ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখার সংকলিত বইয়ের প্রকাশনা

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সিরাজুদ্দীন হোসেনের লেখার সংকলিত বইয়ের প্রকাশনা

‘একাত্তরের অকুতোভয় সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের জাহান্নামের আগুনে বসিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা

দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনন্য এক নাম সিরাজুদ্দীন হোসেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে তার কীর্তিগাথা। একাত্তরের অবরুদ্ধ সময়ে পাকবাহিনী পরিবেষ্টিত এই ভূখ-ে নির্ভীক  সাংবাদিকতার উদাহরণ রেখে গেছেন এই কীর্তিমান। সেই ক্রান্তিলগ্নে পালন করেছেন  দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব। সেই সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে এই সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিকের ক্ষুরধার লেখনী। সাহসী সাংবাদিকতার সমান্তরালে গোপনে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদন থেকে প্রবন্ধের আশ্রয়ে উন্মোচিত করেছেন পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতা থেকে ইয়াহিয়া সরকারের দালালরূপী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া তথাকথিত ‘দেশপ্রেমিক’ বান্দাদের কার্যকলাপ।

ইত্তেফাকের পাতায় সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন সেসব ঘটনার ইতিবৃত্ত। মেলে ধরেছেন অজানা অধ্যায়। ফলে পাকিদের দোসর আলবদর বাহিনী একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর অপহরণ করে সিরাজুদ্দীনকে।  তার আগেই তিনি ইত্তেফাকে তদানীন্তন পাকিস্তানি রাজনীতির গোমর ফাঁস  করেছেন। লিখেছেন ‘ঠগ বাছতে গা উজাড়’, ‘অধুনা রাজনীতির এক অধ্যায়’, ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’সহ নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত সিরাজুদ্দীন হোসেনের সেই লেখাগুলো এবার উঠে এলো বইয়ের ভাঁজে। প্রকাশিত হলো ‘একাত্তরের অকুতোভয় সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের  জাহান্নামের আগুনে বসিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থ। বইয়ের লেখাগুলো সঙ্কলন করেছেন সিরাজুদ্দীনের তিন সন্তান সেলিম রেজা নূর, জাহীদ রেজা নূর ও তৌহীদ রেজা নূর। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  
আয়োজনের শুরুতেই গ্রন্থের মোড়ক করেন অতিথিরা। বইটি নিয়ে আলোচনা  করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, দৈনিক কালবেলার সম্পাদক আবেদ খান, সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন ভুইয়া, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক কাজী মদিনা, সাংবাদিক ও গবেষক কাবেরী গায়েন। সভাপতিত্ব করেন বইটির প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি। বইয়ের সম্পাদকদের পক্ষে আলোচনা করেন জাহিদ রেজা নূর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সিরাজুদ্দীনের লেখা থেকে পাঠ এবং তাকে কবিতা পাঠ করা হয়। 
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতিহাস এবং সাংবাদিকতার মধ্যে এক ধরনের সাদৃশ্য আছে। দুটিই সত্যলগ্ন। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছেন। তাঁরা বিবেকবান, সাহসী ও নির্ভীক। সিরাজুদ্দীন  হোসেন  তেমনই একজন। তাঁকে নিয়ে লেখা এই বইটি প্রকাশ করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করা  হয়েছে। 
কাজী মদিনা বলেন, কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় সিরাজুদ্দীন  হোসেন বঙ্গবন্ধুর বন্ধু হয়ে ওঠেন। একাত্তরের বৈরী সময়ে তিনি যে অকুতোভয় সাংবাদিকতা করেছেন তা প্রথম অধ্যায় পড়লে জানা যায়। সংবাদপত্রশিল্পে তিনি যে ব্যতিক্রমী সাংবাদিক ছিলেন তা বইটি পড়লে সেই উপলব্ধি হয়। কিন্তু নতুন প্রজন্ম তাঁর সাহস ও নিষ্ঠা সম্পর্কে জ্ঞাত কীনা জানি না। 
কাবেরী গায়েন বলেন, সিরাজুদ্দীন একাত্তরে সাংবাদিকতার যে নমুনা দেখিয়েছেন তাতে তিনি আমাদের যুদ্ধসাংবাদিকতার পথিকৃৎ। একাত্তরে কেউ  যখন কথা বলতে পারছিল না তখন তিনি ‘বাংলাদেশ’ শব্দটিকে অতলে হারিয়ে  যেতে দেননি। তিনি দেখিয়ে গেছেন কী করে যুদ্ধের মাঝে  কৌশলী সংবাদ শিরোনাম করতে হয়।
জাহীদ রেজা নূর বলেন, লোকে ভুলে যায়। সিরাজুদ্দীন  হোসেনও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে পারতেন। সে জন্যই বইটি আমরা করেছি। ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া সিরাজুদ্দীন হোসেনকে প্রভূত স্বাধীনতা দিয়েছেন। সেই ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশেষ সংখ্যায় অন্যরা থাকলেও সিরাজুদ্দীন হোসেনের কথা উল্লেখ কর হয়নি।

পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তার ছবি ছিল। এখন আর সেটি নেই। পিআইবির একটি প্রকাশনা  থেকেও তাকে মুছে ফেলা হয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই ইচ্ছা করেই সব জায়গা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধুও সিরাজুদ্দীন  হোসেনের কাছে  থেকে অনেক রাজনৈতিক পরামর্শ নিয়েছেন। দেশভাগের আগে থেকে সিরাজুদ্দীন সাংবাদিকতা শুরু করেন। 
বইটিতে সিরাজুদ্দীন হোসেনের সাহসী ও কৌশলী সাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালে ইত্তেফাকে প্রকাশিত জামায়াতে ইসলামের স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা, বাংলাদেশ নামটি কিভাবে এলো কিংবা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। লেখনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পত্রিকার কাটিং এবং বিভিন্ন আলোকচিত্র। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন অশোক কর্মকার। মূল্য রাখা হয়েছে ৮০০ টাকা।

×