
প্রকৃতিতে এক নতুন রূপ এনে দেয় কৃষ্ণচূড়া ফুল। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও আপন নিয়মে কৃষ্ণচূড়ার শাখা-প্রশাখা সেজেছে রক্তিম সাজে। কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে আকাশ। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন পথে-প্রান্তরে ও স্থানীয়দের বসতবাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে এসব রক্তলাল ফুলসমৃদ্ধ অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ। এ যেন এক অপারূপ মনমুগ্ধকর ভালোবাসার অনুভূতির ছোঁয়া। আর এসব কৃষ্ণচূড়া ফুলের নিজস্ব সৌন্দর্য উপভোগ করছেন ফুলপ্রিয় পথিক। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে কৃষ্ণচূড়ার জৌলুস।
সরেজমিনে ফরিদপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুঁটেছে। সবুজের বুকে শুধুই লালের রাজত্ব। দূর থেকে মনে হয় ময়ূর তার রাঙা পেখম মেলে ধরেছে প্রকৃতির মাঝে। লক্ষ্য করা গেছে, ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের মাজকান্দি-মধুখালী সড়কসহ জেলার বিভিন্ন বসতবাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারোহ। কৃষ্ণচূড়া ফুলে ঠাসা গাছের ডালগুলো নুয়ে পড়েছে।
কৃষ্ণচূড়া এক ধরনের বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ, যার ইংরেজি নাম ফ্লেম ট্রি (Flame Tree) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix Regia)। এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।
আমাদের দেশে সাধারণত বসন্তের শেষের দিকে এ ফুল ফোটে। কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার আগে কলি দেখতে মোহরের মতো দেখায়, তাই হিন্দিতে এই ফুলকে বলা হয় গুলমোহর।
প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষের উচ্চতা তেমন একটা বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠলেও তার শাখা-প্রশাখা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত থাকে। কৃষ্ণচূড়া পুরো গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে। বিভিন্ন দেশে এই ফুল বিভিন্ন সময়ে ফুটলেও বাংলাদেশে ফুটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এই পুরো সময়টাতেই কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে উজ্জ্বল লাল আভায়।
সোমা শীল নামে এক গৃহবধূ জানান, এই কৃষ্ণচূড়া ফুল লাল ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। আমরা লাল রঙের ফুলকে কৃষ্ণচূড়া ও হলুদ রঙের ফুলকে রাধাচূড়া বলি। তবে হলুদ রঙে রাধাচূড়া এখন তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। আমাদের দেশে এপ্রিল-মে মাসে এই ফুল ফোটে। বছরের অন্যান্য সময় এই ফুল বা গাছ সচরাচর চোখে না পড়লেও এপ্রিল-মে মাসে যখনই গাছে নতুন পাতা বা ফুল ফোটা শুরু করে তখনই যেন পথচারীর নজর কাড়ে মনোমুগ্ধকর এই কৃষ্ণচূড়া।
তিনি আরও বলেন, জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়কে এখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় লাল চাদরের বিছানার মত। অপরূপ শোভায় শোভিত হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। যে কাউকে আকৃষ্ট করছে সড়কগুলো।
কাকলী, আসমা, সরলা নামের তরুণীরা জানান, এই সময় গ্রাম অঞ্চলে মাঝে মাঝে শুধু চোখে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল আভা। প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে নতুন রূপ।
সন্দীপন চক্রবর্ত্তী নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কৃষ্ণচূড়া অবশ্যই প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ। তবে এর অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। এছাড়া গ্রীষ্মের খরতাপে ছায়া দান করে কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার কৃষ্ণচূড়া ফুল লাগানো উচিত।
আফরোজা