ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতারক এহসানকে পদক দিয়েছিলেন সাবেক জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রতারক এহসানকে পদক দিয়েছিলেন সাবেক জেলা প্রশাসক

অনলাইন রিপোর্টার ॥ পিরোজপুরে সাধারণ মানুষের কাছ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করে নেওয়া মুফতি রাগীব এহসানকে ‘সফল সমবায় পদক’ দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। ২০১৪ সালে ৪৩তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে এহসানের মালিকানাধীন এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সুদবিহীন মুনাফার প্রলোভন দেখাতেন এহসান। জেলা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়েও যোগাযোগ ছিল তার। জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত পদকও পেয়েছেন। একারণে সাধারণ মানুষ তাকে অন্ধবিশ্বাস করে টাকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব ১০-এর একটি দল রাজধানীর শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাগীব এহসান ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে। ওই দিন বিকালেই পিরোজপুর থেকে তার দুই ভাই মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও খাইয়রুল বাশারকে গ্রেফতার করে স্থানীয় থানা পুলিশ। হারুন অর রশীদ নামে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক এহসান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে পিরোজপুরে আরও অন্তত তিনটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া যশোরসহ অন্যান্য এলাকাতেও প্রতারণার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে এহসান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পিরোজপুরে মোট ৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতরা এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় রেখেছেন তাও জানার চেষ্টা চলছে। র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক রাগীব এহসান মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ‘সুদবিহীন মুনাফা’র কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড হলো সবচেয়ে পুরনো। সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রথম থেকেই এহসান মাল্টিপারপাস প্রতারণা করে আসছিল। কিন্তু বিষয়টি যাদের দেখভাল করার কথা, সেই জেলা সমবায় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এহসানকে উল্টো পদক ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এগুলো দেখিয়ে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মাল্টিপারপাস সমিতির আড়ালে এহসান রিয়েল স্টেট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডকে সফল সমবায় সমিতির সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন এ কে এম শামীমুল হক ছিদ্দিকী। জেলা সমবায় কর্মকর্তা ছিলেন মনিরুজ্জামান তালুকদার। মনিরুজ্জামান বর্তমানে এলপিআরে রয়েছেন। এ কে এম শামীমুল হক ছিদ্দিকী নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত। যোগাযোগ করা হলে শামীমুল হক ছিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক আগের বিষয়। পুরোপুরি মনে নেই। কাকে সনদ বা পদক দেওয়া হবে তা ঠিক করে জেলা সমবায় অফিস। তারাই ভালো বলতে পারবে।’ পিরোজপুরের জেলা সমবায় কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি সাত মাস আগে পিরোজপুরের জেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যেই রাগীবকে একাধিকবার গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে তাগাদা দিয়েছিলেন। আগের বিষয়গুলো তার জানা নেই।
×