ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পরিবেশ দূষণসহ ভরাট হচ্ছে খাল-বিল-নদী

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার

শহর ঘেঁষে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর তীরে পলিথিনের স্তূপ

দেড় যুগ আগে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। ব্যবহৃত পলিথিন ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। আর এসবের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন নদী-খাল-বিল। শহর ঘেঁষে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর তীরে পলিথিনের স্তূপ জমেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী পরিবেশ দূষণসহ ভরাট হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিনে।

সম্প্রতি সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই পলিথিনের বিক্রি ব্যবহার। নেই বাধা দেওয়ার কেউ। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফলের দোকান, কসমেটিকসের দোকানসহ জেলার সব বাজারেই চলছে প্রকাশ্যে পলিথিনের বিক্রি ব্যবহার। যেমন বিক্রেতারা বিক্রি করছেন বা বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে দিচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও কিনছেন বা নিচ্ছেন। এতে পিছিয়ে নেই কেউই। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও সেটা ভুলে গেছেন অনেকেই।

সেই সঙ্গে পলিথিন ব্যবহার বিক্রি বন্ধে কোনো অভিযানও চোখে পড়ে না। উল্টো বেড়েছে বিক্রি ব্যবহার। কাঁচাবাজার থেকে মুদি দোকান কিংবা হকার থেকে বিপণি বিতান, সর্বত্রই মিলছে পলিথিন ব্যাগ। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি নদী দশটিরও বেশি বড় বড় খাল রয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় প্যাকেটগুলো যত্রতত্র ফেলেন বাসিন্দারা। ফলে এসব সেচযোগ্য পয়েন্ট নিষিদ্ধ পলিথিনে ভরাট হয়। এসব নদী-খালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিতসহ ভরাট হয়েছে মহানন্দা নদী। ডাস্টবিনে না ফেলে বাড়ির উঠানে থাকা ড্রেনেই ময়লা-আর্বজনা ফেলেন মানুষজন। এর ফলে ড্রেনের পানিসহ পলিথিনের পরিত্যক্ত অংশ মহানন্দা নদীতে গিয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নাব্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও অধরাই থেকে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-শিবগঞ্জ রহনপুর পৌরসভা প্রশাসন ময়লা-আবর্জনা দুইভাগে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে একটি পচনশীল, অন্যটি অপচনশীলযোগ্য আবর্জনা। দুভাগে বিভক্তি করা এসব আবর্জনা দুটি রঙের ডাস্টবিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কঠোর তদারকির অভাবে এমন উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী চক্র কাজ করছে। ঢাকাসহ দূরবর্তী কয়েকটি জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন আসে। সাধারণত এসব পলিথিন মালবাহী ট্রেন, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনা হয়। বাজারজাতের মাধ্যমে দোকানদার হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি পলিথিন নষ্ট করছে পরিবেশ। নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না হওয়ার জন্য আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা না থাকা, সরকারি দপ্তরের কঠোরতা না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে। ছাড়া পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে।

অন্যদিকে উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত চর্ম প্রদাহের সৃষ্টি হয়। মাটিকে উত্তপ্ত করা গাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে পলিথিন। নদী কিংবা খালের তলদেশে জমে থাকা পলিথিন মাছ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট সৃষ্টি করে।

জেলার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগই মানুষ পলিথিনের কুফল সম্পর্কে অবগত। কিন্তু বিকল্প সহজলভ্য কোনো কিছু না থাকায় ব্যবহার বেড়েছে বলে জানান একাধিক ব্যবহারকারী। তবে দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থাপনা, আইনের প্রয়োগ না হওয়া, পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ সহজলভ্য না হওয়া এবং বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারে মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি না করাকেই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা।

×