ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০

শুরু হলো পরম্পরার সাক্ষ্যবহ সফিউদ্দীন ছাপচিত্র উৎসব

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২৪, ৩ জুন ২০২৩

শুরু হলো পরম্পরার সাক্ষ্যবহ সফিউদ্দীন ছাপচিত্র উৎসব

.

প্রদর্শনালয়জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিবিধ বিষয়ের ছাপচিত্র।  দেওয়ালে ঝুলছে কিংবদন্তি থেকে প্রখ্যাত চিত্রকরদের চিত্রকর্ম। শুধু কি তাই? উপস্থাপিত হয়েছে বিশিষ্ট শিল্পী থেকে একেবারে শিক্ষার্থী শিল্পীদের কাজও। এভাবেই কয়েক প্রজন্মের শিল্পের এক আয়োজনে। সেই সুবাদে দেখা মিলছে গত শতকের চল্লিশের দশক থেকে সম্প্রতি সৃজিত ছাপচিত্রের বর্ণিল শিল্পসম্ভার। গ্যালারিতে প্রবেশের পর নজর কেড়ে নেয় মাস্টার পেইন্টারদের চিত্রকর্মে সজ্জিত ডান পাশের দেওয়াল। কাছে টেনে নেয় সাদা-কালোর হাতছানিময় পটুয়া কামরুল হাসানের কাজটি। মেঝেতে বিছিয়ে রাখা মাদুরে বসে মনের সুখে হুক্কা টানছেন মাস্টার মশাই। তার উল্টোদিকে বই ও স্লেট নিয়ে বসে আছে এক কিশোর। ছাপচিত্রের লিথোগ্রাফ মাধ্যমের আশ্রয়ে ১৯৪৫ সালে ছবিটি এঁকেছিলেন কামরুল হাসান। এ ছবির পাশেই রয়েছে মা ও শিশুর  ভালোবাসার প্রতিচ্ছবিময় জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মটি। উডকাট মাধ্যমের প্রয়োগে ১৯৪০ সালে শিল্পকর্মটি সৃজন করেছিলেন শিল্পাচার্য। বৈচিত্র্যময় ফর্ম ও টেক্সচারের সম্মিলনে সজ্জিত হয়েছে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের ক্যানভাসটি। সফট এচিংয়ের ব্যবহারে ১৯৬১ সালে আঁকা হয়েছিল ছবিটি।  এসব পথিকৃৎ শিল্পীর সঙ্গে কয়েক প্রজন্মের শিল্পীর ছাপচিত্রের মেলবন্ধনে শুক্রবার থেকে ধানম-ির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে শুরু হলো সফিউদ্দীন ছাপচিত্র উৎসব। শিল্পগুরুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ছাপচিত্রকে সাধারণের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং প্রসার ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই শিল্পায়োজন।

ছুটির দিনের বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিল্পী সৈয়দ আবুল র্বাক আল্ভী। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ চত্বরের চেয়ারম্যান আহমেদ নাজির।

উদ্বোধনী বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, কেবলমাত্র ছাপচিত্র নয়; দেশের শিল্পকলাচর্চার পথরেখা তৈরির নেপথ্যে  যেসব মানুষ রয়েছেন তাদের গুরুত্বকে উপলব্ধি করতে হলে তাদের স্মরণ করতে হবে। তেমনই একজন সফিউদ্দীন আহমেদ। তিনি ছিলেন আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন ও  ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিল্পী। ছাপচিত্র শিল্পী হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তানজুড়ে তিনি ছিলেন অনন্য। চারুশিল্পের এই মাধ্যমে অভূতপূর্ব কাজ করেছেন তিনি। সেই হিসেবে তিনি এ দেশের এক বড় সম্পদ।

উৎসব প্রসঙ্গে আবুল র্ব্কা আল্ভী বলেন, একসঙ্গে কয়েক প্রজন্মের কাজ দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই আয়োজনটি। ফলে ছাপচিত্রে সময়ের পরিবর্তনটিও ধরা দিয়েছে। এতে করে নতুন প্রজন্মের ছাপচিত্র শিল্পীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে। পূর্বের প্রজন্মের কাজ দেখে নিজেদের নতুন করে গড়ার সুযোগ পাবে।

আহমেদ নাজির  বলেন, সফিউদ্দিন ছাপচিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য এই মাধ্যমটাকে জনপ্রিয় করা। ছাপচিত্র সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সেই বিবেচনায়ই ছাপচিত্র মাধ্যমের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ এ উৎসব।

উৎসবে ঠাঁইপ্রাপ্ত প্রায় দুইশ’ ছাপচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ, যাপিত জীবন থেকে গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি কিংবা নৈসর্গের নান্দনিকতা থেকে নারীর সৌন্দর্যসহ বিবিধ বিষয় মূর্ত হয়েছে। প্রদর্শিত হচ্ছে ৫১ শিল্পীর ছাপচিত্র। এই শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন- জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ, রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, দেবদাস চক্রবর্তী, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, শহিদ কবির, আবুল র্ব্কা আল্্ভী, জ্যোস্না মাহবুবা, আলফা বেগম, শাম্মী ইয়াসমিন, মুসলিম মিয়া, শাহিদা আক্তার, রশীদ আমিন, আনিসুজ্জামান, সুশান্ত কুমার অধিকারী, ফারহানা আফরোজ, রিফাত জাহান কান্তা, সুবর্ণা মোর্শেদা, এএইচ ঢালী তমাল, ফারজানা ববি প্রমুখ। উৎসব চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

 

×