ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

টোলের আওতায় আসবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১ মার্চ ২০২৪

টোলের আওতায় আসবে ঢাকা-চট্টগ্রাম  মহাসড়ক

.

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়ক আট লেনে প্রশস্তকরণ এবং উভয়পাশে দুটি করে সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রকল্পের সমীক্ষা শুরু হচ্ছে মার্চে। তবে পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে।

চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। দিনে সড়কে ১০ হাজারের বেশি ট্রাক চলাচল করে। প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে বলে ২০২০ সালে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সড়কে যানবাহন বাড়ছে। ফলে অনেক স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

২০০৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প নেয় সরকার। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। ব্যয় হয় প্রায় হাজার কোটি টাকা। সময় চালু হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার চার লেন সড়ক।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, মীরসরাই-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে।

সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, ২০১৩ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেও গতবছর প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এখন পিপিপির মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে না করে বিদ্যমান চারলেন বিশিষ্ট মহাসড়কটি আট লেনে প্রশস্তকরণ উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার বিস্তারিত নক্সা সমীক্ষা আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। 

জানা গেছে, নতুন প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেসব স্থানে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে।

সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে মহাসড়ক। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে, যেটি হবে ফেনী  থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার যোগান  দেবে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীত হওয়ার পর যানবাহন চলাচলে টোল দিতে হবে সওজকে। ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী, যানবাহনের ভিত্তিতে টোল কিলোমিটারপ্রতি টাকা। বর্তমানে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। ভোক্তা মূল্যসূচক বাড়লে প্রতিবছর বাড়বে টোলের হার। বিদ্যমান খসড়া সংশোধিত নীতিমালাতে টোল আদায়ের জন্য যানবাহনের ১৩টি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টোল নির্ধারণ করা হয়েছেট্রেইলারশ্রেণির যানের। অন্যদিকে সবচেয়ে কম টোল দিতে হয় রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ির মতো যানবাহনের। বর্তমানে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়ক অংশে টোল আদায় করছে সওজ অধিদপ্তর। 

সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, আগে মহাসড়কের প্রয়োজনীয় সুবিধার উন্নয়ন করা হবে। সড়ককে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত হিসেবে গড়ে তোলা, সার্ভিস লেনের মতো বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা রাখা, টোল প্লাজার মতো অবকাঠামো নির্মাণের পরই টোল আদায়ের কাজ শুরু হবে।

 

×