ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে এএমআর আরও ধ্বংসাত্মক হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৪ মে ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে এএমআর আরও ধ্বংসাত্মক হবে : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারী থেকে এএমআর (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স) আরও ধ্বংসাত্মক হবে, যা সঠিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে খাদ্য সুরক্ষা এবং উন্নতির পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থানসহ প্রতিটি জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অন ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ’ এর দ্বিতীয় সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীটি আমাদের সময়ের সংজ্ঞায়িত জনস্বাস্থ্য সঙ্কট, যা ইতোমধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি লোকের জীবন নিয়েছে। তবে, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধের আকারে আসন্ন মহামারীটি বিশ্বস্বাস্থ্যের আরও বেশি ক্ষতি সাধন করবে। সভায় প্রচারিত পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করেন যে, এন্টি ড্রাগ প্রতিরোধ কেবল মানব, প্রাণী এবং উদ্ভিদের স্বাস্থ্যকেই বিপন্ন করবে না, পাশাপাশি খাদ্য সুরক্ষা এবং এসডিজি ( টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জনের অগ্রগতিরও হুমকিস্বরূপ। এন্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ভৌগলিক অবস্থান এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে যে কোন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এএমআর নিয়ন্ত্রণে ও সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ-আইপিসি ব্যবস্থার কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গ্লোবাল এ্যাকশন প্ল্যান -২০১৫ এবং এএমআর-তে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ঘোষণা -২০১৬ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি সম্ভব।’ এএমআর- তে গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের সহ-সভাপতি শেখ হাসিনা বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটোলি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে এএমআর এর হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এএমআরের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিশ্বব্যাপী কৌশলগুলো কার্যকর ও সহযোগিতামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে কার্যকর করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), এফএও (খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) এবং ওআইই (পশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্ব সংস্থা) এর চলমান প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক এ সভায় প্রধানমন্ত্রী আসন্ন এএমআর মহামারী পটভূমির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে এএমআর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস কার্যকর করার জন্য বিশ্বের সামনে সাতটি পরামর্শ রেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এএমআর প্রতিরোধ করতে এগুলো সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম প্রস্তাবে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কন্টেইনমেন্ট-এআরসি-র লক্ষ্য অর্জনের জন্য বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সমীক্ষা তদারকির পাশাপাশি প্রতিবেদনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রস্তাবে কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্ত এএমআর নজরদারি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালগুলোর যথাযথ ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ভাগ করে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্তরে নীতি ও নীতি বিকাশের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবনায় প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মালিকানা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সাশ্রয় মূল্যের এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধাগুলিতে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি তাঁর পঞ্চম প্রস্তাবনায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এএমআর-নির্দিষ্ট এবং এএমআর-সংবেদনশীল কর্মের জন্য পর্যাপ্ত এবং টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করার পক্ষে মতামত দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ষষ্ঠ ও সপ্তম প্রস্তাবনায় এএমআর প্রতিরোধে বিনিয়োগের জন্য সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কভারেজের ওপর জোর দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে তাঁর দেশে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরে বলেন, সরকার দেশীয় স্তরে কার্যকর এন্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছয় বছরের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা এবং এআরসি-তে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এর আওতায় অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, মানব স্বাস্থ্য, গবাদি পশু, মৎস্য ও কৃষি খাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার ২০১৪ সাল থেকে ডব্লিউএইচও গ্লাস প্ল্যাটফর্মে এএমআর ডেটা সরবরাহ করে আসছে এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিষয়ে গণমানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মিডিয়াকে জড়িত করার জন্য কাজ করছে। ডা.এফতেখাইরুলের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা প্রধানমন্ত্রীর ॥ করোনা পজিটিভ রোগীদের সেবা দিয়ে কোভিড-১৯ আকান্ত চিকিৎসক এফতেখাইরুল ইসলামের চিকিৎসায় ৫ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে অসুস্থ এই চিকিৎসকের স্ত্রী ডা. মাহমুদ আক্তারের কাছে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালিক ডা. মোহাম্মদ মবিুল হাসান (সুমন)। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এ চেক হস্তান্তর করা হয়। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম, উপাধ্যক্ষ ডা. মো. শাহাদাত হোসেন, পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান প্রমূখ। ৩৩তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা ডা.এফতেখাইরুল ইসলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে গত ৭ এপ্রিল থেকে ডা. এফতেখাইরুলও আক্রান্ত হন। ১২ এপ্রিল হতে ডা. এফতেখাইরুল ইসলাম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
×