ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ ॥ বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রয়োজনে ফের বন্ধ হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ দীপু মনি

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

প্রয়োজনে ফের বন্ধ হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ দীপু মনি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ করোনার বিভিন্ন ধরনে নাজেহাল বিশ্ব। অনেক দেশই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি করোনার চতুর্থ ঢেউয়েরও সম্মুখীন হয়েছে। এবার ভাইরাসটির নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে আবারও শঙ্কিত পুরো বিশ্ব। দ্রুত সংক্রমণশীল ভাইরাসটির উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকায় হলেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি দেশে। এতে করে শঙ্কিত বাংলাদেশও। যদিও এর প্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে সরকার তবুও উদ্বেগ কমার নয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ওমিক্রনের প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষা খাতেও। টানা দেড় বছর বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজগুলো প্রয়োজনে আবারও বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এর প্রভাবে নতুন বছরে পূর্ণাঙ্গরূপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত ক্লাস সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। এদিকে দেশজুড়ে চলমান অন্যতম বড় পাবলিক পরীক্ষা এইচএসসি ওমিক্রন শঙ্কায়ও চলবে। তবে, কড়াকড়ি করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে। এদিকে ওমিক্রন নিয়ে একটু চিন্তিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি সতর্ক হলেও আতঙ্কগ্রস্ত নন বলে মন্তব্য করেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে জানা যায়, সম্প্রতি ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত দুই ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবারই দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আক্রান্ত ব্যক্তি দুজনই কর্ণাটক রাজ্যের বাসিন্দা। একেবারেই নিকট প্রতিবেশী দেশে করোনার নতুন ধরনটি শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশেও যে শনাক্ত হবে তার আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশপথে বাড়ানো হয়েছে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা। স্কুল-কলেজে পুরোদমে শিক্ষাকার্যক্রম চালুর ব্যাপারে বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, আমরা চেয়েছিলাম নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস সংখ্যা বাড়াতে। কিন্তু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের শঙ্কায় টেকনিক্যাল কমিটি ক্লাস সংখ্যা না বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাই আপাতত বাড়ছে না ক্লাস সংখ্যা। পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও বন্ধ হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রী বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি খারাপ হলে টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেব। এসময় মন্ত্রী প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস চালুর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে আমি যতটুকু জানি এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, সবকিছুর উর্ধে আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা। তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি। এদিকে করোনা প্রতিরোধে বিমানবন্দরে জোরদার স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যা বাড়লে বাড়ানো হবে ল্যাবরেটরির সংখ্যা। তিনি বলেছেন, ওমিক্রন নিয়ে সবাই একটু চিন্তিত। আমরাও সতর্ক, কিন্তু আমরা প্যানিক করব না। আমরা জানতে পেরেছি, এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সংক্রমণ হলেও এর লক্ষণ মৃদু। লক্ষণগুলো ডেলটার মতো ভয়ানক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যখন আমরা সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পেয়ে যাব, আপনাদের জানিয়ে দেব। সে পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চললেও অনেকে ভ্যাকসিন নিতে আসেন না। আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখনও আমাদের কাছে চার কোটি ভ্যাকসিন রয়েছে, ভ্যাকসিনের কোন অভাব নেই। করোনা মোকাবিলায় সবদিক থেকে আমরা ভাল আছি জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভাল হয়েছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম খুবই গতি লাভ করেছে। টার্গেটেড পপুলেশনের ৫০ শতাংশ ভ্যাকসিনেটেড হয়ে গেছে। মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভাল আছে। বিদেশে ভাল ইমেজ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের ওপর কোন জায়গায় নিষেধাজ্ঞা নেই। আমরা সবদিক থেকে ভাল আছি। তবে ওমিক্রন শিক্ষা খাতে আবারও একটা ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণের আমাদের শিক্ষা খাতে এমন একটা এলোমেলো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যা স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে আর কেউ দেখেনি। এখন সবকিছু যখন স্বাভাবিক হচ্ছে তখন আবার এই ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্ক। যদিও এটির উপস্থিতি এখনও বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের সতর্কতা জরুরী। সবকিছুর উর্ধে মানুষের জীবন। শিক্ষাকার্যক্রম যদি সীমিত করে ওমিক্রন কিছুটা হলেও ঠেকানো যায় তাও ভাল। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে সব পরিস্থিতির জন্যই। আর অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহও। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা কঠিন একটি সময় পার করেছি। সেই সময় যে এখনও অতিক্রান্ত হয়নি তারই প্রমাণ এই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটি। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের বৈষম্যের কারণেই এর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি হচ্ছে। যা খুবই আতঙ্কের। তবে সবকিছুর উর্ধে স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরী। যদি আপনি সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরেন তাহলে যেকেন ভাইরাস মোকাবেলা করতে পারবেন। বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটা আবারও চালু করতে হবে। সর্বোপরি জনসমাগম এগিয়ে চলতে হবে। আর এটির প্রবেশরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্য যেসব মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের সবাইকে একযোগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। প্রবেশপথগুলোতে স্ক্রিনিং কার্যক্রম তো জোরদার করা হয়েছেই তারপরও আফ্রিকান দেশগুলো থেকে ফিরে কেউ যেন লুকিয়ে বাড়িতে চলে যেতে না পারে সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুর দিকে ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে আরও কয়েকটি দেশে। বিশ্বের অন্তত ১৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ‘অত্যন্ত ঝুঁকি’ তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি ভাইরাসের এই ধরনকে মোকাবিলায় বিশ্বকে দ্রুত প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মূল করোনাভাইরাস ও তার অন্যান্য রূপান্তরিত ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনের সংখ্যা অনেক বেশি। সংস্থাটির আশঙ্কা, এটি মহামারীর পুরো চিত্র আরও বিপর্যয়কর করে তুলতে পারে।
×