ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লবিস্ট নিয়োগের এত টাকা কোথা থেকে এলো

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

লবিস্ট নিয়োগের এত টাকা কোথা থেকে এলো

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশের সর্বনাশ করতে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ করে বিপুল অর্থ খরচ করা প্রতিটি পাই পাই পয়সার হিসাব নেয়া হবে জানিয়ে বলেছেন, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি যাদের পছন্দ নয় তারাই শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের সর্বনাশ করছে। বাংলাদেশটাকে ধ্বংস এবং মিথ্যা অপবাদ আর অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। শত শত কোটি টাকার এত বিপুল অর্থ কোথায় থেকে এলো, কীভাবে বিদেশে গেল? এর জবাব ও ব্যাখ্যা বিএনপিকে দিতে হবে। আর দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে লবিস্ট নিয়োগের খরচের পাই পাই হিসাব নেয়া হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা এবং অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে আরও বলেন, ক্ষমতায় থেকে বিএনপি দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। এদের কোন দেশপ্রেম নেই, দেশের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করতে, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নানা চক্রান্ত করছে। বিএনপি দেশকে ধ্বংস করা, লুটপাট করা, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু দেশের জনগণের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে যে, কোন অসত্য অপ্রপ্রচার ও মিথ্যাচারে দেশের জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শেষ দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রধান হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, মোকাব্বির খান, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপর স্পীকার রাষ্ট্রপতির সংসদ অধিবেশন সমাপ্তির আদেশটি পাঠ করে শোনান। নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে দেশের জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করা, কেড়ে নেয়া নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তার বড় প্রমাণ। বিএনপি এই নির্বাচনেও নানা খেলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষাসহ সব কিছু আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল। আওয়ামী লীগের আমলেই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত থাকে। আমরা সংসদে ইসি গঠন বিল পাস করলাম। এতে জনগণের ভোট সুরক্ষিত হলো এবং নির্বাচনের আরেকটা ধাপ আমরা এগিয়ে গেলাম। গণতন্ত্রকে আরও আমরা শক্তিশালী করলাম। জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। র‌্যাবের কিছু উর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, যারা দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ দমনে অত্যন্ত সফল ও পারদর্শিতা দেখিয়েছে, অভিজ্ঞতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে- তারা এত খারাপ হয়ে গেল কেন? আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষ দেই না। দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস করতে তারা শত শত কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। এত বিপুল সংখ্যক অর্থ তারা কোথায় পেল। আর এটা তো বৈদেশিক মুদ্রা। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বাঁচানো, নির্বাচনকে বানচাল ও প্রশ্নবিদ্ধ করা, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিএনপি শত শত কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে, কোন ভাল কাজের জন্য নয়। এত অর্থ বিএনপি কোথায় থেকে পেল, কীভাবে সেখানে গেল- এর জবাব একদিন বিএনপিকে দিতেই হবে। লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ এবং এর পেছনে ব্যয় সংক্রান্ত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। এই যে তার তালিকা। এটা আমি বক্তৃতার অংশ হিসেবে প্রসিডিংসে রেখে যেতে চাই। কত লাখ ডলার এই বিএনপি খরচ করেছে আমার প্রশ্ন। এই অর্থ কোথা থেকে তারা পেল? এটা তো বৈদেশিক মুদ্রা। বিএনপি এই বৈদেশিক মুদ্রা কোথা থেকে পেয়েছে। কীভাবে খরচ করেছে? কীভাবে এই লবিস্ট তারা এভাবে রেখেছে? লবিস্ট কিসের জন্য? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য। নির্বাচন বানচাল করার জন্য। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। জঙ্গীদের রক্ষা করার জন্য। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাধা দেয়ার জন্য। কোন ভাল কাজের জন্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের র‌্যাবের কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাঙ্কশন দিয়েছে। যদি বলি কাদের ওপর? এখন আমাদের বর্তমান আইজিপি, তখন র‌্যাবের ডিজি ছিলেন। হোলি আর্টিজানে যখন সন্ত্রাসীরা আক্রমন করে, মানুষ হত্যা করে। নৃশংস দৃশ্য! তারা কেবল হত্যাই করেনি, ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মানুষ মেরেছে। হত্যার পরে বাবুর্চিকে জিম্মি করে বড় বড় চিংড়ি মাছ থেকে শুরু করে সব রান্ন করে খেয়েছে। কী করম বিকৃতমনা ছিল তারা। তিনি বলেন, পুলিশের দুজন অফিসার সেখানে ছুটে গেলে তাদের গুলি ও বোমা দিয়ে মেরে ফেলে। এরপর আমরা পদক্ষেপ নেই। সেই সময় আমেরিকার যিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি টুইট করেছিলেন- হলি আর্টিজেনের সন্ত্রাসী হামলা বাংলাদেশ একা সমাধান করতে পারবে না। তিনি বলেন, তখন রোজার দিন ছিল। সারারাত আমরা কাজ করেছি। সেহেরির সময় পর্যন্ত আমি বৈঠক করি। সবাইকে নিয়ে