বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতি নিদর্শন (পাঞ্জাবি) জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করেন
জাতীয় জাদুঘরের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একদিন ছিল শনিবার। শোকের মাস আগস্টের এই দিনটিতে জাদুঘরের সংগ্রহে যুক্ত হলো বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চারটি স্মৃতি নিদর্শন। সেই সুবাদে এখন থেকে জাদুঘর পরিদর্শনে আসা দর্শনার্থীরা আরও বেশি গভীরভাবে অনুভব করতে পারবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতার স্মৃতিধন্য পায়জামা, পাঞ্জাবি, মুজিব কোট এবং একটি টোব্যাকো পাইপ।
দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা এই স্মৃতি নিদর্শনগুলো দুদিন আগে বৃহস্পতিবার এলেও আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হলো গতকাল বিকেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে জাতীয় জাদুঘরে। স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মোঃ নজরুল ইসলাম খানের কাছ থেকে নিদর্শনসমূহ গ্রহণ করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল ইসলাম। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। সূচনা বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল ইসলাম। জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মোঃ নজরুল ইসলাম খান এবং সহযোগী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান।
বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতি নিদর্শনসমূহকে অমূল্য সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করে কে এম খালিদ বলেন, চাইলেই এগুলো অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। শত বছর পরে যেন একইরকম থাকে সেই লক্ষ্যে নিদর্শনগুলোকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে জাতির পিতার ব্যবহৃত এই নিদর্শনের সঙ্গে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য অনুষঙ্গ নিয়ে জাদুঘরে পৃথক গ্যালারি করা হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনেক বেশিসংখ্যক মানুষ দেখার সুযোগ পাবে-এই অভিপ্রায়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে নিদর্শনগুলো জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বঙ্গবন্ধুর পরিহিত পায়জামা, পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট এবং তাঁর ব্যবহৃত টোব্যাকো পাইপটি সেসব দর্শনার্থী জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শত শত মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়েছেন এসব পোশাক পরে। এই পোশাকের সঙ্গে মিশে আছে তার সংগ্রামী জীবনের অধ্যায়।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে স্মৃতি জাদুঘর থেকে আরও নিদর্শন দেয়া হবে জাতীয় জাদুঘরে। পৃথক গ্যালারিতে উপস্থাপিত হবে এসব নিদর্শন। জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে চারটি নিদর্শনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমাও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটিমাত্র চশমা থাকায় সেটি দেয়া সম্ভব হয়নি।
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এই স্মৃতি নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে জাদুঘর পরিদর্শনে আসা দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধু অবয়ব খুঁজে পাবে। তাঁকে আরও বেশি জানার চেষ্টা করবে। উপলব্ধি করার চেষ্টা করবে। তাঁর জীবনাদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হবে।
মোঃ আবুল মনসুর বলেন, পাঞ্জাবি, পায়জামা ও মুজিব কোট-এই তিনটি স্মৃতি নিদর্শনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের উপস্থাপিত হবে দর্শনার্থীদের সামনে। অন্যদিকে টোব্যাকো পাইপটি উপস্থাপন করবে তাঁর ব্যক্তিত্বের স্টাইলিশ দিকটি।
মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই তাঁর ৪৯টি নিদর্শন প্রদান করেছিলেন জাতীয় জাদুঘরে। সেই তালিকায় ছিল বঙ্গবন্ধুকে লেখা সাধারণ মানুষের চিঠি, মানপত্র, কলম ইত্যাদি। সেগুলোর সঙ্গে নতুন এই চার নিদর্শন জাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলল।
প্রসঙ্গত, জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পায়জামা, পাঞ্জাবি, মুজিব কোট, চশমা ও টোব্যাকো পাইপ নিদর্শন হিসেবে পাওয়ার আকাক্সক্ষা জানিয়ে স্মৃতি জাদুঘরে চিঠি দেয়া হয় গত ২৬ জুলাই। পরবর্তীতে গত বুধবার গণভবনে স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্টিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরের চাওয়াকে পূরণ করে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতি নিদর্শনগুলো জাতীয় জাদুঘরের হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান করেন। সেই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বৃহস্পতিবার স্মৃতি জাদুঘর থেকে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতি নিদর্শনগুলো পৌঁছে যায় জাতীয় জাদুঘরে। আর শনিবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।