সুরম্য ভবন, প্রশস্ত ফুটপাত, মেট্রো স্টেশনের কারণে রাজধানীর আগারগাঁও দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেও ফুটপাতগুলো দখলে নিয়েছে হকাররা। বিচিত্র দোকানদারি জনদুর্ভে
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকাটি আগের মতো নেই। বদলে গেছে। এত বদলে গেছে যে, হঠাৎ ঘুরে দেখে কেউ চিনতেই পারবেন না। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দপ্তর অধিদপ্তরের নতুন নতুন অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এখানে। নবনির্মিত বহুতল সুরম্য ভবন। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী। উন্নত দেশের নামকরা শহরগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়। এইসব ভবনের সঙ্গে মিল রেখে বিশেষ প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশের ফুটপাতগুলোও অনেক বেশি প্রশস্ত। সব মিলিয়ে চমৎকার চেহারা পেয়েছে এলাকাটি। কিন্তু ভালো কিছুই আমাদের এখানে বেশি দিন ভালো থাকে না। সৌন্দর্য উপভোগ করার চেয়ে বিনষ্ট করার প্রবণতা দেখা যায় সব সময়। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মাঝে ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। যে যার পছন্দমতো জায়গা দখলে নিয়ে দোকানদারি শুরু করে দিয়েছেন। পাসপোর্ট অফিসের পাশের ফুটপাতটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এখানে প্রতিদিন অবৈধভাবে টেবিল চেয়ার পেতে বসছে কিছু লোক। অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্টের নানা কাজ করে দিচ্ছে। আর দালালির বদনাম তো আছেই। কিন্তু কেউ তাদের সরিয়ে ফুটপাত ফাঁকা করতে আসছেন না। কারণ ‘জায়গা মতো’ চাঁদা দিয়েই নাকি ব্যবসা করছে তারা! এ কারণে সরানোর প্রশ্ন অবান্তর। একইভাবে আগারগাঁও মেট্রোস্টেশনে ওঠা নামার পথগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে দোকানিরা। ফুটপাতে এবং মূল রাস্তায় চানাচুর, ফুচকা, আইসক্রিম, ডাব, খাবার পানি ইত্যাদি বিক্রি করা হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে দোকানের সংখ্যা। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি এলাকাটি সবার চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকে আগারগাঁওকে আর আলাদা করা যাবে না। হকার সরানোও কঠিন হয়ে যাবে। তাই অবস্থান শক্ত করার আগেই আগারগাঁও অফিস পাড়ার ফুটপাত এবং মেট্রোস্টেশন এলাকা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা জরুরি। জরুরি এই কাজটি জরুরি ভিত্তিতে করার উদ্যোগ কেউ কি নেবেন?
সুজেয় শ্যাম স্মরণ শেষতক হচ্ছে ॥ সুজেয় শ্যাম যে সে ব্যক্তিটি নন। বাংলা সংগীতে উল্লেখ করার মতো বহু অবদান তিনি রেখে গেছেন। আর ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। তিনি একাই কালজয়ী ৯টি গানের সুর করেছিলেন। গানগুলো ছাড়া আজও জাতীয় দিবস উদ্যাপন কল্পনা করা যায় না। একটি গানের কথা যদি বলি, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই।’ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মহাআনন্দঘন মুহূর্তে এই গানটি সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। আজও একইভাবে গানটি বেজে চলেছে। তার আগে তিনি সুর করেন ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম।’ কী অসাধারণ সুর, সংগীত পরিচালনা!
আজও সবার মুখে মুখে এই গান। তার সুর করা অন্য গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে আয়রে তোরা শোন, আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘রক্ত চাই, রক্ত চাই’ এবং ‘আহা ধন্য আমার।’ স্বাধীনতার পর মুক্ত স্বদেশে এই এক সংগীত নিয়েই ছিলেন সুজেয় শ্যাম। আরও কত শত গানকে সুরে বেঁধে চিরকালের করেছেন! আর তার পর বিদায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ অক্টোবর ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী। তার পর থেকে স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী স্বাধীন বাংলার এই শিল্পী স্মরণে একটি সভা করার চেষ্টা করে আসছিল বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন সংগঠকরা। কী কারণ? জানতে চাইলে অন্যতম আয়োজক মানজার চৌধুরী সুইট জানিয়েছিলেন, সুজেয় শ্যামের স্মরণসভা করার জন্য মিলনায়তন পাওয়া যাচ্ছে না! ফলে একটা মনোবেদনা একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল অনেকের মনে। তবে অবশেষে জায়গা পাওয়া গেছে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমিতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আজ শুক্রবার স্মরণসভাটি আয়োজন করা হবে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিবাগের সংস্কৃতিবিকাশ কেন্দ্রের নিচতলায় খোলা চত্বরে সমবেত হবেন শিল্পীরা। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুরের হমান। আলোচনা করবেন স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক শিল্পী মনোয়ার হোসেন খান, পরিষদের সহসভাপতি ও গণসংগীত শিল্পী ফকির সিরাজ। সুজেয় শ্যামের জীবনী পাঠ করবেন শিল্পী আবিদা রহমান সেতু। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে সুজেয় শ্যামের সুরকরা গানগুলো গাইবে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
থামছেই না ডেঙ্গু ॥ শীতের আমেজ এখন রাজধানীতে। বৃষ্টির দেখা নেই। তার পরও এডিস মশার উপদ্রব কমছে না। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সবই হচ্ছে নীরবে। কিন্তু হচ্ছে। ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য, দেশের অনেক এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ঢাকায়। সিটি করপোরেশন এবং বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর তালিকা ঘেটে দেখা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা যাওয়া রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। ঢাকা বিভাগে ৪৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৯৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২১৩ জন রোগে ভুগে মারা গেছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে এবং ভেতরে মোট মারা গেছেন ৩৫০ জন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ‘মনসুন এডিস সার্ভে-২০২৪’-এর ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বুধবার জানানো হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সারাবছরই এডিস মশা প্রজনন এবং বংশবিস্তার করছে। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের অভাব। ব্যক্তি পর্যায়ে আছে উদাসীনতা। এসব কারণেই ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসারের পর্যবেক্ষণ: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত ছিল না। মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা নেওয়া হয়নি। ফলে মশা ও রোগী দুটোই বেড়েছে। রোগী বাড়ার কারণে মৃত্যুও হচ্ছে বেশি। ফলে কালক্ষেপণ না করে এডিস নিধনে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।