স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে।
এই দিনটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে, যার অন্যতম কারণ ছিল প্রায় দেড় বছরের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা। এছাড়া অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এসময় প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকা, প্রবাসি শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসা যারা কিনা ভাল পাত্র হিসেবে সমাজে আদৃত, পরিবারের আয় কমে যাওয়া এবং কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা ইত্যাদি। এর ফলে, দেশব্যাপি ঝরেপড়া স্কুলছাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে, যা সম্প্রতি স্কুল খুলে দেওয়ার পর শ্রেণীকক্ষের তাদের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে। বক্তারা বলেন, দ্রুত সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা না গেলে আমাদের কন্যারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আরো পতিত হবে। পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিটির সদস্য তামান্না রহমান, আবু হানিফ, বেলাল হোসেন, লুৎফর রহমান লাবু, মাসুদা ফারুক, পি এম বিল্লাল, রাশিদা বেগম, শেখ আসাদ, খন্দকার ফারুক আহমেদ, তাহরিমা আফরোজ, আশরাফুল হাসান তাইমুর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ইক্যুইটিবিডি’র মোস্তফা কামাল আকন্দ এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেন ফেরদৌস আরা রুমী।
ফেরদৌস আরা রুমী মূল বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফ এর মতে, সারাদেশে ৪০ লাখের বেশি বালিকাবধু। তারওপর করোনা মহামারীতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে বাল্যবিবাহ। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে প্রশাসনসহ আইন আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী মহামারী নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় বাবা-মায়েরা এই সুযোগ কজে লাগাচ্ছেন। এসময় বিয়ে বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে-ভাল পাত্র, বাড়ির মুরব্বির ইচ্ছা পূরণ, ছেলে-মেয়ের প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার ভয়, শিশু যৌন হয়রানি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অর্থনৈতিক অসংঙ্গতি ইত্যাদি। বিদ্যালয়ে পাঠদান নিয়মিত থাকলে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় যেমন ব্যস্ত থাকতো তেমনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত ক্লাবগুলোও সচল থাকতো।
তামান্না রহমান বলেন, করোনায় স্কুল থেকে ঝরেপড়া ছাত্রীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েছে যাদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এসব বিয়ের অধিকাংশই নিবন্ধন হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে কোন আইনি সহায়তা দরকার হলে তারা বঞ্চিত হবে। খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, করোনার শুরুতে মানুষ চলাচল কম থাকায় বাবা-মা হাতের কাছে যোগ্যপাত্র পাওয়া মাত্র বিয়ে দিয়েছেন।
মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রশাসন বা আইন শৃংখলা বাহিনী এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারের গৃহিত উদ্যোগগুলো কার্যকর ছিল না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন অভিভাবকগণ। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে মেয়েরা গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়াশোনা করলে বাল্যবিয়ের আশংকা কমে যায়। বরং কন্যাসন্তানদের পড়াশোনায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত।
লুৎফর রহমান লাবু বলেন, করোনায় মেয়েশিশুরা নানা দিক থেকে হুমকির মধ্যে ছিল। অন্যদিকে স্কুল কবে খুলবে এই অনিশ্চয়তায় কিংবা যদি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তাই পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে অভিভাবকরা কন্যা সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন। কিš‘ পরিবারের সম্মান একটি বাজে ধারণা। আশরাফুল হাসান তাইমুর বলেন, আনন্দের খবর এই যে- করোনার সাথে তাল মিলিয়ে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ সারাদেশের চিত্র বলে দিচ্ছে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাল্যবিবাহ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো সচল রাখা যাবে।
শামীমা আক্তার বলেন, ‘ছেলেমেয়ে পৃথক নয়’-অভিভাবকদের চিন্তার জগতে এই পরিবর্তনটি আনতে হবে। কন্যাসন্তান যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ সবার উদ্যোগি ভূমিকা রাখাও জরুরি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৬০ টির বেশি জেলায় উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: