ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ মে থেকে শিক্ষা নেয়নি

সুযোগ বুঝে ফণা তোলে হেফাজত

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৫ মে ২০২১

সুযোগ বুঝে ফণা তোলে হেফাজত

মোরসালিন মিজান ॥ সুযোগ বুঝে ফণা তোলে হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনায় উগ্রবাদী এই সংগঠন কোন শিক্ষা নেয়নি। বরং সরকারের নমনীয়তার সুযোগ কড়ায়গ-ায় কাজে লাগিয়ে আরও বড় দানবে পরিণত হয়েছে। মতিঝিলে ভয়াল তা-বের ৮ বছর পর সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি স্থানে একই স্টাইলে হামলা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। জঙ্গীবাদী হামলা সম্পদ ধ্বংসের পুরনো ছবিগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সংগঠনের ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না’ চরিত্রটিকে স্পষ্ট করেছে। ব্যাপক সমালোচিত এই হেফাজতে ইসলাম ২০১০সালে গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে হেফাজত ধর্মের কথা বললেও সংগঠনের উগ্রবাদ জঙ্গী কানেকশন ও রাজনৈতিক অভিলাষের নানা তথ্য বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রীক সংগঠনটিকে বরাবরই দেখা গেছে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবিরোধী অবস্থানে। সরকারের নারীনীতির বিরোধিতা করে প্রথমবারের মতো চরিত্রের জানান দেয় তারা। তবে হেফাজতে ইসলামকে পরিপূর্ণ দানবমূর্তিতে দেখা যায় ২০১৩ সালে। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণে স্পষ্ট হয়েছে, ওই বছর একাত্তরের যোদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজোয়ার সৃষ্টি হলে এর বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের বি টিম হিসেবে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ৫ মে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে তারা। সরকার ও প্রশাসন ‘হুজুরদের’ কথায় আস্থা রাখলেও সময় ও সুযোগ বোঝে খোলস থেকে বের হয়ে আসে হেফাজত। দৈত্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বর ও বায়তুল মোকররম মসজিদকে কেন্দ্রে রেখে পল্টন, বিজয়নগর, গুলিস্তান, নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। পরদিন ৬ মে ওইসব এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হেফাজতের তা-বে ক্ষতবিক্ষত ভালবাসার শহর ঢাকা। মৌলবাদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব কিছু। উগ্রবাদীরা যা সামনে পেয়েছে তাই পুড়িয়ে দিয়েছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, এইমাত্র কোন যুদ্ধ শেষ হয়েছে! যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়ার ছবির সঙ্গেই শুধু মেলানো যাচ্ছিল ছবিটাকে। পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে অবস্থিত বহু ভবনে সেদিন আগুন দেয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) বিশাল ভবন থেকে আগুনে পোড়া গন্ধ আসছিল তখনও। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচতলায় অবস্থিত জনতা ব্যাংকের একটি শাখা আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেয়া হয়েছে। শাখার ভেতর, বাইর পুড়ে একদম ছাই। আগুন দেয়া হয়েছে পাশেই থাকা আইডিয়াল প্রোডাক্টসের শোরুমেও। ভবনের ভেতরের অংশে পা বাড়াতেই গা শিউরে ওঠে। মাঝখানে বড় খোলা জায়গায় পাশাপাশি রাখা ২৪টি গাড়ি। সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। বাকি গাড়িগুলোতে ভাংচুর চালানো হয়। ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী ভবনের গার্ড দেলওয়ার সেদিন জনকণ্ঠকে বলেন, হুজুররা ভবনের দুই গেট দিয়ে স্রোতের মতো প্রবেশ করে আমাদের সবাইকে সরে যেতে বলে। আমরা সরে যাওয়ার আগেই আগুন দেয়া শুরু করে তারা। আশপাশের এলাকা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি। এরা সব অফিস চেনে। এ জন্যই সরকারী অফিসটি বেছে নিয়েছিল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, এমন কেয়ামত তো আগে দেখিনি। চোখের পলকে সব আগুনে পুড়ে গেল। কিছু আমরা করতে পারিনি। জানা যায়, ভবনে আরও ছিল আয়কর বিভাগ, প্রধান হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা (জনপ্রশাসন), বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড ও যুবক কমিশনের কার্যালয়। সবকটিই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শেষে বিএইচবিএফসি কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, ওই হামলার ঘটনায় শুধু তাদেরই ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই সমাবেশ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনে আগুন দেয়া হয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন অফিসে, দোকানে। ভবনের