ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নানা আয়োজনে খেলাঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপিত

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৪ মে ২০২১

নানা আয়োজনে খেলাঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশুদের মানসিক বিকাশে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাওয়া এক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। সংস্কৃতির আশ্রয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছড়িয়ে দিতেও রয়েছে সংগঠনটির বিশেষ ভূমিকা। সময়ের স্রোতধারায় ১৯৫২ সালের দোসরা মে শুরু করা শিশু-কিশোর সংগঠনটি পদার্পণ করল প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছরে। সেই সুবাদে রবিবার রাতে ‘এগিয়ে চলার ৬৯ বছর’ প্রতিপাদ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন করা হয়। করোনাকালে সরাসরি আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। সে আনন্দ আয়োজনে ছিল নৃত্য-গীত ও কবিতায় সজ্জিত বহুমাত্রিকম সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সঙ্গে ছিল শিশু পার্লামেন্ট নামের ভিন্নধর্মী আয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই খুদে শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘আমরা তো সৈনিক, শান্তির সৈনিক অক্ষয় উজ্জ্বল সূর্য’ শীর্ষক সঙ্গীত। এছাড়া শিশুরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনায় ‘এসো সেতু গড়ি, মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে সেতু গড়ি’ শিরোনামের গান। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সার। আলোচনায় খেলাঘরের শিশু সদস্য সেমন্তী ফেরদৌসী বলেন, গোটা বিশ্বে যুদ্ধে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয় এবং মারণাস্ত্র তৈরিতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা দিয়ে সব দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব। তাই আমরা শিশুরা স্লোগান তুলি, পারমাণবিক অস্ত্রগুলো সাগর জলে ডুবিয়ে ফেল। আলোচনায় অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, মহান মক্তিযুদ্ধের মূল স্তম্ভের একটি হল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যেই শিশুদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলছে খেলাঘর। বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য-কলার মাধ্যমে এই কর্মকা- চলছে। খেলাঘর একসময় দেশজুড়ে শক্তিশালী কিশোর-বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এতে সমাজে বিজ্ঞান-সংকৃতির বিকাশ ঘটে। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহ বেড়ে যায়। এছাড়া দেশে নিয়মিত সাহিত্য বাসর পরিচালনায় খেলাঘরের ভূমিকা অপরিসীম। সমাজে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক সাহিত্যিক শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাতেখড়ি এই খেলাঘরে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, উনসত্তরের গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে খেলাঘর দেশমাতৃকার প্রয়োজনে ভূমিকা রেখেছে খেলাঘর। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার জন্য আগামী দিনগুলোতেও কাজ করে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে খেলাঘর সংগঠকরা। সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী বলেন, রণেশ দাসগুপ্ত ভারতে স্বেচ্ছায় নির্বাসনের থাকা কালে খেলাঘরের সঙ্গে ভারতের শিশু-কিশোর সংগঠন কিশোরমেলা, সব পেয়েছির আসর, কিশোরবাহিনী সংগঠনগুলোর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন সব পেয়েছিল আসরের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী শ্রী অপূর্ব গাঙ্গুলি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সরকারী রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাবেক খেলাঘর সংগঠক প্রফেসর মোসারফ আলী, জহুরুল আলম ঝরা, তাহমীন সুলতানা স্বাতী, আব্দুল মতিন ভূইয়া, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা প্রমুখ। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর, আঞ্চলিক শাখা আসরগুলো স্থানীয়ভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সারা দেশ থেকে ১২টি জেলার শিশু-কিশোর ভাই-বোনরা গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করে। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের কথা শিশুরাই বলবে শীর্ষক শিশু পার্লামেন্টের আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয় খেলাঘরের পক্ষ থেকে। দেশের বিভিন্ন জেলার ৬০ জন শিশু-সাংসদ নিজ নিজ জেলার শিশুদের সমস্যাবলী তুলে ধরেন। আয়োজনে স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। ডেপুটি স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন শীল, এ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু ও অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ।
×