মিটিং করি। কী করা হবে। কীভাবে অপারেশন চালানো হবে। তার পূর্ণ পরিকল্পনা করেছি। পরের দিন সকাল নয়টার মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফলতার সঙ্গে তাদের আক্রমণ মোকাবেলা করি। এর পরপরই আমেরিকার এ্যাম্বাসেডর তাঁর টুইটটি সরিয়ে ফেলেন। এরপর বাংলাদেশে আর সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও বলেন, আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করেছি। যেটা বিএনপির সৃষ্টি। তাদের প্রকাশ্য মদদ দিয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- যাদের তারা (যুক্তরাষ্ট্র) স্যাঙ্কশন দিলো তাদের অধিকাংশ এই সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখেছিল। তাহলে এরা কেন আমেরিকার কাছে এত খারাপ হলো? সব থেকে ভাল ভাল অফিসার যারা, ওই অপারেশনে তারা ছিল। আমার মনে হয় যারা সন্ত্রাস দমনে সফল, যারা দেশটা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে রক্ষা করতে পেরেছে, যারা সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। সাধারণ মানুষের মানবাধিকার সুসংহত করেছে তাদের ওপরেই যেন আমেরিকার রাগ। আমি আমেরিকাকে দোষ দেই না। ঘরের ইঁদুর বাঁধ কাটলে কাকে দোষ দেব? অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার হত্যাকা-ের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের তখনকার সংসদ সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল। সেই হত্যার সঙ্গেও বিএনপি জড়িত সেটাও বেরিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এর বিচারের কাজটি বারবার বাধা দিচ্ছে তার পরিবার থেকে। যখনই বিচারের কাজটি শুরু হয় ওমনি তার পরিবার একটা বাধা দিয়ে রাখে। কেন ঠিক জানি না। শুধু তাই নয়, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বিএনপি আমাদের ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়নের অভিযোগ নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর প্রস্তুতি আগেই নেয়া ছিল। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের সকলকে ডেকেছিলেন তখনই তিনি বলেছিলেন, আমাদেরও প্রস্তাব ছিল। অনেক দিন থেকে মোটামুটি প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যখন ডায়ালগ করতে গেলাম, তখন তিনি বললেন, বিলটা তাড়াতাড়ি পাস করে দিতে। তিনি চান এই বিলের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এবং প্রধান কমিশনার এবং কমিশনাররা নির্বাচিত হোক। আমরা বিলটি সংসদে নিয়ে আসলাম। কিন্তু প্রস্তুতি তো আমাদের বহু আগে থেকে ছিল। অন্য কোন দল করেনি। আওয়ামী লীগ আবার করল। এতে জনগণের ভোট সুরক্ষিত হলো এবং নির্বাচনের আরেকটা ধাপ আমরা এগিয়ে গেলাম। গণতন্ত্রকে আরও আমরা শক্তিশালী করলাম। জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সরকারপ্রধান বলেন, এই পার্লামেন্টে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিলটা পাস করতে পেরেছি। যে বিলের মধ্য দিয়ে আজকে আমাদের বিরোধী দল থেকে উনারা বললেন কিছুই জানেন না। কিন্তু তারা যতগুলো সংশোধনী এনেছে এই বিলে, ২২টা সংশোধনী বিরোধী দলের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে জাতীয় পার্টির সংশোধনী, বিএনপির সংশোধনী, জাসদের সংশোধনী আমাদের ওয়ার্কার্স পার্টির সংশোধনী সকলের সংশোধনী আমরা গ্রহণ করেছি। তাতে এই বিল আর সরকারী বিল না এটা বিরোধী দলে তৈরি করা বিল হয়ে গেছে। একটা বিলে যদি ২২টা সংশোধনী গ্রহণ করা হয় অধিকাংশ হয়ে গেল বিরোধী দলের। সবার হয়ে গেল। জাতীয় পার্টির, বিএনপির, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম সবার। সকলে বক্তব্য দিয়েছেন। বিলটি পাস করার জন্য স্পীকারসহ সকল সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘আমার চিন্তা ছিল দেশটাকে পিছিয়ে যেতে দেব না’- মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা রিফিউজি হিসেবে ৬ বছর বাস করেছি আমরা দুই বোন। নাম পরিচয়টাও ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল- সুযোগ পেলে দেশকে গড়ে তুলব। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে দেশে ফিরি। অনেক বাধাবিপত্তি, অনেক অপপ্রচার শুনতে হয়েছে। লক্ষ্য স্থির করে চলেছি বলেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ সারাবিশ্বে আজ উন্নয়নের রোলমডেল। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় আমেরিকার আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কিন্তু আমাদের এখানে কেউ দারিদ্র্যসীমার নিচে যাইনি। বরং দারিদ্র্য বিমোচনে বিএনপির আমলের ৪০ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বিশ্বাস করি আরো আমরা কমাতে পারব। যদিও করোনা আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, সীমিত অর্থনীতির মধ্যেও আমরা বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা করাচ্ছি। প্রায় ২৫-২৭ হাজার টাকা লাগে এক একটি করোনার পরীক্ষার জন্য। পাশাপাশি বিনা পয়সায় আমরা টিকাও দিচ্ছি। করোনার ভ্যাকসিন নিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশবাসীকে আহ্বান জানানো যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারা ভ্যাকসিন নেবেন। ভ্যাকসিনের কোন অভাব হবে না, কোন অসুবিধা হবে না। আমরা ভ্যাকসিনের জন্য আলাদা বাজেট রেখেছি। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে মারা যাচ্ছে না। সবাই টিকা নেবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। যাতে ওমিক্রন থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারি। সরকারের এখন ২০ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে বোরো মৌসুম আসছে। আমাদের খাদ্যের কোন অভাব হবে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর নানা ধরনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কিছু কিছু সিন্ডিকেট তৈরি হয়। