ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরার ১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৬ অক্টোবর ২০২১

কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরার ১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলায় কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলার ১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শীঘ্রই প্রতিবেদন দুটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক। পাশাপাশি তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিচার শীঘ্রই প্রকাশ্য আদালতে শুরুর দাবি জানিয়েছে। রাজধানী ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক বলেন, সোমবার দুটি মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার ৪ আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলায় দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি চার জনের মধ্যে আকবর আলী শেখ গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি পলাতক। কুড়িগ্রাম জেলার ১৩ জনের বিরুদ্ধে ১৬ অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক বলেন, এর মধ্যে ১১ আসামি গ্রেফতার, বাকি দুজন পলাতক। সানাউল হক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন করব, আমরা যে পরিশ্রম করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে রিপোর্টটি দিয়েছি, সেটা যথাযথ নিরীক্ষা করে অবিলম্বে বিচার শুরু করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়।’২০১৪ সালের ২৫ মার্চ জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হলেও বিচার শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। সানাউল জানান, প্রসিকিউশনকে বারবার তাগিদ দিয়েও তদন্ত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘অর্গানাইজেশনের শাস্তি কী হবে, এটার বিধান স্পষ্টভাবে না থাকাতে প্রসিকিউশন রিপোর্টটি চার্জ গঠনের জন্য ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করেননি। এমনটাই আমাদের জানিয়েছেন। ‘আমি মনে করি, জামায়াতে ইসলামীর বিচারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বা আমাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিত। সংগঠনের যখন বিচার হয়, এই সংগঠনের সেই সময়ে যে সমস্ত অঙ্গ সংগঠন বা যে সমস্ত ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, তাদের সবারই বিচার হয়। তাদের সবার ওপরই এই অপরাধের দায় চলে আসে।’ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক হামলা সমূলে উৎপাটন করতে জামায়াতের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার শুরু হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য তার। তদন্ত সংস্থার প্রধান আরও বলেন, ‘আজকে আপনারা দেখছেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হচ্ছে। ধর্মান্ধতার সুযোগে অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। একে সমূলে উৎপাটন করতে গেলে জামায়াতের স্বরূপ উদ্ঘাটন করার জন্য বিচারটি প্রকাশ্যে কোর্টে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ কালিগঞ্জের চারজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থার ৭৯তম প্রতিবেদনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চার আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি এখনও পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে ১১১ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি সংযুক্তি হিসেবে চার ভলিউমের ১৭৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয়া হয়। সোমবার রাজধানীর ধানম-িতে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান এম সানাউল হক। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) শাহজাহান কবীরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মামলায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের অভিযানে এরই মধ্যে মোঃ আকবর আলী শেখকে (৭০) গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক তিনজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। চার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৪ নবেম্বর থেকে তদন্ত শুরু হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সাতজনকে হত্যার অভিযোগ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। কুড়িগ্রামের ১৩ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার ১৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থার ৮০তম প্রতিবেদনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৩ আসামির মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুইজন পলাতক রয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের তিন ভলিউমে ৩৭৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মোঃ রুহুল আমীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের অভিযানে এরই মধ্যে মোঃ নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পলাতক দুইজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর শেষ হয়। আটক, নির্যাতন, অপহরণ, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মোট ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ৭৪৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
×