ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল থেকে গার্মেন্টস খোলা

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩১ জুলাই ২০২১

কাল থেকে গার্মেন্টস খোলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামীকাল রবিবার থেকে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী সব শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুক্রবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোঃ রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে একটি সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকরা প্রথম দিন কাজে যোগ দিতে না পারলেও চাকরি বহাল থাকবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে রফতানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখা হলো। এর আগে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত করে দ্রুত দেশের রফতানিখাতসহ সব উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার দাবি জানায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস এ্যাসোসিয়েশনের (বিইপিজেডআইএ)। ওই দিন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, করোনায় বিধিনিষেধের আওতায় সব শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রাণশক্তি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আগামীতে পণ্যসামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হবেন। পাশাপাশি রফতানি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে সময়মতো পরবর্তী রফতানি অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেয়া সম্ভব হবে না। এতে রফতানি অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকার। যা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। বিধিনিষেধ চলাকালে দেশের সব শিল্প- কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে ঈদের পর থেকেই কারখানা খোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিল্প-কারখানার মালিকরা। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গার্মেন্টসে স্বস্তি ॥ ১ আগস্ট থেকে সারাদেশের শিল্প কারখানা খোলার প্রজ্ঞাপনে স্বস্তি এসেছে পোশাক শিল্প সেক্টরে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। আমদানি ও রফতানির পণ্যজট সামাল দিতে এখন হিমশিম অবস্থা বন্দরের। রফতানিমুখী শিল্প বিশেষ করে পোশাক কারখানাগুলো খুলে গেলে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির পরিমাণ বাড়বে। এতে করে বন্দর ইয়ার্ড এবং আইসিডিগুলো চাপমুক্ত হবে। বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস এ্যাসোসিয়েশনের (বিইপিজেডআইএ) চেয়ারম্যান এম নাসিরউদ্দিন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এতে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতার সাময়িক যে দেয়াল সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে। তিনি রফতানি শিল্পের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ায় দেশের সকল ইপিজেড এবং এর বাইরে যেসব গার্মেন্টস শিল্প রয়েছে তাতে নতুন করে কাজ শুরু হবে এবং বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার ঠিকমত শিপমেন্ট করা যাবে বলে মত ব্যক্ত করেন। বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি বিবেচনা করে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সময়োপযোগী। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের ভাল চাহিদা রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধের কবলে থাকলে বাংলাদেশের অনেক অর্ডার অন্যদেশে শিফট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলাম আমরা। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে জরুরী সেক্টর বিবেচনায় রফতানি খাতগুলো চালু রয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশও এমন একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় পোশাক শিল্প খুব দ্রুতই তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। একইসঙ্গে তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যতদ্রুত সম্ভব পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, প্রাইমারী স্কুলে আমরা যেভাবে একসঙ্গে টিকা গ্রহণ করেছিলাম ঠিক সেইভাবেই পোশাক কারখানাগুলোতে টিকাকরণ করা যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার। বিজিএমইএ নেতারা বলেন, পোশাক শিল্পকে শুধুমাত্র একটি গ-িভুক্ত সেক্টর ভাবলে ভুল করা হবে। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বন্দর, কাস্টমস, পরিবহন, এক্সেসরিজসহ অনেকগুলো খাত। পোশাক শিল্প বন্ধ থাকলে এর সবই বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনের কারণে এ ক’দিনের বন্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাতেই প্রমাণ হয়েছে যে, রফতানিমুখী কারখানাগুলো খোলা রাখা খুবই যৌক্তিক। কেননা, আমদানি পণ্যের বেশিরভাগই কারখানাগুলোর কাঁচামাল। আবার রফতানির পণ্যগুলোও বিভিন্ন কল কারখানায় উৎপাদিত। পুরো সেক্টর বন্ধ রাখলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কারখানা চালু হওয়ায় উৎপাদন শুরুর পাশাপাশি করোনায় স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকাও সচল হবে বলে অভিমত রাখেন ট্রেডবডিগুলোর নেতারা। প্রথম দিন কাজে যোগদিতে না পারলেও চাকরি বহাল থাকবে ॥ করোনা প্রতিরোধে চলমান বিধিনিষেধের কারণে বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও তাদের গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। সব শ্রমিকের পক্ষে তাই কাজে যোগ দেয়া সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় কারখানার কাজ কিভাবে শুরু হবে আর যে শ্রমিক আসতে পারবেন না তাদের ক্ষেত্রে কী হবে- এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সংগঠন দুটি জানিয়েছে, কারখানা খোলার প্রথম দিনে কোন শ্রমিক কাজে যোগ নিতে না পারলেও চাকরি বহাল থাকবে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানিয়েছেন, আশপাশে বসবাসকারী শ্রমিকদের দিয়েই রবিবার রফতানিমুখী শিল্প-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালু করা হবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারবেন না তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে না। কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা কারখানার কাজে যোগ দেবেন।
×