স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়লাভ করেছেন তার ব্যক্তিগত ইমেজ ও দলীয় ইমেজের কারণে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক অভিযোগ আছে, তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সব অভিযোগ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে আনন্দঘন পরিবেশে, নিরাপদ ব্যবস্থাপনায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন হওয়া সম্ভব। শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন : জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত ও রাশেদ খান মেনন।
ইভিএম প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তৈমুর সাহেব অভিযোগ করেছেন ইভিএমে কারচুপি হয়েছে- আমি এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করি না। তবে ইভিএমের অনেক সমস্যা আছে। যেমন সেলিনা হায়াৎ আইভীও বললেন যে, ইভিএমের কারণে তার অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেনি।
নির্বাচনের দিন কেন হুট করে বুথ সংখ্যা কমে গেল সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আর আরেকটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, নারীদের কেন্দ্র ভবনের চারতলায়; এটাতে আমার যথাযথ আপত্তি আছে। কারণ, যদি একতলায় ঘর ফাঁকা থাকে তাহলে কেন চারতলায় দিতে হবে তা আমার বোধগম্য হয় না। সর্বশেষ একটি বিষয় সেটি হচ্ছে সমন্বয়। আসলে আমাদের সমন্বয়ের অনেক অভাব রয়েছে। সরকারপ্রধান এটি জানেন। আমিও বেশ কয়েকটি মিটিংয়ে তাকে বলেছি। সমন্বয়ের অভাবের কথা মেয়র যেটা বললেন যে সমন্বয়ের অভাবে ঠিকমতো কাজ করা যায় না। আসলে আমি তার কথার সঙ্গে একমত। কারণ, আমাদের মিটিংগুলোতে অনেক কর্তাব্যক্তি উপস্থিত থাকেন না, থাকলেও এমন উচ্চতার কর্তাব্যক্তিরা থাকেন তারা হয়তবা ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না অথবা কোন কিছু যুক্ত করতে পারেন না।
তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতি অবিচার হয়েছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নাসিক নির্বাচনের পর আপনারা দেখেছেন যে তারা তৈমুর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করেছে। তারা কিন্তু চাইলে তাকে নির্বাচনের আগে বহিষ্কার করতে পারত। কিন্তু করেনি। কারণ, যদি কোনভাবে নির্বাচনে তিনি জিততেন তাহলে তাকে তারা দলে ফেরাতেন। আমার কাছে মনে হয়, এটি তার প্রতি অবিচার হয়েছে। একটা বড় দল হিসেবে তা করা উচিত হয়নি, একটা বড় দলের কাছে এটা আশা করা যায় না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, এবারের নির্বাচন কঠিন ছিল। তিনটি মেয়র নির্বাচন করেছি। তিন নির্বাচনের ফ্লেভার তিন রকম ছিল। কোন নির্বাচনেই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিলাম না। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নির্বাচন করেছি। যদিও আমার দল আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল, কিন্তু প্রতিবারই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে সাধারণ জনগণকে আস্থায় এনে নির্বাচনে জিততে হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গটি ইঙ্গিত করে আইভী জানান, তার কোন বাহিনী নেই। অনেক বাধা এসেছে। এমনকি তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। এর পরও কখনই বাহিনী তৈরি করেননি। তিনি বলেন, আমার আস্থা আমার জনগণ। আমার লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। তাই সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করেছি। আমি কখনও কারো কাছ থেকে বেনিফিট নেইনি। এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এই ভোটে আপত্তি জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী তৈমুর আলম।
ইভিএমে ভোট কম পড়েছে বলে জানালেন আইভী। তিনি বলেন, ইভিএমের কারণে ভোট কমেছে, এটা সত্য। এমন না যে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। আমার অসংখ্য ভোটার ফেরত গেছে। দেশে সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র বলেন, আমি এবার একটি বিষয় দেখলাম, নারী ভোটারদের তিন-চার তলায় নেয়া হয়েছে। কী কারণে নেয়া হলো, আমি জানি না। অনেক ভোটকেন্দ্রে বুথ কমিয়ে দেয়া হয়েছে রহস্যজনকভাবে। কেন করা হলো আমি জানি না। আরও কিছু কারণ আছে, যা আমি এখানে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি না। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরে ইন্টারনাল কিছু সমস্যা আছে- এটা সবার জানা। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই নির্বাচন করতে হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা প্রসঙ্গেও কথা বলেন আইভী। তিনি বলেন, আসলে সিটি কর্পোরেশন চালানো কঠিন। রাজউক আমার নাকের ডগায় অনেক কিছু করছে। দূষণ রোধে আমার কোন কাজ নেই। শিশুবান্ধব খেলার মাঠ করতে দিচ্ছে না আমাকে। মিডিয়াতে আমাকে ভূমিদস্যু বানানো হয়েছে। অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড সরাতে দিচ্ছে না। রেল মন্ত্রণালয়, রোডস এ্যান্ড হাইওয়ে কাজ করছে আমাকে না জানিয়েই। এসব হচ্ছে সমন্বয় না থাকার ফলে। আমার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মিটিং ডাকলে কমিটির সদস্যরা আসে না। ফলে এই কমিটি নামসর্বস্ব কমিটিতে পরিণত হয়েছে। সিটি গবর্ন্যান্স না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার কখনও শক্তিশালী হবে না। নিজের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অপপ্রচারও হচ্ছে জানিয়ে আইভী বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে।