ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষুব্ধ

জেলায় বিনা ভাড়ায় মিলছে না মিলনায়তন

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

জেলায় বিনা ভাড়ায় মিলছে না মিলনায়তন

মনোয়ার হোসেন ॥ মহামারীর অভিঘাতে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নৃত্যানুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাট্য মঞ্চায়নসহ নিত্যদিনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। এমন বাস্তবতায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছে সরকারী সহযোগিতা। আগামীবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশের শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসমূহ বিনা ভাড়ায় বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রæপ থিয়েটার ফেডারেশানসহ প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সাময়িককালের জন্য ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফ করলেও সেটা আগামীবছরের জুন পর্যন্ত দেয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এদিকে ঢাকার সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়া হলেও জেলা পর্যায়ে শিল্পকলার মিলনায়তনের ভাড়া গুণতে হচ্ছে সংস্কৃতিকর্মীদের। এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিরাজ করছে হতাশা। এর বাইরে প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সংগঠন প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে। এই দাবির বিষয়েও এখনও নিশ্চুপ রয়েছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টির সমাধানে আসেনি কোন সিদ্ধান্ত। শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, করোনার সঙ্কটকালে ২০২০ সালের মার্চ থেকেই ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির সব মিলনায়তন বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়া হয়। সেটা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি অনুযায়ী আগামীবছরের জুন পর্যন্ত ভাড়া মওকুফের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিনা ভাড়ায় হল বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার শিল্পকলা একাডেমির নেই। এ বিষয়ে শিল্পকলার পক্ষ থেকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন ভাড়া মওকুফের ক্ষমতা নেই একাডেমির। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকরা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন। সেক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে হল ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কারণ, সরকারী আয়ের একটি উৎস জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো। মিলনায়তন ভাড়া নিয়ে জেলাপর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চা গতিশীল রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য। এ বিষয়ে নাট্যকার ও হবিগঞ্জ জেলার নাট্য সংগঠক রুমা মোদক জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি। নাট্য প্রদর্শনীর জন্য বিনা ভাড়ায় হল চাইলে জেলার কালচারাল অফিসার জানান, হল ভাড়া মওকুফ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই। যেহেতেু নির্দেশনা নেই তাই আট হাজার টাকা হল ভাড়া দিয়েই নাটক মঞ্চস্থ করতে হবে। সঙ্গে কার্ড সিস্টেমে বিদ্যুত বিলও পরিশোধ করতে হবে। যেখানে একটি নাটকের টিকেট বিক্রি থেকে আট হাজার টাকা আয় হয় না সেখানে আমরা কিভাবে ভাড়া দিয়ে নাট্যচর্চা চালিয়ে যাব। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা আরও কঠিন হয়েছে। এমনিতে থিয়েটার দলগুলোর জন্য সেই অর্থে কোন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা নেই। মূলত ভালোবাসা বা আবেগের জায়গা থেকে নিজের পকেটে পয়সা খরচ করে আমরা থিয়েটার-চর্চা করি। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমির নাট্যকর্মী নাঈম রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন ? ঢাকার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিনা ভাড়ায় মিলনায়তন পেলে আমরা কেন বঞ্চিত হবো ? শুধু ঢাকার দলগুলো বিনা ভাড়ায় মিলনায়তনের বরাদ্দ পাবে। তাহলে সারাদেশের নাট্যদলগুলো কি হল ভাড়া দিয়েই থিয়েটার করবে ? অধিকার কি সবার সমান না ? সারাদেশের জন্য আইন কি এক নয় ? আমরা সার্বজনীন অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। এ বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংস্কৃতি কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির সকল মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক। তাহলে জেলা শহরের শিল্পকলার মিলনায়তনের ভাড়া কেন মওকুফ করা হচ্ছে না। শুধু আপাতকালীন নয় আগামী এক বছরের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীতানুষ্ঠানসহ সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য হল ভাড়া মওকুফের দাবি জানাই। পাশাপাশি করোনার সঙ্কটকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানাই। এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ঢাকার বাইরে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়ার জন্য আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। আগামীবছরের জুন পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এটাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এক্ষেত্রেই শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নেই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে হল ভাড়া মওকুফের নির্দেশনা দেয়ার পরই বিষয়টি বাস্তবায়িত হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদেশের শিল্পকলা একাডেমির সকল মিলনায়তন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছি। ঢাকার শিল্পকলার মিলনায়তন বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ প্রক্রিয়া আগে থেকেই অব্যাহত আছে। আর সারাদেশের বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। এখন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফেরার পর তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। আমরা চাই, সারাদেশের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বিনা ভাড়ায় মিলনায়তন বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। সংস্কৃতিকে জাগরিত করতে হলে এসব দাবি মানতে হবে। সেই সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থ কিংবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেও এ বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে হবে। সংস্কৃতিকে গতিশীল রাখতে হলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। নইলে মননশীল জাতি গঠনের আকাক্সক্ষা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে মৌলবাদী অপশক্তি তার ডালপালা বিস্তার করবে। সেই সুযোগে বাড়বে জঙ্গীবাদ ও ধর্মান্ধতা। জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন ভাড়া মওকুফ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রণোদনার বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোন জবাব দেননি।
×