ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

২৬ রানে জয়ী টাইগাররা ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান

ওমানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২০ অক্টোবর ২০২১

ওমানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকল বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপ মিশনে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্বাগতিক ওমানকে মঙ্গলবার রাতে ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রাথমিক রাউন্ডের ‘বি’ গ্রুপে প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে যাওয়াতে আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এই ম্যাচটি অবশ্যই জিততে হতো বাংলাদেশকে। হারলেই ছিটকে পড়তে হতো বিশ্বকাপ থেকে। এখন পরের ম্যাচে দুর্বলতম পাপুয়া নিউগিনিকে হারালেই জোর সম্ভাবনা থাকবে সুপার টুয়েলভে ওঠার। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ওমানিজ পেসারদের দাপুুটে বোলিংয়ের সামনে শুরুতে নাজেহাল বাংলাদেশ নাইম শেখের অর্ধশতকেও ২০ ওভারে ১৫৩ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং ও বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে দারুণ শুরু করে ওমান কোণঠাসা করে বাংলাদেশকে। কিন্তু শেখ মেহেদি হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে সাকিব আল হাসান ৩ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৪ উইকেট শিকার করলে শেষ পর্যন্ত ওমান ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি। ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৪২ রান করে বল হাতেও অবদান রেখে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। টস জিতে আগের ম্যাচে ফিল্ডিং নিয়ে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওমানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নেন মাহমুদুল্লাহ। এদিন সৌম্য সরকারের পরিবর্তে নাইম শেখ সুযোগ করে নেন। আর প্রথম ম্যাচে প্রায় সমশক্তির পাপুয়া নিউগিনিকে (পিএনজি) ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে শুভ সূচনা করা স্বাগতিক ওমানও একটি বদলি নিয়ে নামে। ফায়াজ বাট সুযোগ পান খাওয়ার আলীর জায়গায়। এদিনও শুরুটা বাজে হয়েছে বাংলাদেশের। ওমানের পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে লিটন দাসকে (৬) এলবিডব্লিউ করে দেন এই অঞ্চলে টি২০ ক্রিকেটে সেরা পেসার বিলাল খান। আগের বলেও ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তিনি। ৩ ওভারে ১১ রান থেকে চতুর্থ ওভারে কলিমুল্লাহকে ১ চার, ১ ছয়ে নাইম রানের গতি বাড়িয়েছেন। কিন্তু ওয়ানডাউনে নেমে শেখ মেহেদি ফায়াজ বাটের বলে কট এ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান (০)। শেষ পর্যন্ত পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে মাত্র ২৯ রান তোলে বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ভাগ্যবান নাইম, ফায়াজের বলে যতিন্দর সিং ক্যাচ ড্রপের পাশাপাশি ছক্কাও দিয়ে দেন। ভাগ্যবান নাইমের সঙ্গে চার নম্বরে যোগ দেন সাকিব। এই জুটি বেশ দ্রুতগতিতে পরের ৪ ওভারে ৩৪ রান যোগ করলে শুরুর মন্থরতায় গতি আসে। ঠিক ৯ ওভার নাইম-সাকিব জুটি উইকেটে থেকে বাংলাদেশ দলকে বড় সংগ্রহ গড়ার ভিত দিয়েছেন। তারা মাত্র ৫৪ বলে ৮০ রান যোগ করেন। ১৪তম ওভারে রান আউট হয়ে যান সাকিব ২৯ বলে ৬ চারে ৪২ রান করে। এরপরে ব্যাটিং লাইনে আরেকটি পরিবর্তন এনে নুরুল হাসান সোহানকে পাঠালেও ৪ বলে ৩ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে একবার জীবন পাওয়া নাইমের অর্ধশতকে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচে নেমেই অর্ধশতক করেন তিনি ৪৩ বলে। জিশান মাকসুদকে চার হাঁকিয়ে চলতি আসরে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম হাফসেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। রান আরও বেশি হতে পারত, কিন্তু কলিমুল্লাহ ১৭তম ওভারের চতুর্থ ৫০ বলে ৩ চার, ৪ ছক্কায় ৬৪ করা নাইমকে সাজঘরে ফেরান এবং ওভারটির প্রথম বলেই আফিফ হোসেনকেও (১) শিকার করেন। ১৯তম ওভারের শুরুতেই পরপর দুই বলে ফায়াজের শিকার হন ৮ নম্বরে নামা মুশফিক (৬) ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (০)। সাতে নেমে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও শেষ পর্যন্ত টেকেননি। ১০ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৭ করার পর তাকে বোল্ড করে দেন বিলাল। ইনিংসের শেষ বলে মুস্তাফিজুর রহমানকেও (২) তিনি তুলে নিলে ১৫৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে ৪১ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত বোলিং করে বিলাল ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ও ফায়াজ ৩০ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজের করা প্রথম দুই ওভারে ১২ রান করে তুলে নেয় ওমান। যদিও দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজ এলবিডব্লিউ করে দেন আকিব ইলিয়াসকে (৬)। তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে কাশ্যপ প্রজাপতির ক্যাচ ছাড়েন মুস্তাফিজ এবং ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের প্রথম বলে অনেক উপরে ওঠা যতিন্দরের ক্যাচ ফেলে দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তখন মাত্র ৯ বলে ১০ রানে ছিলেন যতিন্দর। যদিও সেই ওভারেই প্রজাপতিকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। তিনি ১৮ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২১ রান করেছিলেন। তবু পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৭ রান তুলে বেশ উড়ন্ত সূচনাই পায় ওমান। জীবন পাওয়া যতিন্দরই সর্বনাশটা করেন। তবে মেহেদি স্পিন আক্রমণে আসার পর চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। তার দারুণ লাইন-লেন্থে রানের গতি কমতে থাকলেও ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭০ রান তুলে জয়ের আশা জিইয়ে রাখে ওমান। কিন্তু জিশান (১২) মেহেদির ও যতিন্দর সাকিবের শিকার হলে সব আশা শেষ হয়ে যায় তাদের। যতিন্দর ৩৩ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন। এরপর মুস্তাফিজ-সাকিবেই ধসে পড়েছে ওমান। শেষ ৬ ওভারে ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে তারা। মেহেদি ৪ ওভারে মাত্র ১৪ ও সাইফউদ্দিন ১৬ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট নিয়ে চাপ তৈরি করেন। আর সাকিব ও মুস্তাফিজ সেই সুযোগে তুলে নেন একের পর এক উইকেট। তাতেই বাংলাদেশ পায় স্বস্তির জয়। ৯ উইকেটে ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি ওমান। ৪ ওভার বোলিং করে সাকিব ২৮ রানে ৩টি ও মুস্তাফিজ ৩৬ রানে ৪টি উইকেট নেন। স্কোর ॥ বাংলাদেশ ইনিংস- ১৫৩/১০; ২০ ওভার (নাইম ৬৪, সাকিব ৪২, মাহমুদুল্লাহ ১৭; বিলাল ৩/২৮, ফায়াজ ৩/৩০ ও কলিমুল্লাহ ২/৩০)। ওমান ইনিংস- ১২৭/৯; ২০ ওভার (যতিন্দর ৪০, প্রজাপতি ২১, নাদিম ১৪*; ৪/৩৬, সাকিব ৩/২৮, মেহেদি ১/১৪, সাইফউদ্দিন ১/১৬)। ফল ॥ বাংলাদেশ ২৬ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
×