ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনী মাঠে নামুন, কেউ ভোট কেড়ে নেবে না

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৯ মে ২০২২

নির্বাচনী মাঠে নামুন, কেউ ভোট কেড়ে নেবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার আবার জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, বিএনপি আজ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, কিন্তু তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে তাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার নেই। কোন মুখে তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে? আর জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের জন্য আমরা এত কাজ করতে পেরেছি। বুধবার রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তানীদের পদলেহনকারীর দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত আছে। এটা সব থেকে দুঃখজনক। এখনও তারা বাংলাদেশে ভাল কিছু হলে ভাল চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভাল লাগে না। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির তো নেতৃত্বই নেই। তাদের সবই তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত দিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। কারণ নির্বাচনে পরাজিত হবে জেনেই তো তারা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। কলুষিত করতে চায়। আর যারা জ্ঞানী-গুণী আতেলরা উল্টা-পাল্টা কথা বলেন, তাদের বলব- দেশ চালানোর যদি ইচ্ছে থাকলে তাহলে মাঠে আসুন। ভোটে নামেন। কেউ ভোট কেড়ে নিবে না। আমরা ভোট কেড়ে নিতে জানি না। আমরা জগগণের জন্য কাজ করেছি, সেজন্যই জনগণ আমাদের ভোট দেবে। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি পেয়েছে, নৌকার ভোট দেয়ার কারণেই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ অর্থনৈতিক উন্নতি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দেয়ার কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। কাজেই এ মর্যাদা ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়তে হবে। ইনশাল্লাহ, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। অনুষ্ঠানে দুস্থ নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেয়া হয় এবং এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমগুলোর মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা-১০ এ ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ইলেকশন করেছিল, যে ইলেকশনের চিত্র সবার নিশ্চয়ই মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন হয়- যে ইলেকশন নিয়েই আন্দোলন করে আমরা খালেদা জিয়া সরকারকে উৎখাত করেছি। মিরপুর ইলেকশন- প্রত্যেকটা নির্বাচনের চিত্রই আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, ’৭৭ সালের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট, ’৭৮-এর রাষ্ট্রপতি এবং ’৭৯-এর সাধারণ নির্বাচন, ’৮১-এর নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনই আমাদের দেখা। পাশাপাশি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরে ধারাবাহিকভাবে যদি দেখি- প্রতিবারই ক্ষমতার বদল হয়েছে অস্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সেগুলো আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত এবং চিন্তা চেতনার বাস্তবায়ন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থার আধুনিক ও যুগোপযোগীকরণে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ইভিএম ব্যবস্থা বলবত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সবের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার আবার জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে। আর জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের জন্য আমরা কাজ করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও দেশ নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মিডিয়াতে ঢালাও সমালোচনারও উত্তর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কিছু বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী তারা অর্বাচীনের মতো কথা বলে কিভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন? মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি আমরা খুব ভুল করছি! বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে কেন? তাহলে কি তারা এখনও পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের পদলেহনকারী খোসামোদি-তোষামোদির দল। গালি-টালি দেই না। দেয়ার রুচিও নেই। কিন্তু একটু না বলেও