ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে টিকা কেন্দ্রে বেশ চাপ, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৬ আগস্ট ২০২১

চট্টগ্রামে টিকা কেন্দ্রে বেশ চাপ, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে টিকা কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে অত্যধিক চাপ। টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি গণটিকার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনায় বৃহস্পতিবার প্রতিটি কেন্দ্রেই ভিড় আগের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সে কারণে রীতিমতো হুড়োহুড়ি অবস্থা। হাসপাতালগুলোর টিকা কেন্দ্রে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি। এছাড়া নিবন্ধনে নির্দিষ্ট তারিখের মেসেজ না আসা এবং সিরিয়াল অনুসরণ না করায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের জটলা। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার নগরীর সরকারী জেনারেল হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে এসে মানুষ রীতিমতো গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে সিরিয়ালে। কার আগে কে যাবে এ নিয়ে চলছে বিশৃঙ্খলা। তবে টিকা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ কক্ষ নামে থাকলেও কার্যত কোন কাজেই আসছে না। টিকাদানের এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কয়েকদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন ১১ আগস্ট থেকে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন না নিয়ে ১৮ বছরের উর্ধে কোন ব্যক্তি বাইরে বের হলে শাস্তি প্রদান করা হবে, এমন সিদ্ধান্তের পর গত বুধবার থেকেই টিকা কেন্দ্রে হঠাৎ ভিড় বেড়ে যায়। এরপর গত বুধবার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করা হলেও সাধারণ মানুষ বিষয়টি ওয়াকিবহাল না হওয়ায় তা কেন্দ্রে ভিড় বেড়েছে। অপরদিকে বুধবার রাতে চসিক ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, শুধু ৭ আগস্ট গণটিকার কার্যক্রমের অংশ হিসেব নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত জানার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভিড় জমান টিকাগ্রহীতারা বিভিন্ন কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায় নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত ভিড়ে পা ফেলা দায়। হাসপাতালের মূল ফটকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মোঃ ইসমাইল বলেন, মেসেজ পেয়ে টিকা নিতে আসছি, অথচ অনেকে মেসেজ ছাড়া সিরিয়াল না মেনে ভেতরে ঢুকেছেন। টিকাগ্রহীতারা অভিযোগ করেন, একাধিক সিদ্ধান্তের কারণে টিকাদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা টিকা নিতে ভিড় করেছেন। বিশেষ করে টিকা না নিয়ে বের হলে শাস্তির কথা শুনে টিকা নিতে আসছেন অধিকাংশ লোকজন। অধিকাংশ টিকাগ্রহীতা নিবন্ধন করেই টিকা কেন্দ্রে ছুটেছে ৭ আগস্টের পর আর টিকা দেবে না এমন গুজবে। মাস্ক থুঁতনিতে রেখে গা ঘেঁষে মানুষ টিকা নিতে মরিয়া। সদরঘাট এলাকার সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে বেলা ২টায় দেখা যায়, বাইরে কয়েকশ’ টিকাগ্রহীতা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। টিকাগ্রহীতারা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ করে জানান, স্বজনপ্রীতির কারণে সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। এখানের নার্স ও টিকাদানে সংশ্লিষ্টরা খুবই বাজে ব্যবহার করেন। সূত্রমতে, নগরীতে ৪১ ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৬০০ করে টিকা দেয়ার কথা থাকলে, সরকারী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ আগস্ট একদিন টিকা দেয়া হবে জানানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪১ ওয়ার্ডে মোট ৯০০ করে ৩৬ হাজার ৯০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। তবে গত দুদিন যাবত প্রতি এলাকায় গণটিকাদান কার্যক্রমের যে প্রচার হয় সেখানে ৭ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে জানানো হয়, যা নিয়ে নগরবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়ছে জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় কাউন্সিলররা জানিয়েছেন হঠাৎ করে বুধবার রাতে গণটিকাদান কর্মসূচী পেছানোর সিদ্ধান্তটিতে আমরা বিব্রত। এমন সিদ্ধান্ত শোনার পর থেকে লোকজন ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভিড় করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, বারবার সিদ্ধান্ত পেছানোর কারণে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন লোকজন। টিকা কেন্দ্রে গিয়ে যদি করোনা সংক্রমিত হয় তাহলে তা কমিউনিটি পর্যায়ে পরিবারে ছড়িয়ে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। মানুষজন ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা পাবে ভেবে সেখানে ভিড় করছে নিবন্ধনের জন্য, আবার কার্যক্রম সীমিত শুনে ফের হাসপাতালের কেন্দ্র যাচ্ছে। এর ফলে কঠোর বিধিনিষেধ মানছে না। চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সারাদেশে গণটিকার কার্যক্রম ৭ আগস্ট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেদিন শুধু পরীক্ষামূলকভাবে গণটিকার কার্যক্রম শুরু হবে উপজেলার ২০০টি কেন্দ্রে, ১ লাখ ২০ হাজার জনকে টিকা দেয়া হবে। এর এক সপ্তাহ পর ১৪ আগস্ট পুরোদমে গণটিকার কার্যক্রম শুরু হতে পারে, তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে অধিদফতর। অপরদিকে স্বাভাবিকভাবে নগরীর হাসপাতালগুলোতে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
×