ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেরিন একাডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে ভাষণ

অনেক উন্নত দেশের আগে টিকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অনেক উন্নত দেশের আগে টিকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মেরিন গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ক্যাডেটরা আজ নতুন জীবনে পদার্পণ করবেন, সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’ শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মেরিন একডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্রাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই তার সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে বলেই এবং দীর্ঘদিন সরকারে থাকার সুবাদে প্রতিটা ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের সুযোগ তারা পেয়েছেন। করোনাভাইরাসকালে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণায় তার সরকারের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার উল্লেখ করে বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে সমগ্রবিশ্ব অর্থনীতির চাকা যেখানে স্থবির হয়ে গেছে সেখানেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আমরা সচল রাখতে সমর্থ হয়েছি এবং অনেক উন্নত দেশের পূর্বেই দেশের জনগণের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা করতে সমর্থ হয়েছি। তিনি টিকা দেয়া হয়ে গেলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলকের পাশাপাশি হাত পরিষ্কার করা এবং সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়গুলো মেনে চলার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০৪১ এই ২০ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অচিরেই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ। আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ এক দেশ। প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘সমুদ্রচারণ বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং, খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বটা পালন করার মতো প্রশিক্ষণগ্রহণ করে তোমরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবে।’ তিনি বলেন, জাতির পিতার হাতেগড়া এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মুমূর্ষু আবস্থায় তার সরকার পেয়েছিল। কাজেই তা উন্নত করবার জন্য ব্যাপক কর্মসূচীও তার সরকার বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি’-সরকারী ৫টি ও বেসরকারী ৬টিসহ সমুদ্র-বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমরা আরও চারটি মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি। যা এ বছরেই চালু হচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার জাহাজ চলাচলে উচ্চতর শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আওতায় তোমাদের বিদ্যমান তিন বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সাইন্স পাস ডিগ্রী কোর্সকে চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রবর্তন করা হয়েছে ‘মাস্টার অব মেরিটাইম সায়েন্স’ ডিগ্রী কোর্স। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সর্বোচ্চ শিক্ষাটা গ্রহণ করা দরকার, সেভাবেই প্রশিক্ষিতও হবে হবে। তাই সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’ বিগত ১০ বছরে এই একাডেমির শিক্ষাদান ট্র্যাডিশনাল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতিসহ অর্জিত হয়েছে নানাবিধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বলেন, একাডেমির নটিক্যাল প্রশিক্ষণকে উন্নততর করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে একাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে ‘নেভিগেশন সিমুলেটর’। পাশাপাশি এ বছরই উন্নততর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণের স্বার্থে চলমান রয়েছে ‘ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিমুলেটর’ স্থাপনের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এই একাডেমিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দিতে যাচ্ছি যাতে আমাদের ক্যাডেটরা দেশে এবং বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। অনুষ্ঠান থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহউদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মাঝে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন পদক প্রদান করেন। চীফ ক্যাডেট ক্যাপ্টেন আবির মোহাম্মদ সালমান নূর সার্বিক বিবেচনায় সফল চৌকস ক্যাডেট হিসেবে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক লাভ করেন। অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ড. সাজ্জাদ হুসেইন। এবারের ৫৫ ব্যাচে ১৯২ জনসহ এই মেরিন একাডেমি থেকে এ পর্যন্ত পাসিং আউট ক্যাডেটের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মেরিন একাডেমির লেকে দু’টি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বন্টকের (১২০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) নবায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখার দিক থেকে আমরা খুব বড় না হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের জন্য বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং আর্থসামাজিক উন্নতি করা, যে চেতনা নিয়ে যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, একাডেমির প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট দেশে ও বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছরে আয় করে আনছে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান করোনাকালেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য মেরিটাইম এ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সির স্বীকৃতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন সলেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘ওয়ারসাস স্কুল অব মেরিটাইম সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফিলিপিন্সের মেরিটাইম একাডেমি অব এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক’-এর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাডেমির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি মেরিন একাডেমির উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একাডেমির পতেঙ্গাপ্রান্তে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ নির্মাণ, দু’টি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বন্টকের নবায়ন। শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র সাড়ে ৩ বছরে একটা দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সমর্থ হন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা না হলে আর তিনি যদি সময় পেতেন তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে বহু আগেই মাথা উঁচু করে চলতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের ১৫ আগস্টের কালরাত সেই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়।
×