পারি না। তিনি আরও বলেন, যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, পোড়ামাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল- সেই পাকিস্তানের পদলেহনকারীর দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত- এটা হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক। এখনও তারা বাংলাদেশের ভাল কিছু হলে তাদের ভাল লাগে না, ভাল চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভাল লাগে না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, পঁচাত্তর সালের পর থেকে দেশে প্রায় ১৯-২০টা ক্যু হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বহু লাশের খবর এখনও পায়নি। আমাদের বিমানবাহিনীর ৬শ’র ওপর অফিসার, সৈনিক ও অন্য কর্মচারীদের হত্যা করা হয়েছিল। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত ও নিহত হয়েছে। পঁচাত্তরের পরে ধারাবাহিকভাবে যদি দেখি- প্রতিবারই ক্ষমতার বদল হয়েছে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সময়ে জেল-জুলুম সহ্য করা এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এরপরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। সেদিন যদি দেশে ফিরে না আসতাম আর জেল না খাটতাম তাহলে হয়ত বাংলাদেশের জনগণের এত ভোট পেতাম না। এরপর আজ তিনবার পরপর সরকারে আছি। তিনি আরও বলেন, ইতিহাস তো মানুষ ভুলে যায়। আমিই তো অনেক কথা ভুলে যাচ্ছি। আজ ৪১ বছর। এই সময়ের চড়াই-উতরাই পার হয়েই কিন্তু এখানে আসতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে না পারলে দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয় না। উন্নতিও করা যায় না। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছিলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তার অধিকাংশই নষ্ট করে দেয়। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ! কেন? সেখানে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে, বিনা পয়সায় ওষুধ পাচ্ছে। এই সেবা যারা পাচ্ছে তারা তো নৌকায় ভোট দেবে। ধানের শীষে ভোট দেবে না। এটা ছিল খালেদা জিয়ার যুক্তি। দিল বন্ধ করে। একটি বাড়ি একটি খামার মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করেছিলাম, সেখানে কমিশন খেতে গিয়ে সেগুলো প্রায় বন্ধ করে দেয়। এরপর আবার যখন আমরা ক্ষমতায় আসি সেই কাজগুলো শুরু করি। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গঠনের পরেও আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে। পেট্রোল বোমা মারে। আমার রাস্তাঘাট বানাই তারা সেগুলো কাটে। আমরা বৃক্ষরোপণ করি, তারা গাছ কাটে। এইভাবে দেশকে তারা বারবার ধ্বংসের দিকে নেয়ার চেষ্টা করেছে। সরকার উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের ডাকে জনগণ সারা দেয়নি। তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল- কোনদিন রাজনীতি করবে না। সেটা করেই দেশ ছেড়ে চলে যায়। তিনি বলেন, এতিমের অর্থ আত্মসাত করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। যা হোক কারাগার থেকে এখন বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি অসুস্থ সেজন্য। এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বারবার, কিন্তু তাঁকেই আমি এ করুণা ভিক্ষা দিয়েছি, সে এখন বাসায় থাকতে পারছেন। এটা নির্বাহী আদেশেই দেয়া হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির আমলের নির্বাচনের ইতিহাস এতই কলুষিত যে, তাদের তো এ নিয়ে কথা বলার কোন অধিকারই নেই। নির্বাচনে যাদের আমলে এত কলুষিত তাদের মুখেই আজ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি, সব আমাদেরই সিদ্ধান্ত। কাজেই এটা (নির্বাচন) নিয়ে তো তাদের প্রশ্ন তোলার অর্থই হয় না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। আর সেই শক্তিটা আছে বলেই, জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেল। এর মধ্যে আমাদের কিছু নতুন আতেল জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিল- আমরা যে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করেছি, সেটা নাকি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর! আমার প্রশ্ন হচ্ছে- পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র এটা হচ্ছে সব থেকে পরিবেশবান্ধব। তেল ও গ্যাসভিক্তিক কেন্দ্র আমরা করি। কিন্তু গ্যাস তো চিরদিন থাকে না। যদি কোনদিন এমন হয় আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। তখন এই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রই তো আমাদের বিদ্যুত দেবে। আর এটা সব থেকে পরিবেশবান্ধব একটা বিদ্যুত কেন্দ্র। দেশের শতভাগ মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট শুরু করলাম অনেকে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু আমরা যে বিদ্যুত দিয়েছে, সেটা ব্যবহার করেই আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ করেছিল। আর আজ সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়েই তারা আমাদের সমালোচনা করে। তিনি বলেন, তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে এটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি। খালেদা জিয়ার সময়ে কথা বলার কোন সুযোগও ছিল না, অধিকারও ছিল না। বেসরকারী টেলিভিশন এত দিয়ে দিয়েছি, সারা দিন-রাত টকশো করে। আমি মাঝে মধ্যে বলি- এত টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথাও বলেন। আর কত টক কথা বলবেন? কাজেই টকশো তারা করেই যাচ্ছে, কেউ তাদের গলা চেপে ধরেনি। মুখও চেপে ধরেনি। তারা কথা বলেই যাচ্ছে। আবার সব কথা বলার শেষে বলে- তাদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপির এক নেতা তো মাইক মুখে লাগিয়েই আছে। সারাদিন কথা বলেই যাচ্ছে। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। চিকিৎসা করে সে আবার কথা বলছে। কথা তো বন্ধ হচ্ছে না। এখন তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয় সেই দোষটা কাদের? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ হিসাব দেখালেন তাকে আমি বলব- তিনি কি এটা প্রকৃতপক্ষে জেনেই বলছেন, নাকি না জেনে বলছেন? আমি তাঁর জ্ঞান নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলব না। কারণ তারা অনেক ভাল লেখাপড়া জানে। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে কিন্তু তারা দেখে না। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা হচ্ছে পদ্মা সেতু। এর অর্থ বন্ধ করালেন ড. ইউনুস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। যা আরও উচ্চমানের। কিন্তু সে এমডিই থাকবে। সেটা সে ছাড়বে না। কিন্তু বয়সে কুলায় না। ড. ইউনুস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট তো আর তার বয়স তো ১০ বছর কমিয়ে দিতে পারে না। মামলা সে হেরে যায়। কিন্তু এর প্রতিহিংসা নেয়। আমরা যেটা শুনেছি, ড. ইউনুস, মাহফুজ আনাম, তারা আমেরিকায় চলে যায়, সেখাকার ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারি ক্লিনটনের কাছে ইমেল পাঠায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেনট ছিলেন একেবারে শেষ কর্মদিবসে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। এটা একদিকে সাপেবর হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতুর কাজ তো হয়ে গেছে, এটা নিয়ে সমালোচনা করতে পারছে না। তাই তারা রেল লাইন নিয়ে সমালোচনা করছে। আমার মনে হয় আমাদের সকলের উনাকে চিনে রাখা উচিত। রেল লাইন যখন চালু হবে তখন উনাকে একদিন চড়ানো উচিত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিল- জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। ওখানে চড়লে নাকি ভেঙ্গে পড়বে। তার সঙ্গে তার দোসররাও বলেছে। এখন তাদের কি করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে ঠুস করে ফেলে দেয়া উচিত। আর যিনি একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছে, তাকেও পদ্মা সেতুতে দুটি চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত। একটু পদ্মা নদীতে চুবানি দিয়ে আবার সেতুতে তুলে দেয়া উচিত। তাহলেই যদি এদের শিক্ষা হয়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সেদিন যখন এয়ারপোর্টে নামি, হাজার হাজার মানুষ। ৩০ জুলাই যখন ঢাকা ছেড়ে যাই, শেখ কামাল, জামাল ও তাদের স্ত্রী, রাসেল সবাই এয়ারপোর্টে ছিল। আর ১৭ মে যখন নেমে আসি, আমার আপনজনদের কাউকেই পাইনি। তবে পেয়েছিলাম অগণিত বাংলাদেশের মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তাঁদের মাঝেই খুঁজে পেয়েছিলাম হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ, আস্থা-বিশ্বাসের ঠিকানা। নিজের ব্যথা-বেদনা শোক সবকিছু বুকে নিয়ে ফিরে এসেছিলাম, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য। করোনার কারণে দুই বছর বাইরের কর্মসূচীতে অংশ নিতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশও করেন প্রধানমন্ত্রী। এক ঘণ্টাব্যাপী দেয়া বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, অনেক দিন পর মন খুলে কথা বললাম। এ সময় তিনি হেসে বলেন, ‘আসলে করোনাভাইরাস বন্দী করে রেখে দিয়েছে আমাকে। ২০০৭ সালে ছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে বন্দী। এখন আমি নিজের হাতে নিজে বন্দী।’ এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নেতাকর্মীদের বৃক্ষ রোপণেরও নির্দেশ দেন।
×