নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৭ মে ॥ মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। শহরতলীর দুর্গাপুর এলাকায় এ ঘটনার পর পুলিশের কাছে থাকা লাশের ছবি দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনরা। ৩ মেয়ে সন্তানের জনক নিহত মনির জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বলরামপুর এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। এ ঘটনায় রবিবার গভীর রাতে নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন একই উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামের তৌহিদ, মনির, এরশাদ, আজাদ, রাশেদ মিয়া, জাহিদ, আমির আলী ও আরিফ হোসেন। এদিকে পৃথক ঘটনায় জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সাহেবাবাদ ইউনিয়ন ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার খলিলুর রহমানকে (খলিল খান) কুপিয়ে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা ।
মামলায় অভিযোগ করা করা হয়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মনির তার একটি নষ্ট মোবাইল মেরামত করার জন্য দুর্গাপুর এলাকার তৌহিদের নিকট দেন। কিন্তু মোবাইল সেটটি ফেরত না পেয়ে ১১ মে সন্ধ্যায় মনির মোবাইল সেটের জন্য দোকানে গেলে তৌহিদ তাকে মারধর করে। পরে মনিরকে মোবাইল চোরের অপবাদ দিয়ে তৌহিদের অন্য সহযোগী এরশাদ, আজাদ,রাশেদ মিয়া ও জাহিদসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন তাকে মারধর করে। ১৩ মে সকালে পুনরায় এ ব্যক্তিরা তাকে বাসার অদূরে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় পেয়ে মারধর করে রাস্তা থেকে উঠিয়ে একই উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামে তৌহিদের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় জরুরী বিভাগের রেজিস্টারে মনিরের নাম ও পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে লেখা হয়। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পর দিন (১৪ মে) হাসপাতাল থেকে কোতোয়ালি মডেল থানায় খবর দেয়ার পর পুলিশ ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য মরদেহ আঞ্জুমানে হস্তান্তর করে। ১৫ মে নগরীর টিক্কাচর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে মনিরের দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত মনিরের স্ত্রী ও মামলার বাদী সালমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, মামলায় অভিযুক্ত এরশাদ ও তৌহিদ তাদের অপর সহযোগীদের নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তারাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পালিয়ে যায়। ঘটনার শুরুতে এলাকার লোকজন প্রভাবশালী এসব আসামিদের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও মনিরের মৃত্যুর পর এখন তারা মনিরের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত সকল আসামির গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে ওই ব্যক্তির মরদেহ দাফন করার আগে বিধি মোতাবেক ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এখন তার পরিবারের লোকজন এসে ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছে। নিহতের স্ত্রী ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে খুন ॥ এদিকে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ বাজারে দোকানের ভাড়া ও বিদ্যুত বিল আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ ভাড়াটিয়া গত ৬ মে রাতে ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে (খলিল খান) কুপিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১৬ মে) রাতে সে মারা যায়। সোমবার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই জলিল খান বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে।
৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মোবাইল চুরির অপবাদে পিটিয়ে হত্যা, দাফন বেওয়ারিশ হিসেবে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: