ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন গ্যালারিতে ‘মানব প্রকৃতির স্বপ্ন’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২১ নভেম্বর ২০২৩

বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন গ্যালারিতে ‘মানব প্রকৃতির স্বপ্ন’

হাজারীবাগের বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন গ্যালারিতে মানব প্রকৃতির স্বপ্ন শীর্ষক প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম দেখছেন দর্শনার্থীরা

স্বপ্নকে সঙ্গী করেই এগিয়ে যায় মানুষ। সেই স্বপ্নের সেতু ধরে পরিবর্তিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি। নির্মিত হয় বৈচিত্র্যময়তাকে আলিঙ্গনের ইতিহাস। মানুষ যেখানে অবস্থান করে তাকে বদলানোর, আরও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে মানুষ। পৃথিবীর সব বাধাকে উপেক্ষা করে সেই নতুনকে স্পর্শ করতে চায়। এই বৈচিত্র্যময়তাকে আলিঙ্গন করা এবং তা নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোই তো জীবনের এগিয়ে চলার শক্তি। কিন্তু সামনে এগিয়ে গেলেও ঐতিহ্য বিসর্জন দিলে চলবে না। ঐতিহ্যকে অবলম্বন করেই নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজেদের মাঝে খুঁজে নিতে হবে।

এমন ভাবনা উপজীব্য করে হাজারীবাগে বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশনের গ্যালারিতে চলছে বেলজিয়ামের শিল্পী কোয়েন ভ্যানমেক্যালেনের প্রদর্শনী ‘মানব প্রকৃতির স্বপ্ন’। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন এবং কোয়েন ভ্যানমেক্যালেন সম্মিলিতভাবে, বিজ্ঞান ও শিল্পের সংযোগে রচিত এই ভিন্নধর্মী শিল্প প্রকল্প এবং তার রচনাশৈলীকে বাংলাদেশের দর্শকের সামনে উপস্থাপন করছে। প্রদর্শনীটি নানা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে শিল্প, বিজ্ঞান ও দর্শনের সম্মিলন ঘটিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে সহাবস্থানের প্রাচীন জীবনাচারকে মনে করিয়ে দেয়।
১৯৯৯ সালে এ প্রজেক্ট শুরু করেন এ শিল্পী। এরপর বিভিন্ন দেশে এ প্রজেক্ট নিয়ে ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশের শিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামীর সঙ্গে তার পরিচয় বিদেশে একটি শিল্প সম্মেলনে। এরপরে বাংলাদেশে তার সেই প্রজেক্ট নিয়ে আসেন। এর অংশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্নœ জেলা ভ্রমণ করে প্রদর্শনীর উপকরণ সংগ্রহ করেন। এরপর প্রস্তুতি নেন তা বিন্যাসের। প্রদর্শনী কিউরেট করেছেন শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী।
শিল্পী কোয়েন ভ্যানমেক্যালেন তার দ্য কসমোপলিটান চিকেন নামক শিল্প প্রকল্পে এই বিষয়টিকে তুলে ধরেন যেখানে একটি ‘মুরগি’ মানবিকতা এবং সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহের প্রতীকী রূপ এবং ‘আইডেন্টিটি ও ডাইভারসিটি’ তথা ব্যক্তি পরিচয় ও বৈচিত্র্যময়তা এবং সীমানা ছাপিয়ে এর সর্বজনীন রূপকে সমর্থন করে।
এই নতুন শিল্প ভাষায়, শিল্পের নান্দনিকতা দর্শক যতটা না দেখেন তার থেকে বেশি অনুভব করেন। বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর যে স্বপ্ন কোয়েন দেখেন, তার শিল্পের ভাষায় ‘ম্যাকলস অ্যাসেল’ প্রজাতির ২৮তম প্রজন্ম প্রতীকী রূপ ধারণ করে। আমাদের পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিশে নতুন ভাষার সৃষ্টি করে।
শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী জানান, এই স্বপ্নের তাড়নায় ২০ বছর আগে শিল্পীকে যেমন ‘হোয়াইট ইয়ারড ফেজেন্ট’ এর খোঁজে হিমালয়ের এক আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিল, ঠিক একইভাবে আজ বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। ঠিক যেন নদীর পানির ধারা, হিমালয় থেকে গড়িয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। ঠিক তেমনি এই ‘ম্যাকলস অ্যাসেল’ প্রজাতির মুরগিরও সুদূর বেলজিয়াম থেকে শুরু করে আমাদের রাজশাহীর লোকশিল্পের উঠানে, এমনকি চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলসমূহে দেখা মেলে।
শিল্পী কোয়েন ভ্যানমেক্যালেন জানান, আমাদের সমষ্টিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, দ্য কসমোপলিটন চিকেন প্রজেক্ট এর বৈচিত্র্যময়তাকে আমি ‘মানব প্রকৃতির স্বপ্ন’ প্রকল্পে প্রতীকীরূপে উন্মোচন করেছি। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

×