নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ ‘দেশ স্বাধীন অইলো। আমগোর গ্রামডা দুই ভাগ অইলো। অর্ধেক ভারতে। আর অর্ধেক আমরা বাংলাদেশে। ৫০ বছর অইলো। অহনও আমরা আগের মতোই। আমগোর দুঃখ-কষ্ট কেউ দেহে না। এডা সেতুর লাইগা আমরা কত নেতা, মেম্বার, চেয়ারম্যানগোরে কইলাম। কেউ দিলো না। এডার লাইগা মেলা কষ্ট অয়’। তিনি আরও বলেন, ‘যাতায়াতের এডা পথ অয়াই পোলাপানগোরে কষ্ট আরও বেশি। কালাঘোষা নদীর ওপর এডা সেতু অইলে এই কষ্ট করতে অইবো না’। এমন কষ্টের কথা বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী সীমান্তের অবহেলিত জনপদ হালচাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কৃষক সুরেন্দ্র কোচ।
জানা যায়, দেশের স্বাধীনতার পর পরই সীমান্তঘেঁষা কাংশা ইউনিয়নের ‘হালচাটি’ গ্রামটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। গ্রামের মাঝ দিয়ে হয় কাটাতারের বেড়া। বিভক্ত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। ওই গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসবাস। সবাই প্রায় আদিবাসী। তবে কোচ সম্প্রদায়েরই পরিবারের সংখ্যাই বেশি। গ্রামটির উত্তরে ভারতের ‘বারাংগাপাড়া হালচাটি’ গ্রাম। ভারত থেকে এ গ্রামের মাঝ দিয়ে নেমে এসেছে কালাঘোষা নদী। শুকনো মৌসুমে এ নদীতে থাকে হাটু পানি। বর্ষা এলে মাঝে মধ্যে আসে জোয়ার। পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী। কয়েকদিন বন্ধ থাকে হালচাটিসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচল। কিন্তু ওই নদীতে আজও একটি ব্রিজ নির্মিত না হওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীসহ আশেপাশের শত শত মানুষকে। তাদের চলাচলের সড়কটিও দু’পায়ে পাহাড়ি পথ। চলে না কোনো যানবাহন। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ গ্রামে। ফলে পরিবর্তন হয়নি আদিবাসী অধ্যুষিত অধিবাসীদের জীবন-মানের। বরং আবাসস্থলটিই যেন এখন দুঃখ তাদের।
হালচাটির সমস্যা সমাধানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী। তিনি বলেন, আমরাতো কোনো বরাদ্দ পাই না। স্থানীয় চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিলে ত্রাণের টাকায় অন্তত: সেতুটি তো করতে পারে। কিন্তু সে বিষয়ে দেখি না কোন পদক্ষেপ। দৃষ্টি নেই এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্য কারও।
এ ব্যাপারে কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আমারতো সময় শেষ। সেখানে প্রশাসনের লোকজনসহ বিজিবির সদস্যরাও চলাচল করেন। বর্ষা এলে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সেখানে সেতু নির্মাণ হবে। অন্যদিকে অবহেলিত গ্রামটির জীবনমান উন্নয়নে কোন উদ্যোগ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা তো উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তার মতে, তারা না দেখলে ইউনিয়ন পরিষদের ওই দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা নেই।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: