ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে তলব

পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তথ্যবিভ্রাট, হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তথ্যবিভ্রাট, হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণীর সরকারী পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১০ নবেম্বর তাদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রবিবার এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আলী মুস্তফা খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। ডেপুর্টি এ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮৭ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানকে মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। একই বইয়ের ১৭৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ না লিখে লেখা হয়েছে আছে দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের লাইনটিও ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় বঙ্গভবনকে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভবন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল পাঁচ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সংবিধানের কোথাও আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যের কথা উল্লেখ নেই। এমন অনেক ভুল সংশোধন করতে অনেক অভিভাবক এনসিটিবিকে চিঠি দিলেও কর্ণপাত করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক অভিভাবক। রিটকারী আইনজীবী জানান, তারা চান দ্রুত এই রিটের শুনানি হোক। কারণ নতুন শিক্ষাবর্ষে এসব ভুল সংশোধন না হলে আবারও শিক্ষার্থীদের হাতে ভুল বই যাবে। তাই হাইকোর্টে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিটের রুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্য বইতে থাকা ভুল সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ন্যাশনাল কারিকুলাম এ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য (কারিকুলাম), সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট আবেদনটি দায়ের করেন মোঃ আলমগীর আলম। আবেদনে বলা হয়, সপ্তম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে ১০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ‘এ নির্বাচন ছিল শুধু পূর্ব পাকিস্তানের।’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সব প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়েছিল। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে শিরোনাম-মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি : ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এক সাহসী, ত্যাগী, ও দূরদর্শী নেতার ‘আবির্ভাব’ হয়। অথচ প্রকৃত সত্য এ যে, বঙ্গবন্ধু হঠাৎ কোন ‘আবির্ভূত’ নেতা নন। তিনি তিলে তিলে বাঙালী জাতির নেতা হয়ে উঠেছেন। অষ্টম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মাইল’ এর স্থলে ‘কিলোমিটার’ হবে। নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২ থেকে ৯ নম্বর পৃষ্ঠার বিভিন্ন জায়গায় ‘শেখ মুজিব’ লেখা হয়েছে। অথচ বর্তমানে সব ক্ষেত্রে ‘বঙ্গবন্ধু’ লিখতে হবে। ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি’ এর স্থলে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি’ হবে। ২৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘প্রেসিডেন্ট ভবন’ এর স্থলে ‘বঙ্গভবন’ হবে। এসব ভুল উল্লেখ করে রিট করা হয়।
×