ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রেস ব্রিফিংয়ে শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ নৌকা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০২২

নারায়ণগঞ্জ নৌকা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না হয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের আলোচিত সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এ সিটি নির্বাচনে খোদ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সাংসদ শামীম ওসমানের প্রার্থী। এ বিষয়টি কয়েকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জে টপ অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টি খোলাসা করতেই এই আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সোমবার বেলা ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি, বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি। নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষের ঘাঁটি। এখানে অন্য খেলার চেষ্টা করবেন না। তিনি বলেন, কে প্রার্থী, কলাগাছ না আমগাছ, আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটাই। এটা আমার স্বাধীনতার নৌকা, এটা আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নৌকা, এটা আমার শেখ হাসিনার নৌকা। এটা আমাদের রক্ত দিয়ে গড়া নৌকা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য অব্যাহত থাকায় নির্বাচনী মাঠ ক্রমেই আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবুও মেয়র প্রার্থী ডাক্তার আইভীর নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রাথী তৈমুর আলমের হাতি প্রতীকের প্রচার বেশ জমে উঠেছে। থেমে নেই আরও ৫ মেয়র প্রার্থীর প্রচারও। প্রচারে বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সোমবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। এ সময় ডাক্তার আইভী বলেন, আমার ভোটাররা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তারা কাকে ভোট দেবেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সোমবার সকাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের মদনপুর থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি চাই নির্বাচনে যেন জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটে। নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটিÑ শামীম ওসমান ॥ সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি কমিনিউনিটি সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি, বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি। নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষের ঘাঁটি। এখানে অন্য খেলার চেষ্টা করবেন না। তিনি বলেন, কে প্রার্থী কলাগাছ না আমগাছ, আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটাই। এটা আমার স্বাধীনতার নৌকা, এটা আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকা, এটা আমার শেখ হাসিনার নৌকা। এটা আমাদের রক্ত দিয়ে গড়া নৌকা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রার্থী কোন বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নৌকা দিয়েছেন। সবাই মিলে কাজ করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব। তিনি আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীকে ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বিজয় নিশ্চিত করা জন্য নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী উল্লেখ্য করে শামীম ওসমান বলেন, আপনি আপনার মতো কাজ করেন। হাতি দিয়ে নৌকা ডুবায় দেবেন তা হবে না। হাতি নৌকায় উঠতে দেব না। নৌকায় ওঠার আগেই হাতি কাঁধে উঠিয়ে দৌড় দেব। নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-বিএনপির অত বড় শক্তি নেই, নৌকা ডুবানোর। শামীম ওসমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এলেই আমাকে (শামীম ওসমানকে) নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। শামীম ওসমান আমার লোক ও বলে আমার লোক। গরিবের বৌ সবার ভাবি। একজন আমাকে নিয়ে নিচ্ছে আরেকজন আমাকে দিয়ে দিচ্ছে। আমি সত্য বলতে চাই। এই কয়েকদিন চুপ ছিলাম হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হওয়ার কারণে। একটি ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। কারণ এটা আমার কাজ না। তবে, আমার চুপ থাকাকে কেন্দ্র করে অনেকে দলকে ক্ষতি করার চেষ্টা হচ্ছে। কেউ বাইরে থেকে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে আবার কেউ দলের ভেতর থেকে ক্ষতি করছে। শামীম ওসমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কারও যদি গডফাদার বলতে ইচ্ছে হয়, বলেছেন। আগে ফাদার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল বলেছেন। ব্রাদারও বলেছেন। আর যাই হোক গডমাদার বলবেন না। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি নীলকণ্ঠী। আমার দায়িত্ব আমার নেত্রীকে ফলো করা। আমাকে কেউ কিছু বললে শান্তি পেলে পাক, তাতে আমার কী। উনি কী বলছেন সেটা তার ব্যাপার। যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, আমার জাতীয় পর্যায়ের নেতারা এসে নির্বাচন পরিচালনা করছেন। তারা বলেছেন, এটা বিএনপি-জামায়াতের নতুন চাল। ১৬ তারিখ নৌকা বিজয়ী হওয়ার পর তার প্রশ্নের উত্তর দেব। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে নামতে পারব না, আইনে নিষেধ আছে। আমরা আইন করব আমরাই মানব না, সেটা কিভাবে হবে। এই আইনটা বাতিল করে দেয়া উচিত। কারণ সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে নামছে। