ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বিটকয়েন বিক্রির টাকায় পর্নোগ্রাফির বাণিজ্য

প্রকাশিত: ২২:১২, ২১ জুন ২০২১

বিটকয়েন বিক্রির টাকায় পর্নোগ্রাফির বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে অবৈধ বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। হামিম ২০১৩ সালে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা লাভ করে। এরপর সে নিজেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ৫০ জনকে বিটকয়েন জালিয়াতির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এই চক্রের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। প্রতি মাসে তারা দেড় কোটি টাকা বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করত। তারা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে। এরপর বেশি অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেয়। রবিবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে লিগাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিস্তারিত জানান। বিটকয়েন চক্রের অন্যতম হোতা হামিম প্রিন্স খান (৩২)। এ চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- রাহুল সরকার (২১), সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস (২৮) ও মোঃ সোহেল খান (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র‌্যাবের গোয়েন্দা দল জানতে পারে, একটি চক্র অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। চক্রটি ডার্ক সাইট থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কেনাবেচার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। গ্রেফতাররা ভার্চুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে এ্যাকাউন্ট করে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশী বেশকিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার ও ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করে। তারা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে। এরপর পর্নোগ্রাফিগুলো বেশি অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেয়। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচার চালায়। এই প্রচারের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করত। আগ্রহীদের তারা অর্থের বিনিময়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। এছাড়া তারা কিছু আগ্রহীদের প্রলুব্ধ করে। তারা তাদের কাছ থেকে নেয়া কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তারা প্রতি মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন করে। যেভাবে অবৈধভাবে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং করে বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয়ের জগতে প্রবেশ চক্রের অন্যতম হোতা গ্রেফতার হামিম প্রিন্স খান ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজীতে বিএ (সম্মান) পাস করেন। এরপর ২০১৩ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। পরবর্তীতে তিনি ক্রিপ্টো কারেন্সির ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রায় ৫০-এর অধিক বিটকয়েন লেনদেন প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিটকয়েন ছাড়াও সে লিটকয়েন, ডগকয়েন, ইথারিয়াম, ব্রাস্ট, ন্যানো ইত্যাদি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। সে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিটকয়েন ক্রয় করে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ভার্চুয়াল জগতে তার ১৫-১৬টি ওয়ালেট রয়েছে। গ্রেফতার রাহুল সরকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হামিমের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে তিনি বিটকযেন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হয়। তার বিনান্স ওয়ালেটসহ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে। গ্রেফতার সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিদপুরের স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকেই হামিম তাকে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিটকয়েন লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি হামিমের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নামে বিটকয়েনে ‘ক্লোনিক্স ওয়ালেট’ ও ‘বেটলেক্স ওয়ালেট’ নামে এ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ লেনদেন করে আসছিল। গ্রেফতার সোহেল খান মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করত। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকাদার বিজ্ঞাপনের লোভে পড়ে হামিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বিটকয়েনে নিজের নামে ওয়ালেট খোলে এই অবৈধ লেনদেন করে আসছিল। অনলাইনে তার বিনান্স ওয়ালেটসহ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।
×