ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারসেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে লিটন দাস

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

ক্যারিয়ারসেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে লিটন দাস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দেশে কিংবা বিদেশে, স্পিনিং উইকেট কিংবা গতিময় ও বাউন্সি- তার ব্যাটে যেন ছুটছে ফুলকি। লিটন কুমার দাস টেস্টে এখন ধারাবাহিকতার অপর নাম। গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সারা বিশ্বের সব উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে ছাড়িয়ে গেছে তার টেস্ট ব্যাটিংয়ের গড়। ফর্মের তুঙ্গে আছেন তিনি সাদা পোশাকের এই মর্যাদার ফরমেটে। গত জানুয়ারি থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ তার কাছাকাছি নেই রান করার দিক থেকে। ৯ টেস্ট খেলে ৫২.৬৬ গড়ে লিটন করেছেন ২ সেঞ্চুরি, ৬ অর্ধশতকে ৭৯০ রান (উইকেটরক্ষক হিসেবে ৮ টেস্টে ৬৮০)। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেললে ভারতের ঋষভ পন্তকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলতেন তিনি। উইকেটরক্ষক হিসেবে এই সময়ে পন্ত সবচেয়ে বেশি ১৪ টেস্ট খেলে সর্বাধিক ৭৯২ রান করেছেন। নিউজিল্যান্ডে দুই টেস্টের ৩ ইনিংস ব্যাট করে লিটন করেছেন ১৯৬ রান। সিরিজ শেষে ক্যারিয়ারসেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছে গেছেন তিনি। ৩ ধাপ এগিয়ে এখন আইসিসির টেস্ট ব্যাটারদের মধ্যে ১৫ নম্বরে তিনি। এই মুহূর্তে যারা টেস্টে উইকেটকিপিং করছেন তাদের মধ্যেই সেরা অবস্থানে লিটন। লিটনের টেস্ট অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লায় ২০১৫ সালে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৪৪ রান করেছিলেন ৭ নম্বরে নেমে। ক্যারিয়ারের পরের টেস্টেই চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫০ রানে আউট হন। এরপর মোটামুটি নিয়মিতই হয়েছেন তিনি টেস্ট দলে। তবে ব্যাটিং পজিশন ঠিক থাকেনি। ১০ ইনিংসে ওপেনিং করে ব্যর্থ ছিলেন, ১৫.৩০ গড়ে মাত্র ১৫৩ রান করতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ ৩৩! আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ইনিংসে ওয়ানডাউনে নেমে সেখানেও করেন ৩৩। ৮ নম্বরে ২ বার নেমে ৫৪ ও ২৯ রান করেন। এছাড়া বাকি ম্যাচে তার পজিশন ৫, ৬ কিংবা ৭ নম্বরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছে। অর্থাৎ মিডলঅর্ডারেই বেশি স্থায়ী হয়েছেন লিটন। এর কারণ এই তিনটি পজিশনেই তার ব্যাটিং সাফল্য বেশি। এই ৩ পজিশনে ২৩ টেস্টের ৩৬ ইনিংসে তিনি ৩৯.৪২ গড়ে করেছেন ১০ ফিফটি ও ২ সেঞ্চুরিতে ১৩৮০ রান। তাই টেস্টে মিডলঅর্ডার হিসেবেই নিজেকে মেলে ধরেছেন তিনি। যদিও গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকেই মূলত দুর্দান্ত এ উইকেটরক্ষক ব্যাট হাতে। কারণ ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ২০ টেস্টে তার রান ছিল মাত্র ২৬.০৩ গড়ে ৮৫৯। সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে। মূলত গত বছর শুরু থেকেই টেস্টে তার ব্যাট জ্বলে ওঠে। জিম্বাবুইয়ে সফরে গত জুলাইয়ে ৯৫ রান করে আউট হয়ে যান এবং সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। তবে সেই আক্ষেপ মেটান গত নবেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৪ রান করে। পাকদের বিপক্ষে সিরিজ শেষ করে নিউজিল্যান্ড এসেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন লিটন। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানে আউট হয়ে সেঞ্চুরি মিস করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়নি বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জেতায়। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সবাই ব্যর্থ ছিলেন, লিটনও ৮ রানে আউট হন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এবং বিদেশের মাটিতে প্রথম শতক হাঁকান লিটন। মাত্র ৬৯ বলে ফিফটি পেয়েছিলেন। হ্যাগলি ওভালে প্রথম বাংলাদেশী এবং শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুণারতেœর পর দ্বিতীয় এশিয়ান হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে সোহানের সঙ্গে মাত্র ১০৪ বলে ১০১ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদ থেকে টেনেও তুলছিলেন। তবে ১১৪ বলে ১৪ চার, ১ ছক্কায় ১০২ রানে বিদায় নেন লিটন এবং দ্রুতই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। সর্বশেষ ৯ টেস্টে লিটনের ব্যাট থেকে বের হওয়া ইনিংসগুলো হচ্ছে- ৩৮, ৬৯, ৭১, ২২, ৫০, ৮, ১৭, ৯৫, ১১৪, ৫৯, ৬, ৪৫, ৮৬, ৮ ও ১০২! সবমিলিয়ে ৬ হাফসেঞ্চুরি ও ২ সেঞ্চুরিতে ৫২.৬৬ গড়ে ৭৯০ রান। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বে সেরা ব্যাটিং গড় তার উইকেটরক্ষক হিসেবে। এই ১ বছরে মিডলঅর্ডার হিসেবে তৃতীয় সর্বাধিক রান তার। ইংল্যান্ডের জো রুট ১৬ টেস্টে ১৭৩২ ও পন্ত ১৪ টেস্টে ৭৯২ রান করেছেন। উইকেটরক্ষকদের মধ্যে শুধু পন্তই রানে এই সময়ে লিটনের ওপরে। তবে ২৪ ইনিংস ব্যাট করা পন্তের গড় মাত্র ৩৬। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু অধিনায়ক মুমিনুল হকই কাছাকাছি আছেন তার। তিনি করেছেন এই সময়ের মধ্যে ১৬ ইনিংসে ৪১.৮৬ গড়ে ৬২৮ রান। তারপর মুশফিকুর রহিম ১৪ ইনিংসে ৩৮.৩৩ গড়ে ৪৬০। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩ ধাপ এগিয়ে এখন লিটন দেশের মধ্যে সবার ওপরে। বিশ্বের উইকেটরক্ষকদের মধ্যে লিটনের র‌্যাঙ্কিংই সবার ওপরে। ৬৫৪ রেটিং নিয়ে ১৬ নম্বরে আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৬৮৩ রেটিং নিয়ে লিটনের অবস্থান ১৫ নম্বরে। ৩ ধাপ পেছালেও লিটনের পর বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় মুশফিক ২৫ নম্বরে।
×