ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে স্বস্তি

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ টাকা

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৬ অক্টোবর ২০২১

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজিতে দাম কমেছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে দাম কমার কারণে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৬০-৬৫ এবং আমদানিকৃত ভারতীয়টি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে আনার পর বাজারে দাম আরও কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমলেও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সব ধরনের মুরগির দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৮৫-১৯০ টাকায়। গত কয়েক বছরের মধ্যে এই দাম বেশি। বাজারে শাক-সবজি, মাছ, ভোজ্যতেল, মোটা চাল, ডাল ও আটার দাম বেড়েছে। তবে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার হওয়ার কারণে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে চিনির দাম। এছাড়া রসুন, আদা ও আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে সোনালি মুরগি ৩৬০ টাকা, পাকিস্তানী কক ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং দেশী মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খামারিরা সিন্ডিকেট করে মুরগির দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে দ্রুত গড়ে উঠছে খামারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগির সরবরাহ অনেক কম, যে কারণে দাম বাড়ছে। কেউ কেউ বলছে, বাচ্চার দাম বাড়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন। তবে মুরগির দাম বাড়ায় নগরীর বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে যাওয়া নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে গিয়ে তাদের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে বাজার করছিলেন তিলপাপাড়ার বাসিন্দা মাহবুর ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু মুরগি নয়, নিত্যপণ্যের বাজারে এমন কোন জিনিস নেই যে দাম বাড়েনি। বাসায় মেহমান এসেছে, মুরগি ছাড়া তো উপায় নেই। দাম এত বেশি যে, প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অল্প পরিমাণ মুরগি কিনেছি। আড়তদারদের কাছ থেকে এখন তাৎক্ষণিকভাবে মুরগি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন, গোড়ান কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা মোঃ হান্নান তালুকদার। তিনি জানান, মুরগি আনতে হলে এখন আগের দিন ফোনে অর্ডার করে রাখতে হয়। খামারিরা প্রতিদিনই দাম বাড়াচ্ছে। খামারিরা সিন্ডিকেট করে ব্রয়লার মুরগিসহ সব ধরনের মুরগির দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যদিও এ খাতের উদ্যোক্তারা বিশেষ করে খামার মালিক, বাচ্চা আমদানিকারক, টিকা ও মুরগির ভ্যাকসিন আমদানিকারক ও ফিড উৎপাদনকারীগণ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ও ভর্তুকি পেয়ে থাকেন সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু পেঁয়াজ, চাল, আলু ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের মতো একই কায়দায় এখন মুরগির দাম বাড়িয়ে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করা হচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা ও কয়েক হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি সুবিধা গ্রহণ করে এখন দাম বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুরগির খামার মালিকসহ এ খাতের সহযোগী উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা উচিত। অন্যথায় মুরগির দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে জানান কাপ্তান বাজারের পাইকার আমজাদ মুরগি হাউসের মালিক রাশেদ চৌধুরী। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সোনালি মুরগি ৩১০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকায়, ব্রয়লার ২৭০ টাকা থেকে ২৭৫ টাকা, লেয়ার লাল ২১০ থেকে ২২০ টাকা, লেয়ার প্যারেন্টস ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। মুরগির দাম বাড়ার পেছনে বাচ্চা উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট দায়ী বলে মনে করেন তিনি। সিন্ডিকেট চক্র মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়েছে। এদিকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে আসায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসলেও অন্যান্য পণ্যে অস্বস্তি রয়েছে ভোক্তাদের। এছাড়া টিসিবি ৩০ টাকায় প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে। শ্যামবাজারে ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ জনকণ্ঠকে বলেন, পূজা ও বন্যার কারণে আমদানি কমায় পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহ বেড়েছিল। এখন পেঁয়াজের আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে। এদিকে, শীতকালীন শাক-সবজিতে রয়েছে বাজারে কিন্তু দাম খুব চড়া। বাজারে প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিকেজি শিম ১০০ এবং প্রতিপিস লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৭০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব ধরনের দেশী মাছের দাম চড়া। এছাড়া দাম বেড়ে প্রতিকেজি সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬৫-৭২, মোটা চাল ৪৮-৫০ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। মানভেদে ৫ লিটারের বোতল সয়াবিন ৭২০-৭৫০, মসুর ডাল প্রতিকেজি মানভেদে ৯০-১২০, আলু ২০-২৫, আটা প্যাকেট প্রতিকেজি ৩৫-৪০ ও চিনি ৭৫-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×