ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান মাসে দাঁত ও মুখের যত্ন

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৪ মে ২০২১

রমজান মাসে দাঁত ও মুখের যত্ন

সাধারণত : পবিত্র রমজান মাসে আমাদের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের একটি পরিবর্তন হয় এবং সেই সঙ্গে জীবন যাত্রারও একটি পরিবর্তন হয়। যেহেতু রমজান মাসে খাওয়া-দাওয়া আমরা শেষ করি সেহরির মাধ্যমে সুতরাং আমাদের দাঁত বাশ এর সময়টাও পরিবর্তন করে শেষ রাতে সেহরির পরে দাঁত ব্রাশ করে ঘুমাতে যেতে হবে। তেমনিভাবে ইফতারের পরেও একবার দাঁত ব্রাশ করে নেয়া ভাল, যেহেতু অনান্য সময় আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি তেমনি সারাদিন না খাওয়ার পর যখন ইফতার করি তখনও আমাদের ইফতার শেষে দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। একটি কথা মনে রাখা ভাল, যেহেতু আমরা বছরের অনান্য সময় সকালের খাবারের পর ও রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত অনেক কিছুই খাই তেমনিভাবে ইফতার পরেও সেহরির আগ পর্যন্ত আমরা অনেক কিছু খাই অতএব সময়টাকে ঠিক এইভাবেই আমাদের দেখতে হবে। ইফতার বা সেহরির সময় যখনই আমরা কিছু মিষ্টি খাবার যেমন জিলাপি, রসগোল্লা বা রসমালাই খাই তারপর যেন অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করে নিতে পারি, নতুবা মিষ্টির অংশ বিশেষ শরর্করা জাতীয় উপাদান দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে সুতারং ইফতারিতে/সেহরিতে মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। আর একটি বিষয়, রোজার সময় অভুক্ত থাকার কারনে মুখে অনেক সময় দুর্গন্ধ হয়, এর কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন- ১. পেটের সমস্যা থাকলে এসিডিটি বা গ্যাসস্ট্রিকের জন্য মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, এ ক্ষেত্রে একজন পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। ২. অনেক ক্ষেত্রে নাক/কান, গলায় নানা ধরনের প্রদাহের কারণেও এ সময় দুর্গন্ধ হতে পারে, এ ব্যাপারে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। ৩. আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের জিহ্বায় ওপর খাদ্যের প্রলেপ (অসংখ জীবাণুসহ) থাকে তাদের এই প্রদাহ থেকে ভলাটাইল সালফার কম্পাউন্ড তৈরি হয়, ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। অতএব দাঁত ব্রাশের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও একটি কাজ করতে হবে সেটি হলো প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশেরের আগে জিবছুলারের সাহায্যে জিহ্বা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ৪. আর একটি বিষয় হচ্ছে ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাবারের সঙ্গে অনেকেই পেঁয়াজ, রসুনও অধিক পরিমাণে গ্রহণ করে থাকেন তাদেরও খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সঙ্গে টাটকা ফলমূল সালাদ জাতীয় খাবারের অভ্যাস করতে হবে এবং পেঁয়াজ, রসুন খেলেও সঙ্গে সঙ্গে টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। রোজার সময়ে যেহেতু মুখ অনেকক্ষণ সময় ধরে খালি থাকে সেহেতু সেহরির পর দাঁত ব্রাশের আগে দুটো বিষয় অবশ্যই করণীয়- ১. রাতে সেহরির পর কুলিকুচি করে নিয়ে ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্যে প্রতিটি দাঁতের মধ্যবর্তী অংশ থেকে সূক্ষ্ম খাদ্যকণা বের করে আনা প্রয়োজন। ২. দ্বিতীয়ত : ক্লোরহেক্সিডিন জাতীয় মাউথওয়াস ব্যবহার করে (নিয়ম: ২ চামচ ৩০ সেকেন্ড সময় মুখের ভেতর রেখে ফেলে দেয়া) কুলিকুচি করা। ৩. তৃতীয়ত : একটি জিহ্বাদুলা বা ঞড়হমঁব ঈষবধহবৎ দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করা। ৪. চতুর্থ এবং শেষ কাজটি হলো ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে অতন্ত ৩/৪ মিনিট সময় দাঁত ব্রাশের সাহায্যে সকল পাটির দাঁতকে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলা। রোজার সময় অনেকেরই দাঁত ব্রাশের সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন- ১. এই সময় দাঁত ব্রাশের নিয়মাবর্তিতা ঠিকমতো মানা হয় না ফলে খাবার জমে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অতএব রমজান মাসে ইফতারের পরে ও সেহরির পরে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। ২. ডিটামিন স্বল্পতার কারণেও (বিশেষত: ভিটিমিন সি) মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে (যা রক্ত পরীক্ষায় দেখে নেয়া সম্ভব) সুতারং রোজার সময় ইফতারিতে প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- লেবুর সরবত, জাম্বুরা, কমলালেবু, কামরাঙ্গা, আমড়া, মাল্টা, আমলকি, আনারস, সেই সঙ্গে সালাদ যেমন- গাজর, শশা, টমেটো, লেটুস পাতা ইত্যাদির সঙ্গে সালাদ ড্রেসিং হিসেবে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া রোগ প্রতিরোধক। ৩. মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার আরও কারণ থাকতে পারে যেমন- শারীরিক অন্যান্য সমস্যা, সেগুলো রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাড়িতে ও দাঁতে ডেন্টাল প্লাক জমে থাকার কারণে মাড়িতে প্রদাহ হয় (পেরিওডন্টাল ডিজিজ) সেসব ক্ষেত্রে রোজার আগে অথবা পরে একজন ডেন্টিস্টকে দিয়ে ডেন্টাল স্কেলিং করা জরুরী। অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী সাম্মানিক সিনিয়র কনসালটেন্ট ও অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল ১৫/এ, গ্রীন স্কয়ার, গ্রীন রোড ঢাকা- ১২০৫ ফোন : ০১৮১৯২১২৬৭৮
×