ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঠাকুরগাঁওয়ে ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উপভোগ ও বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্র-নৃতাত্বিকগোষ্ঠি ওঁরাও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। কারাম একটি গাছের নাম। ওড়াঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা গাছটিকে পবিত্র এবং মঙ্গলেরও প্রতীক মনে করেন। প্রতি বছর বাংলা আশ্বিন মাসের শুরুতে এ উৎসবকে ঘিড়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে উঠে। উৎসবের প্রথম দিন ওড়াঁও সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। সেই ডাল তাদের স্থায়ী বা অস্থায়ী পূজা মন্ডপে রেখে পূজা-অর্চনা, নাচ-গান ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করে। এর পরই বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া চাল, ডাল ও টাকা দিয়ে খাওয়ার আয়োজন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য। কথিত আছে আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতো। আর সেই গাছ একদিন কর্মা তুলে নিয়ে নদিতে ফেলে দেয়। তখন নানা বিপদ-আপদ ও অভাব দেখা দিলে আবার সেই গাছ খুজেঁ আনা হয়। তখন থেকে সেই গাছকে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সকল বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় তার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত এই কারাম পূজা করা হয় । শুক্রবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে গভীররাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামে উড়াও মহল্লায় কারাম পূজা উদযাপন কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা শাখা ও ইএসডিও প্রেমদীপ প্রকল্প’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন, পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন, নারী কল্যাণ ক্লাবের সভাপতি, জান্নাতুল ফেরদৌস ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। কারামপূজা উদ্যাপন কমিটি’র সভাপতি বিশ্বানাথ কেরকাটার সভাপতিত্বে উৎসব অনুষ্ঠানে, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, জেলা যুবলীগের সভাপতি সমীর দত্ত, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মুকুল, জাতীয় পরিষদের উপদেষ্টা এডভোকেট ইমরান চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী প্রমুখ বলেন, সরকারী সহায়তা ও উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা থাকলে এই ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবটি ধরে রাখা সম্ভব । সবশেষে আজ শনিবার দুপুরে আবারো নেচে-গেয়ে ও পুজা অর্চনার মধ্যদিয়ে স্থানীয় নদীতে কারামের ডালটি বিসর্জন দিয়েই শেষ হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এছাড়া প্রতিবছর জেলার গোবিন্দনগর, জগন্নাথপুর, চন্ডিপুরসহ কয়েকটি গ্রামে ওঁরাও সম্প্রাদায়ের আদিবাসী নারী-পুরুষ কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
×