ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অশুভ শক্তিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২৩ অক্টোবর ২০২১

অশুভ শক্তিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে সেই জন্য সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। হাজার বছর ধরে চলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সতর্ক থাকতে সারাদেশের নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় মন্ডপে কোরান রাখা যুবক ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতারের পরও তার মদদদাতারা এখনও চিহ্নিত হয়নি। তবে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ফয়েজ আহমেদ নামের একজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, যতটা দ্রুত সম্ভব ঘটনার পেছনের উস্কানিদাতাদেরও চিহ্নিত করা হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবকে এখনও হুমকি মনে করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী অশুভ চক্র ফের নতুন গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারিও করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরান রাখার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় ১০২টি মামলা দায়ের করা হয়েছ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ হাজার ৬১৯ জনকে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৮৩ জনকে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। শুক্রবার ‘সরকারী হিসাব’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপ্তি অনেক। গুজব সৃষ্টিকারীরা বার বার এই মাধ্যমকেই ব্যবহার করছেন। গত কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে সামাজিক মাধ্যমেই বেশি হিংসা ছড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ায় প্রকৃত সত্য সামনে আসলেও ফের নতুন উস্কানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অশুভ শক্তি। কুমিল্লার পর চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনার পর যেন অস্থিরতা আরও নতুন রূপ নিতে না পারে সেই জন্য বাড়তি সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিটকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে পৃথক পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত থেকে এই ধরনের সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। দেশের সব জেলায় সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়া হয়েছে, সাম্প্রদায়িক তৎপরতা রুখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠোর হস্তে দমন করতে হবে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতকারীদের। বৈঠক থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, দলীয় সভাপতি, সম্পাদক, নেতাকর্মী ও দলের এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তৃণমূলের সব নির্বাচিত জন প্রতিনিধিতে নিজ নিজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক অপশক্তি মাথাচাড়া দেবে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে হিন্দুদের ওপর হামলা এবং এ জাতীয় স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটানোর জন্য একটি পক্ষ সক্রিয় থাকবে। সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও এটি মোকাবেলা করার নির্দেশ দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের সহায়তা করছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও রংপুরের পীরগঞ্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে দলীয় নেতাকর্মীদের মন্দির ও পূজামন্ডপ পাহারা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়। দলের নির্দেশ মেনে দেবী বিসর্জন দেয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে বিজয়া দশমীর পর রংপুরের পীরগঞ্জের জেলে পাড়ায় অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট, নির্যাতনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর ক্ষমতাসীন দলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। কুমিল্লার ঘটনার পর গত ১৩ অক্টোবর থেকেই সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেয়া হয়। জেলায় জেলায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও সজাগ থাকতে বলা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশের পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করা হচ্ছিল, তখনই ঘটল পীরগঞ্জের নারকীয় ঘটনা। ১৭ অক্টোবর রাতে ফেসবুকের একটি গুজবেই ভস্মীভূত হয়ে গেল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝিপাড়া। কুমিল্লায় পবিত্র কোরান অবমাননার অভিযোগের জের ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, পূজামন্ডপ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
×