ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাই নতুন সূর্যোদয়

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০২১

চাই নতুন সূর্যোদয়

কথায় আছে- একজন বাবা আর মা দশজন সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারলেও দশজন সন্তান একজন বাবা আর মায়ের দায়িত্ব নিতে পারে না। কতটা অক্ষম আমরা সন্তানেরা! অথচ এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে সন্তানের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টা করে যায়। নিজে ভাল না খেয়ে, না পরে সন্তানকে একটু ভাল খাওয়ানো-পরানোর চিন্তায় মগ্ন থাকে। এমনকি সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় নিজেদের একাকীত্বের দিকে না তাকিয়ে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাতেও দ্বিধা বোধ করেন না। আশায় থাকে, বড় হয়ে সন্তান তাঁদের দেখবে। কিন্তু সত্যি কি তা হয়? সন্তানেরা বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা ভুলে যায়। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তাঁদের একটু চোখের দেখাটাও দেখতে যায় না। আর বৃদ্ধ বয়সে সেই বাবা-মা আশায় পথ চেয়ে থাকে- সন্তান তাঁর আসবেই। অনেক বড় চাকরি করে সে, অনেক দায়িত্ব তার। তাই সময় পাচ্ছে না। সময় হলেই আসবে। এভাবে নিজেদের তৈরি মিথ্যে সান্ত¦¦নায় এক সময় নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে যায়। বুক ভরা অভিমান নিয়ে কখনও তারা চলে যায় না ফেরার দেশে। তবু কখনও সন্তানের অমঙ্গল চায় না, তাদের প্রতি বিরক্ত হয় না। মন ভরে তাদের জন্য দোয়া করে যায়। সেই বাবা-মায়ের জন্যেই সন্ত¦ানদের সময় হয় না। প্রায় প্রতিটি সংসারেই থাকে প্রবীণ সদস্য। এককালে যে মানুষটি ছিলেন কর্মপ্রাণ, উপার্জনক্ষম। সময়ের ব্যবধানে তিনিই হয়ে পড়েন কর্মশক্তিহীন। অনেক সময় বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিরও শিকার হন। তখন তাঁর প্রয়োজন সেবা, স্বজনের সান্নিধ্য। অথচ অনেক ক্ষেত্রে সংসারের অপর সদস্যরা এ বিষয়ে থাকেন উদাসীন। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। কিন্তু তাঁদের সেই আচরণেও সন্তানরা অনেক সময় বিরক্তি প্রকাশ করে। তাদের সুখের অন্তরায় মনে করে বৃদ্ধ বাবা-মাকে। যার ফলশ্রুতিতে বাবা-মায়ের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যে বয়সে এই মানুষগুলো আপনজনদের সান্নিধ্য কামনা করে, সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনি নিয়ে বাকিটা জীবন হাসি-আনন্দে কাটাতে চায়, সেই বয়সে তাঁরা হয় চরম অবহেলিত। এ নিয়ে অনেক নাটক, সিনেমাও তৈরি হয়েছে। কলকাতায় ‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’ নামে একটা ছবি দেখেছি। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে একজন বয়সী মা কতটা একাকীত্ব অনুভব করে। সন্তানরা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে ৪ বছর মা’কে দেখতে আসে না। মায়ের অসুখের সময় খবর দিলেও তারা নানা কাজের উসিলায় আসে না। থার্মোমিটারে জ্বর দেখার মানুষটাও তাঁর পাশে ছিল না তখন। একদিন মিথ্যে বলে তাদের বাড়ি আনা হয়। তবু তারা আসে সম্পত্তির লোভে। অথচ তারা বুঝতেই চায় না এই বৃদ্ধ বয়সে মানুষটা তাদের সঙ্গ চায়। রোগ-শোকে তাদের পাশে চায়। মন খারাপ আর অভিমান- এই নিয়েই তাঁরা কাটিয়ে দেয় জীবন। দিন যত যাচ্ছে সমাজে এই প্রবীণ মানুষগুলো তত বেশি অবহেলার শিকার হচ্ছেন। রামপুরা, ঢাকা থেকে
×