
বাগেরহাটে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষে সফল জিহাদ
বাগেরহাটে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করে সাড়া জাগিয়েছেন শেখ জিহাদ হোসেন (৫০) নামের এক কৃষক। কোন প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়া উৎপাদিত সবজি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষকৃত সবজি দিতে পেরে খুশি বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামের কৃষক শেখ জিহাদ হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি সবজি চাষ করি। সবজি চাষই আমার আয়ের একমাত্র উৎস। কিন্তু সবজি চাষ করতে আমাদের প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো। শুধু আমি নয়, স্থানীয় সবাই একই পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করত। কিন্তু সব সময় একটি বিষয় চিন্তা করতাম কিভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া সবজি চাষ করা যায়। ভাবতে ভাবতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্বতিতে নিরাপদ সবজি চাষ করা যায়। বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা ও জেনে শুনে গেল বছর কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই সবজি চাষের পরিকল্পনা করি। দেড় বিঘা (৭৮ শতক) জমিতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্বতিতে হাইব্রিড সুপার সুমি জাতের ঢেঁড়স চাষ করি। এবার ফলনও ভাল হয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে ১৫ মেট্রিকটন ঢেঁড়স উৎপাদনের আশা তার। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ কেজি ঢেঁড়স বিক্রি করছেন তিনি। ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ের এই জমি থেকে দুই লাখ টাকার ঢেড়স বিক্রির আশা করছেন তিনি।
এর বাইরে গতানুগতিক পদ্ধতিতে কিছু জমিতে বেগুন, কাকরোল, ডাটাশাক, লালশাকসহ নানা সবজি উৎপাদন করেছি। আশা করি আগামী বছর সব জমিতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্বতিতে নিরাপদ সবজি চাষ করতে পারব। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জিহাদ বলেন, এই পদ্ধতিতে পোকা-মাকড় তাড়ানোর জন্য কোন বিষ ব্যবহার করা হয় না। এর জন্য আলোর ফাঁদ, ডালপোতা ফাঁদ, হলুদ পেপার, সাদা পেপার ফাঁদ পাতা হয় সবজি ক্ষেতে। এছাড়া নিমপাতা, বেলপাতা ও মেগনির নির্জাস দিয়ে সবজি খেতকে পোকামাকড় মুক্ত করা হয়।
জিহাদের ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিক সাবেরা খাতুন বলেন, আমাদের ক্ষেতে কখনও কীটনাশক ব্যবহার করি না। এ জন্য একটু যতœ বেশি করতে হয়, এই আরকি। তারপরও মানুষ বিষমুক্ত সবজি ক্ষেতে পারছে। সবজি ক্রেতা রুহুল আমিন খান বলেন, এ বছর অনেকদিন ধরে জিহাদের ক্ষেত থেকে ঢেঁঢ়স কিনছি। একদিন দুই দিন পর পর এসে ঢেঁড়স কিনে নিয়ে যাই আমি। এই ঢেঁড়স বাজারের স্বাভাবিক ঢেঁড়সের থেকে বেশি সুস্বাদু ও নিরাপদ। শুধু রুহুল আমিন নয়, ওই অঞ্চলের অনেকেই এখন ঢেঁড়স ক্রয় করেন জিহাদের কাছ থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাগেরহাটের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। জিহাদ বিষমুক্ত ঢেঁড়স চাষের আগ্রহ পোষণ করলে, আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। তার বিষমুক্ত ঢেঁড়স সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও আমরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা নিয়েছি। অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও যাতে বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হন এজন্য আমরা কাজ করছি। ২০০৬ সালে পোশাক কারখানা থেকে চাকরি ছেড়ে বাড়ির পাশে অন্যের জমি লিজ নিয়ে সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন শেখ জিহাদ হোসেন। সফলতাও পেয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে শেখ জিহাদ হোসেন সবজি চাষে অবদান রাখায় সফল চাষী হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে পুরস্কার পান তিনি।