ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল বদলে যাবে

এগিয়ে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ॥ অগ্রগতি ৫০ শতাংশ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২৪ জুন ২০২১

এগিয়ে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ॥ অগ্রগতি ৫০ শতাংশ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সিটি আউটার রিং রোডের পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দিনরাত চলছে এ প্রকল্পের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে বদলে যাবে নগরীর সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। নগর জীবনে আসবে গতি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকার এ কাজে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। কিন্তু এর টাইগারপাস প্রান্ত নিয়ে আপত্তি সিটি কর্পোরেশন এবং নগরবিদদের একটি অংশের। উড়াল সড়কের কারণে শহরের সবচেয়ে নান্দনিক এই অংশটি ঢাকা পড়ে যাবে, এমনই অভিমত তাদের। তবে ওই এলাকাটিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওতায় না আনলে সুফল পুরোপুরি মিলবে না বলে অভিমত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চউকের। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে চউক আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণ করেছে দৃষ্টিনন্দন সিটি আউটার রিং রোড। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কের ওপর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এ কাজ এগিয়ে আসছে উত্তরের দিকে, যা এসে থামবে লালখান বাজার এলাকায়। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার চট্টগ্রামের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থান হওয়ায় এ অংশটুকু উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন নগরবিদদের কেউ কেউ। সে অনুযায়ী পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল টাইগারপাসের দেওয়ানহাট ওভারব্রিজ প্রান্ত থেকে। কিন্তু সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা এসে মিলছে লালখান বাজার এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকেও লিখিত আপত্তি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অত্যন্ত নান্দনিক নক্সায় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হচ্ছে। এর জন্য কোন পাহাড় কাটতে হবে না। সৌন্দর্য্য নষ্টের প্রশ্নই ওঠে না, বরং এলাকাটি যেন আরও উদ্ভাসিত হয় সেভাবেই হবে এই উড়াল সড়ক। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে যদি লালখান বাজার পর্যন্ত না এনে টাইগারপাসের দেওয়ানহাট প্রান্তে থামিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখান থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হবে। এতে এক্সপ্রেসওয়ের শতভাগ সফল পাওয়া যাবে না। সে কারণেই চার লেনের মূল এক্সপ্রেসওয়ে থেকে র‌্যাম্প আকারে দুটি অংশ লালখান বাজারে নামবে, অপর দুই অংশ সরাসরি যুক্ত হবে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে। সাড়ে ৬ কিমি দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে মিলে গেলে ১৬ কিমি দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাবে সাড়ে ২২ কিমি। বিদ্যমান সড়কে যানজট কমবে এবং নগরবাসী এর সুফল পাবে। এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত করে এই উড়াল সড়ক প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন। আমরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমনভাবে কাজ করছি যাতে করে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার এলাকার সৌন্দর্য্য আরও ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, টাইগারপাস নিয়ে একটা আবেগ থাকতেই পারে, যেমনটি আমাদেরও আছে। কিন্তু পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বার্থে ওই স্থানটিকেও উড়াল সড়কের আওতায় আনতেই হচ্ছে। আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা বলছেন পাহাড় দেখা যাবে না। আমরা পাহাড় উন্মুক্ত রেখে কাজ করব। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে পরিচালক জানান, করোনায় বাধাগ্রস্ত হলেও এখন দ্রæতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। ১৬ কিমি এক্সপ্রেসওয়ের মোট পিলার হবে ৩৮৯, যার মধ্যে ২৩০টির কাজ শেষ হয়ে আগ্রাবাদ চৌমুহনী পর্যন্ত চলে এসেছে। পতেঙ্গা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত এলাকায় গার্ডার এবং স্থাব বসে গেছে। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত এলাকার এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের যে আপত্তি ছিল সেটিরও সুরাহা হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ৬ একর জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে। বারিক বিল্ডিং থেকে নিমতলা পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যমান সড়কের বাইরে দিয়ে উড়াল সড়ক হওয়ার কথা ছিল বন্দরের নিরাপত্তা বিবেচনায়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো পুরনো সড়কের ওপর দিয়েই যাবে এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে সড়কের পাশে মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট জায়গা নিতে হবে। এতে করে ভবন ও স্থাপনা ভাঙতে হবে কম। নক্সা পরিবর্তনে ব্যয় কিছু বাড়লেও তা এখনও পুরোপুরি নিরূপিত হয়নি বলে তিনি জানান। চউক সূত্র জানায়, যে গতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে ২০২৩ সালের মধ্যেই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
×