ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের সায় মেলেনি

উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব ডিসিদের

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২২

উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব ডিসিদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর করে দেয়ার বিষয়টি টেকসই ও জমি সাশ্রয়ের জন্য বহুতল ভবন করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। এছাড়া তারা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু এতে সরকারের সায় মেলেনি। স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে ডিসিদের পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়াতে ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলন শেষে মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টানা দুই বছর পর মঙ্গলবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আপ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর করে দিচ্ছে সরকার। তবে এ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নানান অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই ও জমি সাশ্রয়ের জন্য বহুতল ভবন করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তবে ডিসিদের এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ডিসিরা বহুতল ভবন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বহুতল ভবন হলে সেটা স্থায়ী হবে। তবে বহুতল ভবন করতে অনেক টাকা প্রয়োজন। এতে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রত্যাশা, মুজিববর্ষে কেউ ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না, সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্য এটা করার সুযোগ নেই। মুখ্য সচিব বলেন, বহুতল ভবন হলে তাদের সেখানে ৫০-১০০ বছর থাকতে হবে। তবে আমরা চাই, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে উত্তরণ করতে পারবেন। বহুতল ভবন হলে যেটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, ডিসিরা আরও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন, যেগুলো বাস্তব তা গ্রহণ করা হবে। যেগুলো বাস্তবসম্মত নয়, সেগুলো তাদের বুঝিয়ে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে ডিসিরা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, এমন কোন বিষয় পাইনি। তবে করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সমন্বয় করে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেটা নিয়ে আমি গর্বিত। স্থানীয় সরকারের আয় ও সক্ষমতা বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ ॥ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়াতে ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন, কিছু কিছু প্রশ্ন এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করতে কী কী ব্যবস্থাপনা হাতে নেয়া যায় সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির কোন রূপরেখা ডিসিদের দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করেছি। পরিষ্কার করে বলেছিÑ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়াতে হবে, তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কথা এসেছে তাদের আরও লোকবল লাগবে। সেসব লোকবলের জন্য তাদের আয় বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাজুল ইসলাম বলেন, পৌরসভাকে শক্তিশালী করা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু সমস্যা আছে, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। রাষ্ট্রের সব জায়গা থেকে সমভাবে আয়বণ্টনের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় অতিরিক্ত আয় হয়, কোন কোন জায়গায় কম আয় হয়। সেখানে যাতে ভর্তুকি দেয়া যায় সে বিষয়ে কথা হয়েছে। এসব বিষয় নিষ্পত্তির জন্য বলা হয়েছে। ডিসিরা কোন সমস্যার কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সব জায়গায় সমস্যা একই রকম হয়, সেটি বলা যাবে না। অনেক জায়গায় ইউএনও-চেয়ারম্যান ভালভাবে কাজ করছেন। কোথাও কোথাও সমস্যা হয়। যেখানে যেখানে জটিলতা আছে সেখানে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, আমি নিজেও গুরুত্ব দিয়েছি। জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক সবার প্রয়োজন আছে। কৃষক, রিক্সাওয়ালাকেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। অন্যকে মর্যাদা দিলে নিজের মর্যাদা আহরণে সমস্যা হবে না। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ডিসিরা কোন দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, দেশটা পরিচালিত হয় রাজনীতিবিদদের দ্বারা। রাজনীতিতে নীতি প্রণয়ন করা, আইন প্রণয়ন করা, জনগণের অধিকার আদায় করা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অধিকার আদায়সহ সবার জন্যই রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতির সঙ্গে সেখানে কোন দ্বন্দ্ব নেই। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে রাষ্ট্র সেটি সমাধান করবে, আমরাও এ ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসময় অন্যদের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প তদারকিতে কমিটি চান ডিসিরা, সায় নেই সরকারের ॥ স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পক্ষ থেকে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হলেও তাতে সায় দেয়নি সরকার। কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। দিনের প্রথম অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে অংশ নেন তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে না ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এমন কথা জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সে কারণে এখনই শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান বন্ধ রাখা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে বন্ধ রেখে অনলাইন ক্লাস-এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে।
×