ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় নুতন বছরের শুরুতে পরিযায়ী পাখির পদচারণায় মুখরিত জবই বিল

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

নওগাঁয় নুতন বছরের শুরুতে পরিযায়ী পাখির পদচারণায় মুখরিত জবই বিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ শীত এবং নুতন বছরের শুরুতে সীমান্ত ঘেঁষা নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে শত শত পরিযায়ী পাখির আগমনে সারা বিল এলাকা এখন পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন অতিথি পাখির আগমন বেড়েই চলেছে। পাখি প্রেমীদের আগমনও ঘটছে সারা বিল এলাকাজুড়ে। সারা দিন কেউ পাখপাখালি দেখেই কাটাচ্ছে আবার কেউ কেউ অত্যাধুনিক ক্যামারা দ্বারা ছবি তুলতেই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন, এমনই দৃশ্য দেখা গেছে সম্প্রতি বিল এলাকায় গিয়ে। অতীতে কচুরিপানায় সারা বিল ঢেকে থাকায় সুদুর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা হতে প্রায় সারা বছর অতিথি পাখি সহ বিভিন্ন জাতের পাখ-পাখালিতে ভরপুর থাকত এই বিল এলাকা। কালের ক্রমে দেশ বিভিন্ন শাসকের শাসনামলে জাল যার জলা তার নীতি অবলম্বন করায় একসময় বিলের সকল ঐতিহ্য হারিয়ে যায়। বিলের সকল কচুরিপানা বিলুপ্ত ও বিলে ধানের চাষাবাদ শুরু হওয়ায় পাখিরাও হারিয় যায়। বিগত কয়েক বছর যাবত বিলটি একেবারে পাখি শূন্য অবস্থায় থাকে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামল শুরু হওয়ার পর জাল যার জলা তার নীতিকে বাতিল করে বিলটিকে একটি বৃহৎ মৎস্য প্রকল্পের আওতায় এনে মৎস্যচাষ শুরু হয়। এর পর বিল পাড়ের কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা তৈরী করে বিলে পাখি সংরক্ষনের কাজ শুরু করে। ্এর পর ফেডারেশন (বিবিসিএফ) এর পরামর্শক্রমে ঐতিহ্যবাহী এই জবই বিলে গত ২০১৯ সাল থেকে এই বিলে অবস্থানকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জরিপ শুরু করে। তাদের জরিপ থেকে ২০১৯ সালে ৫হাজার ৫শ’ ৯৩টি, ২০২০সালে ৭হাজার ৬শ’ ৮৩টি এবং ২০২১সালে ৯হাজার ৭শ’১২টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অবস্থান করে এই বিলে। জরিপ মতে ২১সালে পরিযায়ী পাখির মধ্যে পাতি-সরালি ৪ হাজর, লালঝুটি-ভুতিহাঁস ২শ’, গিরিয়া হাঁস ১হাজার ২শ’, পিয়াং হাঁস ১হাজার,পাতি-তিলি হাঁস ২শ, টিকি-হাঁস ৫০,কালাপাখ ঠেঙ্গি২০,গেওয়া-বাটান ৫০,প্রশান্ত সোনাগিরিয়া ২শ’, পাতি ভুতি হাঁস ৭শ’৫০, কালা মাথা গাংচিল ৪, পশ্চিমা কানা কাপাসি ২টি, চখাচখি ১শটি। দেশী প্রজাতির চা-পাখি ৪শ’ বেগুনি বক ০২, কানি বক ৫০,বাজলা বক ৫০, গো-বক ৪২,শামুখ খোল ১হাজার,পানকৌড়ী ২শ’, খাটো কান পেঁচা ০২,বড় বক ১৫, মাছ মুরাল ০২, সাপ পাখি০৩, ধুপনি ১শ’ কালা মাথা গাংচিল ০৪,পশ্চিমা কানা কাপাসি ০২, পাতি মাছরাঙ্গা৫০, সাদা বুক মাছরাঙ্গা ১০টি সহ প্রায় ২৮প্রজাতির পাখি জরিপে পাওয়া গেছে বলে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানিয়েছেন। পাখি সংরক্ষনকারী কিংবা পাখি প্রেমীদের মতে দু:খের বিষয় অতীতের মতো বিলে পাখি সংরক্ষন কিংবা আসা শুরু হলেও এর অবস্থান মাত্র কিছু সময়ের জন্য। মৎস্য প্রকল্পের মৎস্যশিকারীরা নির্দিষ্ট সময় পার হলে বিলে যখন মাছ ধরা শুরু করে ঠিক তখনই পাখিগুলি কোথাও কোন অভয়শ্রম না পেয়ে মনের দু:খে আবার ফিরে যায় সুদুর দুর প্রান্তে। কয়েক বছর যাবত বৃহত এই বিলে জীববৈচিত্র সংরক্ষনে বিলের নির্দিষ্ট কোন এক জায়গায় সরকারীভাবে একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটি সাপাহার উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন বিভাগ এছাড়াও বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সংগঠন দাবী করে আসছেন। তাদের দাবী এই বিলে সরকারীভাবে বিলের নির্দিষ্ট একটি অংশে অভয়াশ্রম ঘোষন বা গড়ে তুললে সারা বছর সেখানে বিভিন্ন প্রজাতীর পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ, জীববৈচিত্রের হরেক রকম প্রাণী নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট তাদের দাবী অচিরেই বৃহৎ এই বিলে যেন একটি জীববৈচিত্র সংরক্ষণে একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়, তা না হলে আর কয়েক দিন পরেই মৎস্য প্রকল্পের মৎস্যশিকারীদের মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়ে যাবে। হয়তো বিলে আগত পাখিগুলি ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
×