ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা হতে পারে নয়া পর্যটন স্পট

ঈদ, নববর্ষে বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পাকশী জোড়াসেতু

তৌহিদ আক্তার পান্না

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈদ, নববর্ষে বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পাকশী জোড়াসেতু

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড়

ঈশ্বরদীসহ নিকটস্থ জেলাগুলোর মানুষের জন্য দীর্ঘদিন পর এবার ঈদ পহেলা বৈশাখ এক সঙ্গে দুটি উৎসব উদ্যাপনের সুযোগ এসেছিল। উৎসবপ্রিয় এসব মানুষ এই সুযোগটি এবার ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতুু, লালনশাহ সেতু পাকশী পদ্মা নদীকে ঘিরে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে।

১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণ এবং পরবর্তীতে লালনশাহ সেতু নির্মাণের পর থেকেই এই এলাকায় হাজারও দর্শনার্থী প্রতিবছর জাতীয় দিবস গুলিতে ঘোরাফেরা বিনোদন উপভোগ করে আসছিল। শুধু জাতীয় দিবসই না, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অনেক দর্শনার্থী এখানে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ১০৯ বছরের এই হার্ডিঞ্জ সেতু বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা থেকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি রেলসেতু। সেতুটির প্রায় অর্ধেক অংশ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা এবং অর্ধেক অংশ কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলসেতু হিসেবে পরিচিত।

পাবনা জেলার পাকশী রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর ওপর এই সেতুটি অবস্থিত। এই সেতুর নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫ ইংরেজি সাল। ২৪ হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে পাঁচ বছর ধরে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছিল কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬শ টাকা। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ সেতু। হার্ডিঞ্জ সেতুর দৈর্ঘ্য ,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫৮৯৪ ফুট বা . কি.মিটার। এর ওপর দুটি ব্রডগেজ রেললাইন, পায়ে হাঁটা পথ উভয় পাড়ে চলাচলের সিড়ি রয়েছে। সেতুটির মোট স্প্যান রয়েছে পনেরটি। এই সেতুটি নির্মাণের পরই মূলত, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আসাম এক্সপ্রেস, দার্জিলিং মেইলসহ বিভিন্ন ট্রেন চলাচল করত। ১৬ চাকা বিশিষ্ট ডব্লিউডি কয়লাচালিত ইঞ্জিন এসব ট্রেনে ব্যবহার করা হত। হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণের পর মূলত, দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়নের কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা ঘুরে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে লালনশাহ সেতু নির্মাণের ফলে সে চাকা ঘোরার গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সেতু দুটিকে ঘিরে প্রতি ছুটির দিনে এখানে হাজারো দর্শনার্থীদের ভিড় জমে আসলেও এবার ঈদ পহেলা বৈশাখে একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। এবারে দর্শনার্থীরাচলো চলো এবার পাকশী জোড়া সেতুর নদী  সৈকতে চলো, ঈদ বৈশাখী আনন্দ উৎসবে চলোএই স্লোগানে যুব সম্প্রদায়সহ নানা বয়সী বিনোদন প্রিয় হাজারো মানুষ এবার  ঈশ্বরদীর পাকশীতে ঈদ পহেলা বৈশাখের আনন্দ উপভোগ করেছে। ১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণের পর এবারই প্রথম ঈদ পহেলা বৈশাখে একটু ব্যতিক্রম হয়েছে। নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আকাশচুম্বি চুল্লি নতুন করে নির্মাণ করা রূপপুর রেল স্টেশন দেখতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে। সকাল থেকেই নানা বয়সী নানা রংবেরংয়ের পোশাকে নারী-পুরুষ শিশু দর্শনার্থীরা পাকশীর জোড়া সেতু এলাকায় ভিড় করে। রাশিয়ান দর্শনার্থীরা বিনোদনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পাকশী এলাকার প্রশংসা করেন।

দর্শনার্থীরা প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে কেউ কেউ নৌকা ভ্রমণ, সেলফি উঠানো, ফুসকা খাওয়া, হাটাহাটি, গল্প আড্ডা এবং হার্ডিঞ্জ সেতু কফি হাউসসহ বিভিন্ন পসরার দোকানে কেনাকাটাসহ নানাভাবে অনেক রাত পর্যন্ত বিনোদনে অংশ নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ঢাকা থেকে আগত ডাক্তার শাহেদ ইমরানসহ অনেকের মতে পাকশী জোড়া সেতু এলাকা অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডি বিনোদনের স্থান। স্থানীয় সাংবাদিক দর্শনার্থী আলাউদ্দিন আল আজাদ হান্নানের মতে, পদ্মার অপূর্ব ধুসর বালুচরে গড়ে ওঠা হৃদয় চমকানো পারমাণবিক চুল্লি সড়ক রেলপথের মিলন কেন্দ্র পর্যটকদের আকৃষ্ট করবার মতো অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান। তার মতে, এখানে পর্যটন কেন্দ্র করা হলে পর্যটন শিল্পের যে অভাবনীয় উন্নয়ন হবে তা এক বাক্যে বলা যায়। ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিভিন্ন বয়সী বিনোদন প্রিয় দর্শনার্থীদের পক্ষ থেকে পাকশী জোড়া সেতু এলাকায় উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি স্থায়ীভাবে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

×