ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজির ৩ অভীষ্ট দ্রুত পূরণ

বহুমাত্রিক পল্লী সমবায় গড়ে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:১২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

বহুমাত্রিক পল্লী সমবায় গড়ে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত করা হচ্ছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ সমবায়ের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রমে সাফল্য আসছে। এই সাফল্য শক্তিশালী করছে স্থানীয় সরকারকে। বগুড়া অঞ্চলে সমবায় সমিতির মাধ্যমে সদস্যরা নিজেদের মেধা শ্রম দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বগুড়ার ১২ উপজেলায় গড়ে উঠেছে আড়াই হাজারের বেশি সমবায় সমিতি। যার মধ্যে বগুড়া সদরেই আছে প্রায় ৩শ’ সমিতি। প্রতিটি এলাকায় সমবায় সমিতি গড়ে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক সম্প্রতি বগুড়া সফরকালে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম কৌশল ছিল সমবায়ের আদর্শ ধারণ করে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন পৌঁছানো। মন্ত্রণালয়ের নামকরণ হয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়। স্থানীয় সরকারে সমবায়ের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বহুমাত্রিক পল্লী সমবায় গড়ে তুলে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশে সমবায় সমিতির রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সমবায় কর্মকর্তা জানান, বগুড়ায় ২ হাজার ৫২৯টি সমবায় সমিতির প্রায় ১১ হাজার সদস্য ৮ বছর ধরে তাদের পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। বগুড়া সদরের মালগ্রামে কয়েক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী চাকরির পেছনে না ঘুরে ‘জিনিয়াস সেফ ফুড এ্যান্ড কনজিউমার প্রোডাক্ট’ নামে সমবায় সমিতি কার্যক্রম শুরু করে। খাদ্য নিরাপত্তায় পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ৬১ ধরনের খাদ্যপণ্য বিপণন করছে তারা। উত্তরাঞ্চলের বগুড়া থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত তাদের ডিলার আছে ৫৬ জন। সমবায়ী এই সদস্যরা এখন বেকার যুবকদের চাকরি দিচ্ছে। বগুড়া সদরের সাবগ্রামের একটি সমিতির সভাপতি আলম জানালেন, নারীরা সংগঠিত হয়ে সমবায় সমিতি গড়ে তুলে বিছানার চাদর, বালিশ কুশন কভার মেয়েদের জামা ইত্যাদি পণ্য তৈরি করছে। শাহজাহানপুর উপজেলার চকলোকমান এলাকার পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবু হাসনাত সাঈদ জানালেন, বগুড়ার অন্তত ৮০টি গ্রামে নারীদের নিয়ে সমিতি গড়ে তুলে নকশী কাঁথা, তালের আঁশের জিনিসপত্র তৈরি করে নিচ্ছেন। নকশী কাঁথা রফতানি হচ্ছে বিদেশে। সমবায় সমিতির সদস্য লাবনী বললেন, সেলাইয়ের কাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা দিচ্ছেন একই সঙ্গে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর অক্টোবর মাসে বগুড়া রুরাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমিতে (আরডিএ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল আহসান দেশের উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ে সমবায় আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, সমবায় মনোভাব গড়ে তুলে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিপণনের ব্যবস্থা করে দিলে নির্ধারিত সময়ের (২০৩০) আগে জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমন্টে গোলের (এসডিজি) প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভীষ্ট (যথাক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও সুস্বাস্থ্য) অর্জন করা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সমবায় আন্দোলনের অন্যতম ধাপে বগুড়া আরডিএ ও কুমিল্লার বার্ড (বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট) পরীক্ষামূলক প্রকল্পে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির আইল তুলে দিয়ে (আইলবিহীন) ফসল উৎপাদনে সাফল্য এনেছে। জমির মালিকগণ সমবায়ের ভিত্তিতে আবাদ করে অধিক ফলন পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ফসল উৎপাদনে ও বিপণনে সরকার সহযোগিতা করেছে। করোনার কারণে সার্বিক আবাদ কার্যক্রমে ভাটা পড়ছে। তবে কৃষক বিচ্ছিন্নভাবে সমবায় সমিতি গড়ে তুলে আবাদ করেছে। এভাবে আগামীতে আরও অধিক জমি সমবায়ের আওতায় আসবে।
×