ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসবে কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৭ অক্টোবর ২০২১

স্মার্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসবে কৃষক

মনে পড়ছে সেই আশির দশকে যখন পুকুরে মাছ চাষের কথা গ্রামের কৃষককে বললে তখন কৃষক অবাক হতো। বলত, মাছের আবার চাষ কী? চাষ তো হয় ধান-পাটের। কৃষক ধান-পাট ছাড়া আর কোন কিছু চাষের কথা চিন্তাও করত না। রংপুর ও পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষ হতো। কোথাও কোথাও চাষ হতো পানের। খালে-বিলে হতো মাছের প্রাকৃতিক বংশবিস্তার। কৃষক পুকুর ব্যবহার করত কাপড় ধোয়া আর গোসলে। অথচ এই পুকুরে মাছ চাষ মেটাতে পারে তার পারিবারিক আমিষের চাহিদা, পাশাপাশি জোগান দিতে পারে বাড়তি অর্থ। কৃষককে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হতো ‘হাকিম আলীর মাছ চাষ’ নিয়ে অনুষ্ঠান। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেটি। এরপর বলা চলে সারা দেশে মাছ চাষের বিপ্লব শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ এখন মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। অন্যদিকে আমাদের বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন মাছের জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। সরকারের মাছ চাষের সম্প্র্রসারণ নীতি ও উদ্বুদ্ধকরণমূলক প্রচারণার ফলে মাছ চাষ এগিয়েছে অনেকটা। মৎস্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে দেশে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের এক হাজার গ্রামকে স্মার্ট ফার্মিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে ২০ লাখ কৃষক ও সাড়ে ৩ লাখ উদ্যোক্তা যুক্ত হবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে রবিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এন জিয়াউল আলম ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান। পলক বলেন, ‘উন্নত সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। আমরা স্মার্ট ফার্মিংয়ে উৎসাহিত করতে চাই, উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই। বিভিন্ন ধাপে এ লক্ষ্য পূরণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ গ্রামকে স্মার্ট ফার্মিংয়ের জন্য ডিজিটালাইজ করতে চাই। এতে ২০ হাজার কৃষক, তাদের জন্য ২০ হাজার আধুনিক কৃষি ডিভাইস, সাড়ে ৩ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হবে। ‘এভাবে ফেইজ ওয়ান, টু, থ্রি করে ২০৪১ সালের মধ্যে এক হাজার গ্রামের ২০ লাখ কৃষক এবং সাড়ে ৩ লাখ উদ্যোক্তা স্মার্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ ইকোসিস্টেমের জন্য আমাদের ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার, ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার, ডিজিটাল ভিলেজেস, এমএফএস, ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রান্সজেকশন প্লাটফর্মসহ অন্য অনুষঙ্গগুলোকে একত্র করে কাজ করব। ‘কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষিবিদ অর্থনীতি সমিতি এবং আইসিটি ডিভিশন মিলে সমন্বিতভাবে এ কাজ করা হবে। এর মাধ্যমে এই ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে টার্গেট, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের আধুনিক রূপ, প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ তৈরি হবে।’ উন্নত দেশগুলো এখন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্বব্যাপী মেধা, বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ, উদ্ভাবন কিংবা ধারণা সংগ্রহে নিয়োজিত। আর এ বিবেচনায় বহুদূর এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় তারা বিনিয়োগ করছে সর্বোচ্চ অর্থ ও মনোযোগ। তাই পেয়েও যাচ্ছে বর্তমান ও ভবিষ্যত পথের নতুন নতুন দিকনির্দেশনামূলক উদ্ভাবন আর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। এখানে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেক অনুসরণীয় নজির রয়েছে। এখানে আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণদের কাজ ও চিন্তা বিশ্বায়নের দিকে যতটা সাফল্যের সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে, দেশের অর্জন দেশে রাখার জন্য ততটা নীতিগত প্রস্তুতিও দরকার।
×