
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে জাতীয় কবিতা উৎসবে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি হরশিত বালা
কবিতাকে সঙ্গী করে কেটে গেল দারুণ এক সময়। সকাল থেকে রাত অবধি কবিতা পড়লেন দেশ-বিদেশের কবিরা। স্বদেশের প্রতিষ্ঠিত কবিদের সঙ্গে নিবন্ধনের মাধ্যমে কবিতাপাঠে অংশ নিলেন দেশের নানা প্রান্তের নবীন-প্রবীণসহ নানা বয়সী ৩০০ কবি। এমনকি কাব্যিক উচ্চারণের আয়োজনটিতে শামিল হলো আফিজা আবদুল্লা নামের এক শিশু কবি। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে শরণার্থী জীবনের দুঃখ-দুর্দশার প্রেক্ষাপটে রচিত কবিতাটির পাঠের পর স্বরচিত একটি অণুকাব্য পড়ে শোনায় এই খুদে কাব্য¯্রষ্টা। তার মতো এমন অনেকেই কবিতার পঙ্ক্তিমালায় প্রকাশ করেছেন স্বদেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা। উঠে এসেছে বাংলার মাটি বাংলার জলের বন্দনা। কারও কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে শান্তির শাশ্বত বাণী। কারও কবিতার সূত্র ধরে উচ্চারিত হয়েছে ভাব-ভালোবাসার বারতা। উচ্চারিত হয়েছে মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষাময় শব্দমালা।
আর কবিদের মিলনমেলায় পরিণত হওয়া এই কবিতাপাঠের আসরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হয়েছিলেন কবিতাপ্রেমীরা। সব মিলিয়ে কবি ও কবিতানুরাগীদের সরব উপস্থিতিতে সুন্দরতম দৃশ্যের দেখা মিলেছে জাতীয় কবিতা উৎসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত দ্ইু দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার।
উৎসবের সমাপনী দিনের সন্ধ্যায় ২০২১ সালের ৩৪তম উৎসবের জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদার হতে। সম্মানী, স্মারক ও সনদপত্রসহ কবির হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত।
সমাপনী দিনের সকালে সেমিনারের মাধ্যমে উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়।
মুহাম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনিসুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আখতার হুসেন, রফিকউল্লাহ খান ও আমিরুল ইসলাম। সকাল গড়ানো দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে পোয়েট্রি অ্যান্ড পিস শীর্ষক সেমিনার। কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফখরুল আলম। বিষয়টির ওপর আলোচনায় অংশ নেন রামেন্দু মুজমদার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ভারত, ভুটান ও নেপালের কবিবৃন্দ।
সেমিনারের পর অনুষ্ঠিত হয় নিবন্ধিত কবিদের অংশগ্রহণে কবিতাপাঠের আসর। সেই সূত্রে সুন্দরতম দৃশ্যকল্পের উদ্ভব হয়। মঞ্চজুড়ে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন কবিরা। মাইকে প্রত্যেকের নামটি ঘোষণার সঙ্গে একে একে উঠে গেছেন ডায়াসে। পাঠ করেছেন নিজের রচিত প্রিয় কবিতাখানি। এদিন সব মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কবিতাপাঠের চারটি অধিবেশন।
এ সব পর্বের সভাপতিত্ব করেন দিলারা হাফিজ, রুবী রহমান, আসলাম সানী ও নূহ-উল-আলম লেনিন। রাতে আমন্ত্রিত অতিথি কবিদের নিয়ে কবিতাপাঠের পর্বটির সভাপতিত্ব করেন নির্মলেন্দু গুণ। সব শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে আমন্ত্রিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে কবিতার গান শীর্ষক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের সভাপতিত্ব করেন আসাদুজ্জামান নূর।
৩৫তম কবিতা উৎসবের দেশের কবিদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন ভারত, ভুটান, নেপাল, ইরান ও অস্ট্রিয়ার এক ঝাঁক কবি।