দোতলায় অবস্থিত উত্তরা ব্যাংকের একটি শাখা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পল্টনের র‌্যাংগস ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালায় হেফাজত কর্মীরা। আগুন দেয়া হয় খাবারের দোকান কেএফসির শোরুমে। বাইতুল মোকাররম এলাকার জুয়েলারি মার্কেটটি বীভৎস হামলার দগদগে ক্ষত নিয়ে কোন রকমে দাঁড়িয়েছিল। গোটা মার্কেটেই আগুন দিয়েছিল উগ্রবাদীরা। প্রায় সব দোকান পুড়ে গিয়েছিল। মার্কেটের সামনে ছিল স্টেনলেজ স্টীলের দৃষ্টিনন্দন কাঠামো। অত্যন্ত শক্ত সেই কাঠামো আগুনের তাপে গলে পড়ে গিয়েছিল। পরে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গানপাউডারের সাহায্যে এ আগুন লাগায় হেফাজতীরা। তা-ব থেকে রক্ষা পায়নি ফুটপাথের দোকানিরা। পল্টনের ফুটপাথে সব সময়ের মতোই ছিল পুরনো বইয়ের দোকান। অস্থায়ী-স্থায়ী মিলিয়ে ৩৮টি দোকান ছিল সেখানে। সে সময় বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি ছাড়া বাকি সব দোকান পুড়িয়ে দেয় হেফাজতের কর্মীরা। হাজার হাজার বই তখনও ছাই হয়ে ফুটপাথে পড়েছিল। ধর্মের নামে যে ধ্বংসযজ্ঞ তা থেকে সেদিন বাদ যায়নি এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। মসজিদটির চারপাশেই চালানো হয় তা-ব। মসজিদের বাইরের দেয়ালে বহুদিন ছিল আগুনে পোড়া দাগ। দক্ষিণ গেটের দোকানিরা সেদিন কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, কোরান শরীফও পুড়িয়ে দিয়েছে ‘হেফাজতের ইবলিশরা।’ টুপি, আতর, সুরমা কিংবা মেসওয়াক কোনটিই তারা আগুন থেকে রক্ষা করতে পারেননি। ধর্মের নামে এত বড় অধর্ম গোটা দেশের মানুষই প্রথমবারের মতো দেখে। রাস্তায়ও ছিল তা-বের চিহ্ন। পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তাটিকে বারবার দেখেও অচেনা মনে হচ্ছিল। মানুষরূপী দৈত্যরা রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডার উপড়ে পাশে ফেলে রেখেছিল। বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচের অংশে সিমেন্টের শক্ত ঢালাই থাকা সত্ত্বেও সেগুলো টেনে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল তারা। হেফাজতী তা-ব থেকে রক্ষা পায়নি শহরে বহু কষ্টে বড় হওয়া বৃক্ষরাজিও। পল্টনের রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সব গাছ নির্মমভাবে কেটে ফেলা হয়েছিল। তরতাজা গাছের উপড়ে ফেলা গুঁড়ি পড়েছিল রাস্তার এখানে ওখানে। তখনকার ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী অনুন্ধান থেকে স্পষ্ট হয়, এ ধ্বংসযজ্ঞে সহায়তা করেছিল সম আদর্শের রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত। এক জোট হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল তারা। তবে শেষতক এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলী অভিযানে নিয়ন্ত্রণে আসে সবকিছু। কানে ধরে ওঠবস করে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের। তবে ওই ঘটনা থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি হেফাজতে ইসলাম। জানা যায়, ২০১৩ সালের তা-বের ঘটনায় বেশ কিছু মামলা হয়। সরাসরি জড়িতদের, উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি ওঠে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, দাবি সত্ত্বেও সরকার এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একাধিক সূত্র এখন বলছে, সে সময় অপরাধীদের সংশোধনের ওপর জোর দিয়েছিলেন তারা। কওমি মাদ্রাসাগুলোকে মূল ¯্রােতের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সংগঠনের আমির আহমদ শফির নেতৃত্বে হেফাজতও সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সখ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকার কওমি শিক্ষার বিরাট স্বীকৃতি দেয়। জানা যায়, সরকার সদয় থাকায় গত ৮ বছর আরও নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছিল, এর পর হেফাজতের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। চরিত্র বদলাবে উগ্রবাদী সংগঠনটি। বাস্তবে তা হয়নি। বেশ কিছুদিন গর্তে মাথা লুকিয়ে রাখলেও, ভেতরে ভেতরে জঙ্গীবাদের চর্চা করে গেছে তারা। বিভিন্ন ছুঁতোয় মুক্তিযুদ্ধ ও উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। সূত্র মতে, গত বছর আহমদ শফির মৃত্যু ও বাবুনগরীর চেয়ার দখলের মধ্য দিয়ে হেফাজতের চরম উগ্র অংশটি নেতৃত্বে আসে। এ অংশের নেতা মামুনুল হক দানব গোষ্ঠী উস্কে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে আসছিলেন। ওয়াজের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে উগ্রবাদীদের সংগঠিত করছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তার উস্কানিতেই কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়। সুনমাগঞ্জের