ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পূজার আগেই প্রীতিবন্ধন

দুই বাংলার বাঙালী এক হচ্ছে রুপালি ইলিশে

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

দুই বাংলার বাঙালী এক হচ্ছে রুপালি ইলিশে

মোরসালিন মিজান ॥ এক বাঙালী। দুই বাংলায় ভাগ হয়ে আছে। ১৯৪৭ সালের নিষ্ঠুর দেশভাগের মধ্য দিয়ে ভৌগোলিক এই বিচ্ছিন্নতার সূচনা হয়েছিল। অন্নদা শঙ্কর রায় কবিতায় লিখেছিলেন, তেলের শিশি ভাঙল বলে/খুকুর ’পরে রাগ করো/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো...। বুড়ো খোকাদের ভাঙা গড়ার খেলায় আরও অনেক কিছু ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। তবে দুই অংশের বাঙালীর হৃদয়াবেগ আজও প্রায় অভিন্ন। টানাপোড়েন থাকলেও আত্মিক যোগাযোগে বড় বেশি বিচ্ছেদ ঘটেনি। তাই নানা উপলক্ষে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। আর পূজার সময় এ যোগাযোগ ঘটাতে সাহায্য করে রূপালী ইলিশ। সারা বছর বন্ধ থাকলেও এ সময় ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে এটা মোটামুটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। এবারও রীতিটি অনুসরণ করা হচ্ছে। দুর্গোৎসব সামনে রেখে ইতোমধ্যে এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় পৌঁছতে শুরু করেছে রূপালী ইলিশ। তাতেই উৎসবের আগে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে। বাঙালীকে বরাবরই ‘ভাতে মাছে বাঙালী’ বলা হয়। আর এ মাছের আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে ইলিশ। পাতে এক টুকরো ইলিশ হলে বাঙালীর আর কিছু চাই না। বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালীর বাস সে প্রান্তেই রয়েছে ইলিশের চাহিদা। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ইলিশের চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ইলিশের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ওপার বাংলার বাঙালীদের অনেকেরই জন্ম এপার বাংলায়। শৈশবে খাওয়া ইলিশের স্বাদ তাদের মুখে লেগে আছে। কিন্তু এখন দুই দেশের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ায় বিঁধে ছটফট করে ইলিশও। তথাপি পূজার সময় মাছটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আরও কিছু উদ্যোগের কারণে গত কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। গত ১১ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। এ কারণে ২০১২ সাল থেকে রফতানি বন্ধ থাকলেও কয়েক বছর ধরে পূজার সময় সীমিত পরিসরে ইলিশ রফতানি হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বন্ধের মধ্যেই ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৫০০ টন ইলিশ রফতানি করে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ২০২০ সালে এক হাজার ৪৫০ টন ইলিশ রফতানি হয়। চলতি বছর দুই হাজার ৮০ টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ৪০ টন করে মোট ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে এই রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এই অনুমোদন কার্যকর থাকবে। এরই মাঝে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ পাঠানো শুরু হয়ে গেছে। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পেট্রাপোল হয়ে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ। সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, বুধবার এ বন্দর দিয়ে ২৩ টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ৫টি ট্রাকে করে এসব মাছ বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায়। তার আগে বেনাপোল মৎস্য অধিদফতরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মাছের নমুনা পরীক্ষা করেন। খুলনার সাউদার্ন ফুড লি. ১৩ টন ও ঢাকার ইউনিয়ন ভেন্টার লি. ১০ টন ইলিশ রফতানি করে। কলকাতার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জে কে ইন্টারন্যাশনাল ও সিদ্ধেশ্বরী এন্টারপ্রাইজ মাছ গ্রহণ করে। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের রফতানি মূল্য এক কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ৬ মার্কিন ডলার। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মূল্য প্রতি কেজি ১০ মার্কিন ডলার বলে জানা গেছে। বাকি মাছও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রফতানি হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি শাখার উপসচিব তানিয়া ইসলাম বলছেন, রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে বটে, মূল উদ্দেশ্য বাঙালিত্বের উদ্যাপন। পূজার সময় ইলিশ পাঠানোর মাধ্যমে আমরা এ উদ্যাপনে অংশ নিয়েছি।
×