ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁকোই ভরসা

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

সাঁকোই ভরসা

সেতু নেই, তাই বাঁশের সাঁকোই ভরসা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন এ সাঁকো দিয়ে। এটি ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারোমাসিয়া নদীর ওপর নড়বড়ে সাঁকোর অবস্থা। প্রতিদিন ছয়টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন বাঁশের সাঁকো দিয়ে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খুদে শিক্ষার্থী ও রোগীরা। দীর্ঘ দিনেও সেতু না হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি। আর দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। তা ছাড়াও এ অঞ্চলের চাষাবাদ প্রচুর হলেও সময়মতো যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় পাচ্ছে না ফসলের ন্যায্যমূল্য। সেখানে সেতু নিমার্ণ করা হলে পাল্টে যাবে ৩০ হাজার মানুষের জীবন যাত্রারমান। জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারোমাসিয়া নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছে গ্রামের মানুষ। এই সাঁকো দিয়ে ছয়টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সাঁকোর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পশ্চিম কান্তাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোরুকমন্ডপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফয়জুল উলুম মাদ্রাসা, গোরুকমন্ডপ কমিউনিটি ক্লিনিক। পূর্ব পাশে রয়েছে পশ্চিম ফুলমতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালার হা আদর্শ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। দু’পান্তের গ্রামগুলোর যোগাযোগের সংযোগস্থল হওয়ায় এ সাঁকো দিয়ে হাজারও মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এতে হরহামেশাই ঘটে দুর্ঘটনা। রোগী থাকলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষদের ভোটের সময় জন প্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। এমন অভিযোগ দু’পারে কান্তাপাড়া, ঝাউকুটি চরগোরুক, পশ্চিম ফুলমতি, জামাকুটি, কলাবাগা গ্রামে মানুষের। শুধুমাত্র একটি সেতুর কারণে ওই গ্রামগুলোতে ছোঁয়া লাগেনি ডিজিটাল যুগের হাওয়া। ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভাবনা থাকলেও প্রধান বাধা এ বারোমাসিয়া ইন্দুর ঘাটের বাঁশের সাঁকো। নিজের চাহিদামতে চাঁদা সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সে সাঁকোর দু’পারের মানুষের প্রধান ভরসা। শুকনো মৌসুমে হাসি খেলি লেখাপড়ার জন্য স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী পারাপার হলেও বর্ষা মৌসুমে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে তাদের। সময়মতো পারাপার করতে না পারায় ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েন অনেক সময়। নাওডাঙ্গা স্কুল এ্যান্ড কলেজ দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ আলী বলে, ‘এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। একবার পা পিছলে পড়ে আহত হয়েছি। এখন সাবধানে সাঁকোতে উঠে চলাচল করছি। এখানে একটা ব্রিজ দিলে ভালই হতো। পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মীর হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে চল্লিশ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন, অসুস্থদের অবস্থা বলার মতো নয়। বেশি সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়ে। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়ে ভোট নেন। ভোট পার হলে তারা আর খোঁজ রাখেন না। স্বেচ্ছায় সাঁকো মেরামতকারী শাহজামাল আলী জানান ৭ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোটি প্রতিদিন মেরামত করে আসছি। নাওডাঙ্গা স্কুল এ্যান্ড কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। তা ছাড়াও কৃষকদের পণ্য আনা-নেয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাছেন আলী এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ অতি প্রয়োজন। অনেক আগে থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত কাগজপত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আসিক ইকবাল রাজিব বলেন, বারোমাসিয়া নদীর ওপর ৩০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম
×