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে এমন কিছু লোক আছে যারা লিফলেটে নৌকা ছবি না দিয়ে শুধু প্রার্থীর ছবি দিয়ে সংগঠনের নাম দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে। আমার মনে এটা কেউ পরিকল্পিত ভাবে করছে। তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি আইন প্রণেতা, আমি আইন ভঙ্গ করলে এটা শোভনীয় নয়। এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী আমি কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারি না। আজকে এই দিনে বঙ্গবন্ধু তার মা ও মাটির কাছে ফিরে এসেছিলেন। প্রথমেই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সব শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি। আমি অবাক হই, আমি কেন সব সময় সাবজেক্ট হই। আমার ভোটাররা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তারা কাকে ভোট দেবেন- আইভী ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী সোমবার সকাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দর এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমে বলেন, আমি বলিনি যে শামীম ওসমানের সমর্থন আমার দরকার নেই। আমি বলেছি যে, আমার ভোটাররা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তারা কাকে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, দল যখন আমাকে নমিনেশন দিয়েছে, আমার দলের লোকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নৌকার পক্ষেই থাকবেন। এর মধ্যে দুয়েকজন ব্যতিক্রম হলে আলাদা ব্যাপার। ভোটারদের কাছে এটা অপরিহার্য নয় যে, কে সমর্থন দিল, কে দিল না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হয়ত এটায় গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ, আমার মা-বোনদের কাছে মাথাব্যথা নেই নারায়ণগঞ্জে কে সমর্থন দিল, কে দিল না। তাদের কাছে বড় ব্যাপার দল নমিনেশন দিয়েছে। ডাক্তার আইভী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি (তৈমুর) তো গডফাদারের কোলে গিয়ে বসে আছেন। তিনি গডফাদারের বাইরের কেউ না। গডমাদারটা তিনি যে আমাকে বলেছেন এটা খারাপ কাজ করেছেন। তাকে আমি এ ধরনের কথা বলিনি। তিনি তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে এটাই বলেছি। তিনি যদি তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় না দাঁড়াত তাহলে ওই চেয়ারম্যানরা তার পাশে গিয়ে দাঁড়াত না। অথবা পুলিশ কাকে হয়রানি করল এটা তিনি বলতেন না। তার কর্মকা-ে ফুটে উঠেছে তিনি শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেট। তাদের প্রটেক্ট করতে গিয়ে যদি তিনি আমাকে এ ধরনের কথা বলেন পক্ষান্তরে তিনি নিজ সন্তানকেই বলছে। আমি তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। তাকে সম্মান করেই নির্বাচন চালিয়ে যাব। আমি চাই নির্বাচনে যেন জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেÑ তৈমুর ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সোমবার ২৭ নং ওয়ার্ডের মদনপুর থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় গণমাধ্যমকে তৈমুর বলেন, নির্বাচন খুব উৎসবমুখর পরিবেশেই হচ্ছিল। কিন্তু আমার সমর্থক ও যারা নৌকার পক্ষে নামেনি তাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। নৌকার পক্ষে ভোটে কাজ করার জন্য বলছে। এভাবে সরকারী হস্তক্ষেপ হচ্ছে। আমি চাই নির্বাচনে যেন জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে কে গডফাদার কে গডফাদার না, কেন উইনেবল ক্যান্ডিডেট কে উইনেবল না, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে আমি বসে যাওয়ার পর আইভী জিতেছিলেন। তিনি কিন্তু বিদ্রোহী হিসেবে জিতেছেন। বিএনপির সময় আমরা যে ক্যান্ডিডেট দিয়েছিলাম তিনিও হেরেছেন। সরকারী সমর্থনটা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য ফ্যাক্ট না। নারায়ণগঞ্জবাসী দেখবেন কর্ম। তারা দেখবেন একটা প্রার্থীর জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। আজকে আঠারো বছরের যে ব্যর্থতা এবং ঠিকাদার সিন্ডিকেট। হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সকল ট্যাক্স বৃদ্ধি, মানুষ সেবা পাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা যানজটসহ সবকিছু মিলিয়ে জনগণ আমাকেই ভোট দেবেন। তিনি বলেন, মেয়র আইভীর বক্তব্যে বলেছেন তার দলে কোন বিভাজন নেই। তার দলে বিশাল বিভাজন রয়েছে। শামীম ওসমানকে নিয়ে কথা ওঠে, তার বাপ-দাদা এমপি ছিলেন। তারা যে আইভীর পক্ষে না এটা আমরা বলি না, এটা আইভী নিজেই বলেছেন। ওসমান পরিবারও যে আইভীর পক্ষে না। এটা আমরা বলি না। আইভীই পরিষ্কার করেছেন। এটা আইভী ও ওসমান পরিবারের ব্যাপার। এটা সরকারের ব্যাপার আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপার। তৈমুরের নির্বাচনী সমন্বয়কারী রবি গ্রেফতার ॥ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সিটি কর্পোরেশনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের নির্বাচনী সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে গ্রেফতার করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হিরাঝিল আবাসিক এলাকার বাসা থেকে সোমবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ জানায়, সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে মনিরুল ইসলাম রবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রবির হেফাজতের বিরুদ্ধে দুইটি মামলার এজাহার নামীয় আসামি।
×