ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

প্রযুক্তির বিশ্বে উদ্যোক্তা শামীমা আক্তার

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১১ জানুয়ারি ২০২২

প্রযুক্তির বিশ্বে উদ্যোক্তা শামীমা আক্তার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় নারীদের জোর কদমে সামনে চলা সময়ের অপরিহার্য চাহিদা। আর প্রযুক্তির সমৃদ্ধ আঙ্গিনা ও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধিতে দৃষ্টিনন্দন। অর্ধাংশ নারীরা আজ যুগের দাবিতে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাগুলোতেও নিজেদের সম্পৃক্ত করতে মোটেও পেছনের দিকে তাকাচ্ছেন না। এক সময় শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের সীমাবদ্ধ কর্মজীবনকে চালিয়ে নেয়া খুব বেশি দূরের নয়। নিকটঅতীতেও নারীরা বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশায় যুক্ত হতে অনেক বেশি ভাবত। তবে এখন আর ভাবারই সুযোগ নেই। যে কোন কর্মক্ষেত্রকে তারা স্বাচ্ছন্দ্য গতিতে এগিয়ে নেয়ার চিত্রও উদ্ভাসিত হতে সময় লাগছে না। একবিংশ শতাব্দীর শুরুটা শুধু উন্নয়নগামিতাই নয় বরং নারীদের পেশা নির্বাচনেও আনে যুগান্তকারী অবদান। সেখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তা তৈরির চমক এবং আকর্ষণ সত্যিই অভাবনীয়। গত শতকের শেষ দশকে নারীরা ঘর থেকে বাইরে আসার সুযোগ তৈরির প্রেক্ষাপট সংশ্লিষ্টদের জন্য এক অনন্য দিকনির্দেশনা। ব্যবসাবাণিজ্যে এক সময়ে মেয়েদের না আসার প্রবণতা দৃশ্যমান হতো। ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন পেশাকে অবলম্বন করতে চেতনায় হিমশিম খাওয়ার উপক্রম। তবে সে অবধি নারীদের জন্য সব পেশা অবারিতও হয়নি। কিন্তু সুযোগ হাতের কাছে আসার পর নারীরা দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করে দেয়Ñ তারাও সবকিছুর জন্য যোগ্যতম ও উপযুক্ত। তেমনই এক নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে আমার কিছু কথা বলা। শামীমা আকতার। সাধারণ বঙ্গললনায় প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকা এক অসাধারণ ব্যক্তিসত্তা দুরন্ত শক্তিময়তায় যে মাত্রায় সারা বিশ্বে নিজেকে যুক্ত করলেন সেটাও এক অনবদ্য ঘটনাপ্রবাহ। থাকেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন সিটিতে। নারীদের রূপচর্চার পশরা সাজানো থেকে প্রাসঙ্গিক হরেক রকম আকর্ষণীয় সামগ্রী তাদের কাছে পৌঁছে দেয়াও রীতিমতো এক ঝক্কি-ঝামেলার কাজ। তাও আবার প্রযুক্তির সমৃদ্ধ আঙিনায়। ব্রিটেনে বসেও তার মাথায় থাকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সব নারী খুব বেশি উচ্চবিত্তে অবস্থান করেন না। ফলে মূল্য নির্ধারণেও থাকে এক ধরনের সতর্ক- সাবধানতা। সুলভমূল্য থেকে শুরু করে আরও বেশি দামে প্রসাধন সামগ্রী সবার কাছে নিয়ে যেতে প্রাসঙ্গিক সব আয়োজনই শামীমা সাজিয়ে বসেন। আধুনিক প্রসাধন সামগ্রী যাতে মসৃণ ত্বকের কোন ক্ষতি না করে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বাংলাদেশে এসে শ্বশুরবাড়িতে তিনি প্যান্ট-শার্ট পরছেন না বরং দেশীয় পোশাক সালোয়ার-কামিজেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বাংলাদেশের রাপা প্লাজায় আকর্ষণীয় এক স্টল খুলে তার পশরা সাজিয়ে গুছিয়ে দর্শনার্থীর শুধু মনোরঞ্জন নয় বরং তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও তার প্রচুর গ্রাহক রয়েছে। বিভিন্ন মূল্যের পণ্যসামগ্রী তাদের হাতে নিজেই তুলে দিচ্ছেন। বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হওয়ার মতোই। সহজ, স্বাভাবিক আলাপচারিতায় মনেই হয় না দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। রূপচর্চাকে নান্দনিক এবং রুচিসম্মত করতে তার প্রসাধনীর মূল্যমান সবটাই যেন সহনীয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যও তাকে বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হয়। শুধু ব্যবসায় সফলতাই নয় তার চেয়ে বেশি গ্রাহকদের খুশি রাখতেও নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। শামীমা পেশায় একজন মেডিক্যাল এ্যাস্থেটিশিয়ান। কাজও করেন ব্রিটেনের সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। স্বামী লন্ডনের গ্রীনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২ সন্তানের জননী শামীমা সন্তানদের ব্যাপারেও বিশেষ সকর্ত। তাদের নিয়মিত পরিচর্যায় কখনও গাফিলতি করেন না। আর তার পেশার কারণে নারীদের ত্বক পরিচর্যায়ও বিশেষ যতœবান থাকেন। দেশের অসংখ্য গ্রাহকের মাঝে শামীমা নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করলেন একেবারে দৃষ্টিনন্দন। অনলাইন ব্যবসায় হরেক রকম প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকেই এখনও তার মাশুল গুনে যাচ্ছে। কিন্তু সততা, অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠাকে পুঁজি করে যে চমৎকার ও আকর্ষণীয় ব্যবসায় নিজেকে শামিল করেছেন তা যেন আরও বহুদূর যেতে পারে। আমাদের মতো শুভানুধ্যায়ীরা তার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করাই হবে শামীমার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। খুব সাধারণ সালোয়ার-কামিজ দৃষ্টিনন্দন এক পরিশীলিত জুতা এবং হাল্কা প্রসাধনীর প্রলেপে যেভাবে দর্শনার্থীর মোকাবেলা করে যাচ্ছেন উপচে পড়া ভিড়ে তাও যেন চিরায়ত এক বাঙালী নারীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক দ্যোতনা। সাজ-গোছ আর পোশাকে এমন রুচিশীল ও পরিচ্ছন্ন ছিলেন মনে হয় তিনি নিজেই যেন তার প্রসাধনীর মডেল। তার থেকে দেখে শেখারও অনেক কিছু আছে তাকে যারা অনুসরণ করছেন। ধন্যবাদ এবং অনেক অভিনন্দন এই রূপচর্চার যথার্থ রূপকারকে।
×