ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে খালে নিখোঁজ শিশুর বাবার আহাজারি

তিনদিন ধরে খুঁজছি পাচ্ছি না আমার কলিজারে

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

তিনদিন ধরে খুঁজছি পাচ্ছি না আমার কলিজারে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ‘তিনদিন ধরে খুঁজছি, পাচ্ছি না আমার কলিজারে। আমার বাবাটারে পাচ্ছি না। প্রথমদিন পুলিশরে বলছি, তারা বলছে আমাদের খুঁজতে। নিজে ময়লা উঠাইছি অনেক। তন্নতন্ন করে খুঁজছি। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অনেক ময়লা তুলছি। খুঁজে পাই না তো আমার কলিজা বাবাটারে... বুধবারও সবার সঙ্গে আমিও খুঁজতেছি পাচ্ছি না।’ এই কথাগুলো নগরীর চশমা খালে তলিয়ে যাওয়া নিখোঁজ দশ বছরের শিশু মোঃ কামাল উদ্দিনের বাবা মোহাম্মদ আলী কাউছারের। তিনি একটি ছবি হাতে নিয়ে যাকেই পাচ্ছেন, তাকেই বলছেন ছেলেকে খুঁজে এনে দিতে। ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকার ছিন্নমূল মোহাম্মদ আলী কাউসারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে কামাল সবার ছোট। বুধবার খাল পাড়ে দাঁড়িয়ে কামালের বাবা বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমি এত কিছু বুঝি না। আমার ছেলের সন্ধান চাই। সিটি কর্পোরেশন যদি ময়লা পরিষ্কার করত তাহলে ছেলেকে তো খুঁজে পেতাম। আমার বাবাটারে তিনদিন দেখিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বেঁচে আছে কিনা জানি না, বাবাটা ডুবে গেছে। কোথাও পাচ্ছি না। চট্টগ্রাম নগরীতে অনাবৃত খাল নালায় পড়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও নির্বিকার চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলো। একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে প্রতিবার দায়সারা বক্তব্য দেন সংস্থার প্রধানরা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় খাল নালায় পড়ে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা যেন এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ সোমবার এই ছিন্নমূল শিশু চশমা খালে পড়ে গিয়ে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে সালেহ আহমেদ নামে এক সবজি বিক্রেতা ষোলশহর এলাকার নালায় ডুবে নিখোঁজের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটিও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) অবহেলাকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, খাল নালার পার যদি প্রতিবন্ধক দেয়াল না দেয় তাহলে প্রাণহানি ঘটনা আরও বাড়বে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নালাগুলো অধিকাংশ অনাবৃত। এই অনাবৃত নালায় পড়ে মানুষ মারা গেলেও মরদেহের খোঁজও মিলছে না। অভিভাবকহীন শহরে চারদিকে মৃত্যুভয়। এদিকে বুধবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, আমাদের দুটি রেসকিউ টিম আবার উদ্ধার অভিযানে নামে। পাশাপাশি একটি চার সদস্যের ডুবুরি দলও নিখোঁজ শিশুটিকে খোঁজে খাল ও নালায় তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। চশমা খাল ও সংলগ্ন নালায় শিশুটির খোঁজ চালাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ককশিট ও ময়লা আবর্জনা। এসব অপসারণ করেছে চসিক। এরপরও আবর্জনার কারণে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলকে। উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সকল সদস্যই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে নিখোঁজ কামালের সন্ধানে। প্রসঙ্গত কামাল ও রাকিব দুজনই চশমা খালের ময়লার স্তূপে নেমেছিল। রাকিব উঠে আসতে পারলেও কামাল ¯্র্েরাতে ভেসে ডুবে যায়।
×