত