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে। আর আমাদের বিরোধী দল তো কোন উন্নতিই দেখে না। অন্য নেতারা যা বলেন ॥ ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও জিয়াউর রহমান যাদের নিয়ে দল গঠন করেছিলেন তারা এখনও বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। বিএনপি সাংবিধানিক গণতন্ত্র চায় না। তাদের উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা, গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা। বিএনপি আজ পরাজিত বিদেশী শক্তিকে আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। কোন পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। অপকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মানুষের জীবন বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন অপর সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সেই অঙ্গীকারের পথ ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণেও সেটাই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ আজ এ সাফল্য ভোগ করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের এ উন্নয়ন বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয় হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালেও দেশের অর্থনৈতিক চাকা চালু রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরে চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন বাস্তব। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী দক্ষ নেতৃত্বে সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণের সংবিধানে উল্লেখিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ পাঁচটি মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। গত এক যুগের উন্নয়ন অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের দ্বারপ্রান্তে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশ বিশ্বে উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, তারা সকাল এক কথা, বিকেলে এক কথা বলেন। সকালে সর্বসম্মতভাবে বিল পাস হলো, আর এখন বিলের বিরুদ্ধে বলছেন বিএনপির সদস্যরা। তারা সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপি চায় আমাদের সঙ্গে (জাতীয় পার্টি) আসতে, কিন্তু জীবন থেকে তা হবে না। বিএনপি সরকারের সময় সত্যে কথা বলায় প্রতিহিংসা থেকে আমিও রেহাই পাইনি। আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং আমার বাড়ি পর্যন্ত দখল করা হয়েছিল। সেই মামলা এখনও রয়েছে। বিএনপির নেতাদের মুখে মানবাধিকারের কথা মানায় না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় দেশের মানুষের ভাতের চাহিদাপূরণ হয়েছে। এখন পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। আগে আমরা শুনতাম সোভিয়েত ইউনিয়নে বৃষ্টি হলে এ দেশের কমিউনিস্টরা ছাতা ধরত। এখন আমেরিকায় বৃষ্টি হলে বিএনপি দেশে ছাতা তুলতে দেরি করতে রাজি নয়। তিনি আরও বলেন, আপনারা র‌্যাব নিয়ে কথা বলেন, গুম, ক্রসফায়ার নিয়ে কথা বলে। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। আপনাদের নেতার (জিয়াউর রহমান) শাসনামলে সেনাবাহিনীতে ১৯ বার ক্যু হয়েছে। হাজার হাজার আর্মি অফিসার খুন হয়েছে। আপনাদের মুখে মানবাধিকার শোভা পায় না। আইনশৃঙ্খলা রাক্ষায় র‌্যাব একটি নির্ভরতার প্রতিষ্ঠান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান তিনি। চলতি বছর রাজনীতির জন্য সঙ্কটকাল হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মুহম্মদ মনসুর আহমেদ। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর বলেন, ২০২২ সাল ওমিক্রনের জন্য যেমন অত্যন্ত সঙ্কটকাল, আমি মনে করি রাজনীতির জন্যও হবে একটি সঙ্কটকাল। সংসদনেত্রী, এই বিষয়টি আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে রাজনীতিকে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পরীমনি, খুকুমনি আর রুকুমনিদের কাহিনী পত্রিকায় পড়লে বাংলাদেশের বর্তমান নতুন প্রজন্ম হতাশ হয়। সমাজ দূষিত করতে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে পরীমনি আর খুকুমনিদের। এটি একটি ষড়যন্ত্র। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, র‌্যাব যদি একদিন বলে যে রাতে আমরা বের হব না, র‌্যাব ক্যাম্পে থাকবে, নামাজ-রোজা করবে তাহলে ওই দিন এই দেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। কোন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী তাকে ধ্বংস করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই দেশে আমরা উন্নয়ন চাই। মানুষের কল্যাণে যদি রাজনীতি করতে না পারি তাহলে ওই রাজনীতির কোন অর্থ নেই। যতদিন পদ্মা ব্রিজ থাকবে, মেট্রোরেল থাকবে ততদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। সকল দলের অংশগ্রহণে ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু’ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপ শুরুর অনুরোধ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ। ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীকে বলব আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনাকে আলোচনার টেবিলের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। আপনি আলোচনা শুরু করেন। নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করা যায়। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এর কোন বিকল্প নেই।
×