শাল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা লুটপাটের ঘটনায়ও উস্কানি রয়েছে মামুনুলের। উগ্রবাদীরা আরও ঘটনা ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় মতিঝিলের অনুরূপ তা-ব চালায় হেফাজতে ইসলাম। ঘটনার ভিডিও ক্লিপ, সিসিটিভির ফুটেজ ও ছবি দেখে এ হামলার সঙ্গে মতিঝিলে হামলার হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করার নামে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা। সবচেয়ে বেশি তা-ব চালায় উগ্রবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাংচুর চালানো হয়। হরতাল-বিক্ষোভের নামে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে আসে। সরকারী গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই স্থাপনাসহ বহু স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, জেলা পরিষদ, পুলিশ সুপার কম্পাউন্ড, পৌরসভা, পৌর মিলনায়তন, শহর সমাজ সেবা প্রকল্প কার্যালয়, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, তার শ্বশুরবাড়ি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বাস ভবন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড সদর দফতরের গাড়ি গ্যারেজ, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, আশুগঞ্জ টোল প্লাজার পুলিশ ক্যাম্প সবই আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। রাগসঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান, শিল্পকলা একাডেমি কিংবা লাইব্রেরির মতো আলো ছড়ানো প্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ বলছে, মতিঝিলের হামলার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হামলার মিল রয়েছে। এবারও হেফাজতে ইসলামের উগ্রবাদীরা বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। গানপাউডার ব্যবহার করে সরকারী অফিসে আগুন দিয়েছে। হেফাজতের নিষ্ঠুরতা বর্তমানে আরও বেড়েছে স্বীকার করে নিয়ে পুলিশ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেকের বাসাবাড়িতে ঢুকে তা-ব চালিয়েছে হেফাজত। আগুন দিয়ে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের বাসা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে, হেফাজতের চরিত্র আবারও পরিষ্কার হওয়ায় টনক নড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের। ঘটনায় জড়িতদের অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ তালিকায় হেফাজতের শীর্ষ নেতা মামুনুল হকও রয়েছেন। পুলিশের সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে এই জঙ্গী নেতা স্বীকার করেছেন, ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের পতন ঘটিয়ে তালেবানী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল হেফাজত। এমনকি নতুন মন্ত্রিসভাও ঠিক করে ফেলেছিলেন তারা। এবারের পরিকল্পনাও ভিন্ন ছিল না। জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি একই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল হেফাজত। কিন্তু সে সুযোগ তারা পায়নি। আগেই তাদের রুখা গেছে। এ কারণে বড় বিপর্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে এ নিয়ে সরকার বা প্রশাসনের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজতীদের যখন মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে উৎখাত করা হয়েছিল তখন আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। পরে দেখলাম কওমি ভোট হারানোর ভয়ে সরকার সমঝোতায় চলে গেল। তাদের ভয়ঙ্কর অপরাধের বিচার হলো না। এ কারণেই হেফাজত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একই ঘটনা ঘটাতে পেরেছে। রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা। আর যেন দাঁড়াতে না পারে সে জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। একই প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি জঙ্গীবাদী সংগঠন। এদের সঙ্গে আফগান জঙ্গীদের, পাকিস্তানী জঙ্গীদের সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এ ধরনের সংগঠন নিজ থেকে শিক্ষা নেয় না। মতিঝিলের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমরা তাই একই চেহারা দেখেছি। এ ঘটনায় সরকারেরও শিক্ষা নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের তা-বের পর সব মামলা চলতে দিলে আজকের অবস্থা হতো না। ফণা তুলতে পারত না এরা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে ওঠা হেফাজত নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচার করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন এ ইস্যুতে সাহসের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া শাহরিয়ার কবীর।
×