.
তালে তাল মেলাচ্ছেন আপনি? তাল দিচ্ছেন খুব? অসুবিধা নেই। এখন সে সময়টাই চলছে। ভাদ্র মাস। অসহনীয় গরম। গরমে শুধু গা ঘামছে এমন নয়। তালও পাকছে। গাছ ভর্তি তাল। পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাকে লাগছে। এর পর নিজেকে সামলে রাখা যায় নাকি? সবাই তাই তাল মেলাতে ব্যস্ত! তবে সাবধান! বেশি পেকে গেলে বড় বড় তাল আপনিই নিচে পড়ে যায়। গাছের নিচ দিয়ে হাঁটার সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে। একটু অসতর্ক হলে মাথাটা কিন্তু যাবে!
ফলের কথা, হ্যাঁ, আরও হবে। তার আগে আসুন গাছের আলাপে। তালগাছ গ্রামীণ প্রকৃতি পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে অনেক বাড়ি ‘তালগাছওয়ালা বাড়ি’ নামে পরিচিত। গ্রামে গিয়ে কারও বাড়ি খুঁজলে স্থানীয় লোকজন কোনো একটি তালগাছের ছড়িয়ে থাকা উঁচু মাথা দেখিয়ে বলে দেন, ওই যে তালগাছ, তার পেছনের বাড়িটা অুমক মিয়ার। কিংবা বলেন, তার দুই বাড়ি পরে তমুকের বাড়ি। সোজা চলে যান। কথা মতো চলে গেলেই নিশ্চিত গন্তব্য। এখানেই শেষ নয়, তালগাছের নিচের জায়গাটি আবার তালতলা নামে পরিচিত। সারাদেশে কত যে তালতলা আছে!
গাছের আলোচনায় ফিরি। তালগাছ খুবই একলা। নিঃসঙ্গ। ওপরের দিকে বাড়ে শুধু। দেখে মনে হয় আকাশ ফুঁড়ে বের হয়ে যাবে। পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ এই গাছ উচ্চতায় ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছিলেন, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/উঁকি মারে আকাশে।/মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়/একেবারে উড়ে যায়;/কোথা পাবে পাখা সে?
ভাগ্যিস পাখা ছিল না। তাই বাংলাদেশের নরম মাটিতে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। বহু বহু কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আদি নিবাস, কেউ কেউ বলেন, আফ্রিকা। তবে উপমহাদেশীয় বৃক্ষ হিসেবেই স্বীকৃত। দেশের মোটামুটি সব এলাকাতেই হয়। কোনো কোনো গ্রামে আছে সারি সারি। দেখে কী যে আনন্দ হয়! ধানখেতের পাশে সরু আলপথে, পুকুরের চারপাশে তালগাছ লাগানো থাকে। শহরেও কমবেশি আছে। এমনকি ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের গেটের সামনে অনেক বছর ধরে টিকে আছে একটি তালগাছ।
উদ্ভিদবিদদের দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে তালের অনুমোদিত কোনো জাত নেই। বিভিন্ন আকারের তাল হয়। নানা রঙের হয় তাল। বারো মাসই হয় এমন তালও আছে। তবে মূলত পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি সময় গাছে ফুল আসে। তার পর ফল। অসংখ্য ফল ঘন হয়ে ঝুলে থাকে। ভালো গাছে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ফল হয়। শ্রাবণ মাস আসলে পাকতে শুরু করে। আর এখন আসল সময়Ñ ভাদ্র মাস। ব্যাপক হারে পাকছে। গ্রামের দুরন্ত কিশোর কিশোরীরা গাছের নিচ থেকে পাকা তাল কুড়িয়ে মাটিতে সজোরে ছুঁড়ে মারতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ফলটির উপরিভাগ নরম করে নেয় তারা। পরে খোসার ভেতর থেকে তালের আঁটি বের করে আনে। একটি তালে দুই থেকে তিনটি আঁটি থাকে। হাতে নিয়ে এগুলো কচলাতে হয়। আরও কয়েকটি ধাপ আছে। ধাপগুলো ধৈর্যসহকারে অতিক্রম করার পর প্রস্তুত হয় রস। তালের রস দিয়ে মজার মজার পিঠা পায়েস তৈরি হয়। তাল পিঠা, তাল বড়া, তাল তেল, তাল রুটি, তালের পায়েস, কলাপাতায় তাল পিঠা, তালের রসভরিÑ কত খাবেন?
তালের স্বাদ ছাড়াও আছে নানা গুণাগুণ। গবেষণা বলছে, পাকা তালের খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ রয়েছে ৭৭.২ গ্রাম। খনিজ অংশ ০.৭ গ্রাম। আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম শর্করা ২০.৭ গ্রাম। ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শক্তি রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি। এ সব উপদান স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই তালে তাল মেলান। খান। শুধু গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে, ঠিক আছে?