ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের সঙ্গে পিটিএ কার্যকর হচ্ছে নতুন বছরে

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২০ জুন ২০২১

ভুটানের সঙ্গে পিটিএ কার্যকর হচ্ছে নতুন বছরে

এম শাহজাহান ॥ আসন্ন নতুন অর্থবছর থেকে ভুটানের সঙ্গে করা অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শুরুতে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ করা হলেও দীর্ঘ সাত মাসে এটি কার্যকর হতে পারেনি। নতুন করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি খারাপ হওয়া, ভুটানের পার্লামেন্টে আলোচনার দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে চুক্তি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রæত পিটিএ কার্যকর চেয়ে সম্প্রতি ভুটানকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়। চুক্তিটি কার্যকরে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভুটান দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স¤প্রসারণে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে। ভুটানের সঙ্গে করা পিটিএ দ্রæত কার্যকর হলে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে। অন্যদিকে ভুটান থেকেও আমদানি বাড়বে। লাভবান হবে উভয় দেশ। জানা গেছে, ভুটান সরকারের ধীরে চলো নীতির কারণে দীর্ঘ সময়েও চুক্তিটি কার্যকর হতে পারেনি। বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পৃথক সমীক্ষায় দেখিয়েছে; বাংলাদেশ-ভুটান পিটিএ কার্যকর হলে বাণিজ্যের দিক দিয়ে উভয় দেশ লাভবান হবে। বর্তমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ভুটানের অনুকূলে। পিটিএ কার্যকর হলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ পিটিএ অনুযায়ী ১০০ রকমের পণ্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারে। আর এক্ষেত্রে ভুটানকে ৩৪ টি পণ্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ করা হয়। এ কারণে পরীক্ষামূলক হলেও বাংলাদেশ এটি দ্রæত কার্যকর দেখতে চায়। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই অর্থে তেমন কোন পণ্য বাণিজ্য না হলেও এ মডেল অনুসরণ করে পিটিএ এবং এফটিএ হবে আরও ১১ দেশের সঙ্গে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ আরও বড় দেশ রয়েছে, যাদের সঙ্গে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, ভুটানের সঙ্গে পিটিএ যত দ্রæত কার্যকর করা যায় ততই দেশের জন্য ভাল। এজন্য এটি কার্যকরে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভুটান থেকে আমদানি করেছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আর দেশটিতে রফতানি হয়েছে মাত্র ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য। এ কারণে দেশটির সঙ্গে দ্রæত প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এ্যাগ্রিমেন্টের (পিটিএ) আওতায় বাণিজ্য সুবিধা কার্যকর করতে চায় সরকার। দ্রæত সময়ের মধ্যে পিটিএ কার্যকরে ভুটানের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠক করা হবে। এর আগে বাংলাদেশ ভুটান সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ দ্রæত পিটিএ কার্যকর করতে চাইলেও ভুটানের অনেক ঢিলেমি আছে। আজ করি, কাল করি করে করে দেশটি সাত মাস পার করে দিয়েছে। এখনও ভুটান তাদের পার্লামেন্ট আলোচনা শেষ করতে পারেনি। এ কারণে দ্রæত পিটিএ কার্যকরে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যাশা, পিটিএর সুবিধা পাওয়া শুরুও হলে আগামীতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে, কমবে ঘাটতি। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সঙ্গে সাক্ষাত করে দ্রæত পিটিএ কার্যকর করার আশ্বাস দিলেও এখনও দেশটির দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সহজ ও দ্রæত করতে বাংলাদেশের বুড়িমারি, বাংলাবান্ধা, সোনাহাট এবং আখাউড়া স্থল বন্দরের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পিটিএর আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া ১০০ টি পণ্য \ বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে রয়েছে-তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী জুস, কনডেন্সড মিল্ক, বিস্কিট, মিনারেল ওয়াটার, পাউরুটি; কৃষিজাতপণ্য আলু, প্রসাধনী সামগ্রী; টয়লেট্রিজ পণ্য সাবান ও শ্যাম্পু, শুঁটকিমাছ, সিমেন্ট, চা, ফ্লাইউড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য। এছাড়া জ্যাকেট, বেøজার, ট্রাউজার, আন্ডারওয়্যার, বাচ্চাদের পোশাক, চকোলেট, বিভিন্ন ধরনের পাস্টিকপণ্য ও গুডস, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, পাট ও পাটজাতপণ্য, এ্যালুমিনিয়াম ডোর, কাঠের তৈরিপণ্য, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফুটওয়্যার, ক্যাবলস, ঘড়ি, বেল্ট, মেটাল ও প্লাস্টিক ফার্নিচার ইত্যাদি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। আর ভুটান থেকে বোল্ডার, জিপসাম, ডোলোমাইট, ফল ও জুস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন জ্যাম ও জেলি, মসলা, ফার্নিচারসহ অন্যান্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) সদস্য। ডবিøউটিও বিধিবিধান মেনে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) আলোচনা বা নেগোসিয়েশন অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২-২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখ ভুটানের সঙ্গে থিম্পুতে পিটিএ নেগোসিয়েশন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে করা প্রথম পিটিএ মডেল অনুসরণ করা হবে \ বিশ্বের আরও ১১টি দেশের সঙ্গে পিটিএ করার ক্ষেত্রে ভুটানের পিটিএ মডেল হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হবে। সর্বপ্রথম ২০০০ সালের শুরুতে এ ধরনের চুক্তি করা যায় কিনা তা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কারণ এ ধরনের চুক্তি করতে গেলে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাণিজ্য সংগঠনের এ্যাপেক্স বডি এফবিসিসিআইয়ের মতামত গ্রহণ করতে হয়। এরপর চুক্তিটির খসড়া অনুমোদনের আগে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং (যাচাই-বাছাই) সম্পন্ন হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুমোদন করে। সবকিছু ঠিক থাকলে মহান সংসদে সাংসদরা চুক্তিটি পাস করান। এরপর চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য স্বাক্ষর করেন দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে ১১টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ভুটানের পর আগামী বছর থেকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ চুক্তি করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য না হলেও চুক্তিটি অন্যান্য দেশের সঙ্গে এফটিএ-পিটিএ চুক্তির ‘মডেল’ হিসেবে সবচেয়ে বেশি কাজ করবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশ এখন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চায়। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
×