ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাকাউন্টে টাকা নেই আলেশা মার্টের

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৮ নভেম্বর ২০২১

এ্যাকাউন্টে টাকা নেই আলেশা মার্টের

রহিম শেখ ॥ গ্রাহকের পণ্যও দিচ্ছে না, আবার টাকাও দিচ্ছে না। ধরিয়ে দিচ্ছে চেক। কিন্তু সেই চেকও বার বার ডিজঅনার হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে আলেশা মার্ট থেকে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেন আবুল কালাম নামের এক গ্রাহক। ডেলিভারি করার কথা ছিল জুলাই মাসে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল দিতে পারেনি আলেশা মার্ট। বিপরীতে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। আগস্ট মাসে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকার একটি চেক দেয়া হয় আবুল কালামকে। চেক-এ তারিখ দেয়া হয় ১০ অক্টোবর। তবে সেদিন ইসলামী ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন আলেশার এ্যাকাউন্টে কোন টাকা নেই। আলেশা মার্টের এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা হাজার হাজার। তবে প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে ফেসবুক পেজে অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছে আলেশা মার্ট। দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তাকেও পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেও চেয়ারম্যানের অসুস্থতার অজুহাতে তা স্থগিত করে আলেশা মার্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু আলেশা মার্ট নয়, আলেশা সল্যুশন্সের ডাচ বাংলা ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট এবং আলেশা এ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্পোরেট কার্যালয়ের এ্যাকাউন্টের চেকও ক্যাশ (নগদ) করতে পারছেন না অনেকে। শরিফুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক বলেন, আমাকে ১৮ অক্টোবরের চেক দেয়া হয়েছিল। তাদের এ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় আমি ব্যাংক থেকে ফিরে আসি। পরে তাদের বনানীর অফিসে গেলে তারা জানায়, টাকা তোলার নতুন তারিখ এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। তারিখ অনুযায়ী আলেশা মার্টের অফিসে গেলে তাদের নগদ টাকা দেয়া হবে। তবে নবেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত এমন কোন এসএমএস পাইনি। একটি বেসরকারী ব্যাংকের বনানী শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘২/৩ দিন পরপরই আলেশা মার্টের চেক নিয়ে ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন গ্রাহকরা। কিন্তু এ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আমরা টাকা পরিশোধ করতে পারি না। তাদের কারণে আমাদের ব্যাংকের ইমেজের ওপরও বিরূপভাব তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা আলেশা মার্টের সঙ্গে কথা বলেছি। অ্যাকাউন্টে টাকা না রেখে গ্রাহকদের চেক না দেয়ার অনুরোধ করেছি আমরা।’ চেকের বিষয়ে জানতে চাইলে আলেশা মার্টের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নিজেদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে আলেশা মার্ট জানায়, ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে সময় ও সহযোগিতা পেলে আলেশা মার্ট সফলভাবে রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে- এই প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধপরিকর।’ গত ১৩ নবেম্বর বনানী কার্যালয় থেকে বাজাজ পালসার মোটরসাইকেলের ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল আলেশা মার্টের। সেদিন তাদের অফিসের নিচে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন গ্রাহকরা। অফিস ভেতর থেকে বন্ধ রেখে সারাদিন কেউ বের হননি, কথা বলেননি অপেক্ষারত গ্রাহকদের সঙ্গে। সাঈদুর রহমান শাকিল নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা ১৩ তারিখ ৭ ঘণ্টা তাদের বনানী কার্যালয়ের নিচে ছিলাম। আমাদের বলা হলো ভেতরে কেউ নেই, দাঁড়িয়ে লাভ নেই। এরপর গুলশান-বনানী এলাকার কিছু যুবক নিজেদের সরকার দলীয় একটি অঙ্গ সংগঠনের কর্মী দাবি করে আমাদের সরে যেতে বলে। আমাদের ধাক্কা দিয়ে অফিসের সামনে থেকে সরিয়ে দেয় তারা। বাইক ও চেক নিতে আসা ব্যক্তিরা আলেশা মার্টের কাউকে পায়নি।’ এদিকে মঙ্গল ও বুধবার আলেশা মার্টের তেজগাঁও ও বনানী অফিস বন্ধ পেয়ে অনেক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন। তারা পোস্টে লেখেন, আলেশা মার্টের প্রধান কার্যালয়সহ দুটি অফিস বন্ধ। পাওয়া যাচ্ছে না তাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। আলেশা মার্ট টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে ভিডিও বার্তায় মুখ খুলেন আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম সিকদার। তিনি বলেন, কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আমরা সম্পূর্ণ অপারেশনাল। আমাদের সব অফিস খোলা। আমরা সব কাস্টমারকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন অফিস করছি। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। সার্বিক দিক বিবেচনায় মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে আলেশা মার্ট। জানানো হয়, বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আলেশা মার্টের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম সিকদার। বিকেলে চেয়ারম্যানের অসুস্থতার অজুহাতে তা স্থগিত করে আলেশা মার্ট। এদিকে এরইমধ্যে আলেশা মার্টের সন্দেহজনক লেনদেনের বিরুদ্ধে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, মোট ৮টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির ছায়া তদন্ত চলমান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি। গ্রাহকরা আমাদের কাছে অন্য যেসব অভিযোগ নিয়ে আসছেন সেগুলো নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। এছাড়া ই-অরেঞ্জ ও ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করছে সিআইডি।
×